শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:২০ রাত
আপডেট : ২৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:২০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বৃক্ষ প্রেমিক ওয়াহিদ এখন ঝিনাইদহে!

সাজ্জাদ আহমেদ,ঝিনাইদহ ঃ বৃক্ষ প্রেমিক ওয়াহিদ এখন ঝিনাইদহে। বৃক্ষ প্রেমিকের পরিচয়পত্র গলায় ঝুলানো। বাই সাইকেলের সামনে একটি সচেতনামূলক প্রচারপত্র। তাতে লেখা আছে “গাছ বাঁচলে আমরা সবাই বাঁচবো”।

যশোরের কতোয়ালী থানার সাড়াপোল গ্রামে ১৯৬৭ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে দুপুর বেলা তার জন্ম। গাছের পেরেক ওঠানো এবং পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করাই তার কাজ। দুই ছেলে এক মেয়ে এবং স্ত্রীকে রেখে নিজ পরিবারের মায়া ছিন্ন করে জীবন্ত গাছকে রক্ষা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যে মহান দায়িত্বে নেমে পড়ে পেশায় রাজমিস্ত্রি এ সাদা মনের মানুষটি। বসত বাড়িতে ১০ শতক জমি ছাড়া তার আর কোন সম্বল নাই এবং পড়া লেখার গোন্ডি দুই এক ক্লাস।
একটি মরিচাপড়া পুরাতন বাই সাইকেল, একটি কাঁথা ও একটি বালিশ, একটি মগ, দুইটি লোহার রড যার সামনের দিকটা কিছুটা চিরা। রড দুইটা সে পেরেক ওঠানোর কাজে ব্যবহার করে। ওঠানো পেরেক রাখার জন্য একটি বস্তা। বিস্কুট রাখার একটি কৌটা।গত ০৪/০৭/১৮ই তারিখ যশোর টাউন হল থেকে মাত্র দুইশত টাকা সাথে নিয়ে সে তার অভিযান শুরু করে। এক এক উপজেলায় দুই/ তিন দিন করে থাকে এবং গাছের পেরেকগুলি ওঠাতে থাকে। সে কারুর প্রচারপত্র বা বিজ্ঞাপণ ওঠায় না। যেখানে শুধু পেরেক থাকে সেই পেরেকগুলো ওঠিয়ে ফেলে।

তারপর সে ডিসি/ এসপি/ টিএনও/ওসি এর কাছে এ ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি করে স্বারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে অন্য জেলাতে চলে যায়। সমাজের বিবেকহীনদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তার এ অভিনব প্রতিবাদ। ইতোমধ্যে সে যশোরের সবগুলো উপজেলা ও পৌরসভায় তার প্রতিবাদ কার্য সমাপ্ত করেছে। এখন সে ঝিনাইদহে অবস্থান করছে। কাজ করতে করতে যেখানে রাত হয় সেখানেই সে রাত কাটায়। সে সাধারনত বাজারের নৈশ প্রহরীদের সাথে দোকানের পাশে রাত কাটায়।
বিস্কুট, পাউরুটি ও কলা খেয়ে সে তার দিনপাত করে। যে যা দেয় তাই খেয়েই তার দিন যায়। তিন চার দিন পরে মাঝে মধ্যে তার সাথে ভাতের দেখা মিলে তাই তার প্রত্যেকদিন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার প্রয়োজন হয় না। গত ঈদের দিন সে কোর্টচাঁদপুর ছিলো। সেখানে কোন ভাত বা মাংসের কোন ব্যবস্থা হয়নি। ঝিনাইদহে আসার পর পিবিআই কর্মকর্তা মোঃ তহিদুল ইসলাম তার জন্য একদিন গোশ রুটির ব্যবস্থা করেছিলো। গাছ প্রেমিক ওয়াহিদ সরদার’র এর অভিনব পদ্ধতিতে প্রতিবাদ। সে প্রশাসনসহ দেশের সরকারকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায় মানুষ কিভাবে গাছের ক্ষতি করছে আর আমরা কিভাবে বিবেকহীনদের মত চুপ করে তা দেখছি। মানুষ ও গাছ উভয়ই জীব এবং উভয়েরই জীবন আছে কিন্তু মানুষের বিবেক আছে আর গাছের বিবেক নাই। মানুষের উপকারে আসার জন্যই গাছের জন্ম।

গাছ মানুষের উপকার করে। মানুষ গাছের উপকার করে না। তবুও মানুষ গাছের ক্ষতি করেই চলছে। গাছের ক্ষতি করতে গিয়ে মনের অজান্তে মানুষ নিজেরা নিজেদেরকেই ক্ষতি করে ফেলছে। কেউ এ ব্যপারে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করছে না। জীবন্ত গাছ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার মধ্যে পেরেক ঠুকে অন্যতম। বিভিন্ন প্রচার প্রচারনার জন্য বিশেষ করে শহর অঞ্চলে গাছের সাথে বিজ্ঞাপণ বিল বোর্ড পেরেক দিয়ে লাগানো হয়। একটা সময় পর বিজ্ঞাপণ বিল বোর্ড নষ্ট হয়ে গেলেও পেরেক নষ্ট হয় না, যা গাছের সাথে থেকে যায়। এভাবে চলতেই থাকে আর রাস্তার পাশের মেহগনি ও কড়াই গাছসহ বিভিন্ন জীবন্ত গাছ এক সময় মারা যায়।

তার মতে প্রত্যেকটি গাছকে সে সন্তান মনে করে। গাছের প্রতি এধরনের নিষ্ঠুর আচরণ তাকে ব্যথিত করে। তার ভাষায় গাছের এ অবস্থা দেখে সহ্য করা যায় না তাই সব কিছু ছেড়ে গাছ রক্ষার কাজে বাকিটা জিবন উৎস্বর্গ করলাম।

সাদা মনের মানুষের অস্তৃত্ব শুধু সাদা কাপড়ের মোড়কেই থাকে না, কমদামি নোংড়া জীর্ণ শীর্ণ কাপড়ের ভাজে ভাজেও সাদা মন বিদ্যমান, তার বিমূর্ত ও জলজ্যান্ত প্রতিক ওয়াহিদ সরদার নামক এ মহান ব্যক্তিত্ব। সমাজের জ্ঞানী, শিক্ষিত, পরিবেশবাদীসহ সমাজের উচ্চ স্তরের লোকেদের ঘি পোলাও খাওয়া মাথায় যে চিন্তাটার উদড়েক হলো না আর পারুটি বিস্কুট খেয়ে এত বড় মহান, মহৎ ও মানব কল্যাণকরী চিন্তাটা আসলো কিভাবে? আমরা কী পারবো এই অশিক্ষিত গরীব দিনমুজরের চিন্তাটাকে প্রাধন্য দিয়ে মানবক’লকে রক্ষার জন্য একটু বিবেকবান হতে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়