আশরাফ চৌধুরী রাজু, সিলেট: সিলেট আওয়ামী লীগে হঠাৎ করে দানা বেঁধেছে দ্বন্দ্ব আর অবিশ্বাস। দলের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের বিভক্তি ক্রমেই তুঙ্গে ওঠার উপক্রম।সাধারণ নেতাকর্মীরাও শীর্ষ নেতাদের দোষারোপে ব্যস্ত।সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পরাজয়ের পর এরকম অবস্থা হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে সিলেটে দলের এই অবস্থাকে বিদপসংকেত হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ, দলকে সাংগঠনিকভাবে গতিশীল ও নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার মিশন নিয়ে সিলেটে আসছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দৃশ্যত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোকসভায় যোগ দিতে আগামী বৃহস্পতিবার আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে তাঁর অনানুষ্ঠানিক মিশন হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেটে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, সন্দেহ, অবিশ্বাস আর অনৈক্য দূর করা। গেল ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন দুটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়। পরবর্তীতে ১০ আগস্ট স্থগিতকৃত কেন্দ্রগুলোতে ভোট গ্রহণ শেষে মেয়র পদে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রায় ছয় হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হার মানেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কামরানের এই হারের পর স্পষ্ট হয়ে ওঠে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার বিভেদ, বেরিয়ে আসে সিলেটে দলটির সাংগঠনিক দুর্বলতার করুণ চিত্রও। খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিলেটে মেয়র পদে হারের পেছনে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল বলে মন্তব্য করেন।
গণমাধ্যমকে কাদের বলেন, ‘নিজেদের অবজারভেশনে আমরা পেয়েছি, সিলেটে পরাজয়ের পেছনে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাজ করেছে। এবার সিলেটে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানোর চেষ্টা করেছি, তবে শেষ পর্যন্ত পুরোপরি পারিনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে হারের পর ঢাকায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ওই সাক্ষাতে নিজের পরাজয়ের জন্য সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতার ‘গোপন’ ভূমিকা থাকতে পারে বলে সন্দেহ পোষণ করেন কামরান।এদিকে, কামরানের পরাজয়ের জন্য শীর্ষ নেতাদের প্রতি অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দেন ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে হারের পর সিলেটে আওয়ামী লীগের সুখের সুরে ছেদ পড়েছে, দলে এখন বিভক্তির সুর বাজছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খেসারত দিতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সিলেট সফর করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন তিনি।ওই বৈঠকে সকল বিভেদ ভুলে, সন্দেহ ও অবিশ্বাসকে পেছনে ফেলে সামনে তাকানোর নির্দেশ দেবেন কাদের, এমনটাই জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কোন পথ ধরে এগোতে হবে, তারও রূপরেখা দিয়ে যাবেন কাদের।
সূত্রমতে, মূলত আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা সিলেটের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেবেন ওবায়দুল কাদের।এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওবায়দুল কাদেরের সাথে সিলেটে দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো।’
বিষয়টি নিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিটি নির্বাচন পরবর্তী সিলেটে দলের অবস্থা, আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কেন্দ্রের নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারেন ওবায়দুল কাদের।
আপনার মতামত লিখুন :