শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ২৭ আগস্ট, ২০১৮, ১০:৩০ দুপুর
আপডেট : ২৭ আগস্ট, ২০১৮, ১০:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পোশাকের পরই চামড়া

ডেস্ক রিপোর্ট : বিকাশমান শিল্পের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশে চামড়া শিল্প অন্যতম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পরই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসে চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে। ২০২১ সালের মধ্যে এই খাত থেকে আয় পাঁচশ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার পাশাপাশি চামড়া থেকে তৈরি জুতা, ব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, ওয়ালেট, বেল্ট, মানিব্যাগসহ চামড়ার তৈরি হস্তশিল্প পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে।

বৈশ্বিক হিসাবে চামড়ার বড় বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে-ইতালি, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, সিংগাপুর, স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ান। তবে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জাপান। শুরু থেকেই এই দেশটি বাংলাদেশে তৈরি চামড়ার জুতায় ‘ডিউটি ও কোটা ফ্রি’ সুবিধা চালু রেখেছে। চামড়াজাত পণ্যের মোট রফতানি পণ্যের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশই যায় জাপানে। এখন বাইরের দেশগুলোতেও দেশে উৎপাদিত জুতার বাজার প্রসারিত করতে চায় বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ৩৫টি মাঝারি ও ২৫টি ক্ষুদ্র ট্যানারি নিয়ে চামড়া শিল্পের যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশে। এর মধ্যে ৩৫টি মাঝারি ট্যানারির মধ্যে অবাঙালি মালিকানাধীন ৩০টি ট্যানারি সরকার অধিগ্রহণ করে। কিন্তু রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে এসব ট্যানারি লাভজনক শিল্পে রূপ নিতে পারেনি। ফলে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়ায় এসব ট্যানারি পরে ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়। বর্তমানে দেশে ট্যানারির সংখ্যা প্রায় দুইশ।

বর্তমানে চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় ১১৬ কোটি মার্কিন ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছিল ১১৩ কোটি মার্কিন ডলার ও এর আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ১১২ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ ২১ হাজার ৫শ কোটি মার্কিন ডলার।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া শিল্প থেকে আয় হয়েছিল ১৩৮ কোটি এক লাখ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

হিসাব অনুযায়ী, বৈশ্বিক এই বাজারের মাত্র ০.৫ ভাগ রফতানি করে বাংলাদেশ। তাই এ বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে তোলার মাধ্যমে চামড়া শিল্পকে একটি উল্লেখযোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্পকে সাভার স্থানান্তরও সেসব উদ্যোগের একটি।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী-বাংলাদেশে প্রাপ্ত ৩০ কোটি বর্গফুট চামড়ার মধ্যে গরুর চামড়া ৭০ লাখ পিস, ছাগল এক কোটি পিস এবং মহিষ ও ভেড়ার চামড়া ১৫ লাখ পিস। দেশে অভ্যন্তরীণ চামড়ার চাহিদা ২ দশমিক ৭৫ কোটি বর্গফুটের মতো। আর বাকিটা রফতানি হয়।
জানা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত চামড়ার প্রায় অর্ধেকই সংগৃহীত হয় কোরবানির ঈদে। তবে গত কয়েক বছরে কোরবানির পরপরই সাতক্ষীরা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে চামড়া পাচার হতে দেখা গেছে। একশ্রেণির দালাল কোরবানির আগেই অগ্রিম টাকা সরবরাহ করে এ চামড়াগুলোর একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে রাখে, যা কাঁচা অবস্থাতেই প্রতিবেশী দেশে পাচার করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
চামড়া শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা অপ্রতুল। ফলে এ সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে চামড়া পাচার রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় চামড়া পাচার রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েও এ শিল্পকে আরও শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, তেমনি চামড়া নিয়ে দুর্নীতি দমনে আরও একধাপ অগ্রসর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
২০১৪ সালে ২৬০ মিলিয়ন বর্গফুট ফিনিশড লেদার রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যদিও এ সময় উৎপাদিত ফিনিশড লেদারের পরিমাণ ছিল ২৮০ মিলিয়ন বর্গফুট। অথচ একটু পেছনে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশ কাঁচা চামড়া বা ‘ওয়েট ব্ল লেদার’ ও ‘ক্রাস্ট লেদার’ বা প্রক্রিয়াজাত চামড়া রফতানির পরিমাণ ছিল আরও বেশি।

সময়ের ব্যবধানে চামড়া শিল্পের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি এখন ট্যানারি মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এ শিল্প অবশ্যই বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পে রূপ নেবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও ধারণা।
বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারে ট্যানারি পল্লী স্থানান্তরিত হওয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত ক্ষমতা আগের থেকে দুই-তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত কাঁচা চামড়া না পাওয়ায় রফতানি সম্ভাবনাকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। পর্যাপ্ত চামড়া রফতানি করা গেলে ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে আমাদের বৈদেশিক আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। সূত্র : ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়