নওশাদুল হক : জীবনকাল ৭৭ বছর। এইটুকু সময়ের মধ্যে তিনি কাকে কি দিয়েছেন তার সঠিক হিসাব কারো কাছেই নেই নিশ্চই! কারণ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন জাতীয় বীর। তাইতো তাকে আমরা বিদ্রোহী কবি হিসাবে চিনি। তিনি আর কেউ নন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আপোসহীন এই কবি এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করছিলেন শুধু কলমে নয়, স্বশরীরেও। ফলশ্রুতিতে কারাগারের অভ্যন্তরে কিংবা মুক্ত অবস্থায় বাংলার সাহিত্য ও শিল্পের ভূবনে ছড়িয়েছেন বিদ্রোহের অনল। আবার কম ছিলেন নারোমান্টিকতার জগতেও।
সাম্যের কবি হিসেবে পরিচিত কবি নজরুল একদিকে শ্যামা সঙ্গীত অন্যদিকে গজল, নাত ও ইসলামী গান রচনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতীক রূপে। ‘সখি সে হরি কেমন বল’ ও ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই’ সহ প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি গান রচনা ও সুর করে অসাধারণ এক প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।
মাত্র দশ বছর বয়সেই দারিদ্রের করালগ্রাসে নিমজ্জিত হন কবি। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি। এহেন অবস্থায়ও রোমান্টিকতার কমতি ছিলনা এতটুকুও। প্রেম ভালবাসার দিগন্তে বসে তিনি রচনা করছেন ‘শাওন রাতে যদি স্মরনে আসে মোরে’, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী দেব খোঁপায় তারার ফুল’, ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, একি মোর অপরাধর’ এমন জগৎশ্রেষ্ঠ রোমান্টিক গানগুলো।
অপরদিকে আমার মত উড়নচ-ীদের জন্যও সৃষ্টি করেছেন কিছু গান। মনে পড়ছে আমার সবচেয়ে প্রিয় গানটি। ৪৩তম প্রয়াণ দিবসে অর্থাৎ কবির পৃথিবী ত্যাগের ৪৩ বছর পরে এসে স্বার্থপরের মতো কেন জানি বলতে ইচ্ছে করছে, প্রিয় কবি এ গানটি শুধু আমার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন। আজ কবির প্রয়াণ দিবসে তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আর তার সাথে সুর মিলিয়ে গেয়ে যাচ্ছি...
উচাটন মন ঘরে রয় না
প্রিয়া মোর
ডাকে পথে বাঁকা তব নয়না
উচাটন মন ঘরে রয় না
ত্যাজিয়া লোক-লাজ সুখ-সাজ গৃহ-কাজ
নিজ গৃহে বনবাস সয় না
উচাটন মন ঘরে রয় না
লইয়া স্মৃতির লেখা
কত আর কাঁদি একা
ফুল গেলে কাঁটা কেন যায় না
উচাটন মন ঘরে রয় না
প্রিয়া মোর
লেখক: সভাপতি,ঢাবি এলামনাই ফোরাম
আপনার মতামত লিখুন :