অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে
রাজনীতি নিয়ে মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। সামাজিক মাধ্যমে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় মানুষ আসলে এখন রাজনীতি বিমুখ। ঘটনা বা অঘটন কিছু না হলে কেউ সেদিকে যায় না। মাথা ঘামায় না। এর চেয়ে ঢের ভালো নিজেদের জীবন ও জীবনের শান্তি বজায় রাখা। তবে এমন কিছু কিছু সমস্যা আছে যা না চাইলেও আমাদের জাতীয় জীবন বা সমাজ থেকে দূর সরে না। তেমনি এক সমস্যার নাম রোহিঙ্গা সমস্যা। শুরুতে যে আবেগ, যে প্রচার আর যে বোধ তা কি এখন আছে? শুরুতে যখন এমন কথা বলেছিলাম অনেকে বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলেন। ভাবখানা এই আমাদের জন্ম পরিচয় যেহেতু অন্যধর্মের আমরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের বেলায় উদাসীন। যারা তখন ঘরবাড়ি জমিজমা ছেড়ে দেওয়া এমনকি বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফাটিয়ে দিয়েছিলেন তারা এখন কোথায়? লেজ গুটিয়ে সুড়সুড় করে ঘরে চলে গেছেন? এই অতিআবেগ আমাদের কাল।
এমনকি সরকারি পর্যায়েও আমরা কেবল আবেগের খেলা দেখলাম। শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে ভাত ভাগ করে খাওয়া বা তাদেরকে আপন করে নেওয়ার যেসব কথাবার্তা সেগুলোতে সমাধান প্রক্রিয়া ছিল না। বালক বেলায় আমরা যখন নিজেরা শরণার্থী হয়ে ওপার বাংলায় গিয়েছিলাম দেখেছি কেমন করে তারা আমাদের দিকে তাকাত। এটা ঠিক তারা আমাদের খাবার থাকার জায়গা এমনকি আপন করেও নিয়েছিল কিন্তু তাদের নেতারা অংক কষছিলেন কখন কিভাবে আমাদের দেশে ফেরত দেওয়া যায়। সংখ্যাটা রোহিঙ্গাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল বটে তেমনি ভারত ও আকার আয়তন শক্তিতে বড় দেশ । থাক সে প্রসঙ্গ। বলছিলাম আজকে রোহিঙ্গা সমস্যা যেন আমাদের নিয়তি। এখন তা ঘাড়ের উপর চেপে বসছে। আমরা যত উন্নত আর ডিজিটাল হই না কেন অতগুলো বাড়তি মানুষের চাপ নেওয়ার শক্তি নেই আমাদের। চাপের মুখে রাখলে দেশের শান্তি আর উন্নয়ন যে বিঘিœত হবে সেটা জেনেও কারও কারও মতো এতে নাকি চাকরির সুযোগ বেড়েছে। বেড়েছে ব্যবসার পরিধি। এরা বোঝেও বলছেন না এখন যে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা সহায়তা সেটাও একসময় থিতিয়ে আসবে। তখন এই মানুষগুলো কোথায় যাবে? কোথায় পাবে তাদের নিরাপত্তা বা স্বাভাবিক জীবন? আবেগের বাইরে সমাধানের রাস্তা না খুঁজলে এই সমস্যা বিষফোঁড়া হবেই। মানুষ দুনিয়ার সেরা জীব মুখে বললেও মানুষ তা মানে না। মানলে নিরীহ শিশু বা নারীদের উপর এমন অনাচার করতে পারত না মিয়ানমার।
যেসব শিশু বাংলাদেশে আসার আগে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া পিতাকে আর দেখেনি এসে মাকে হারিয়ে এখন ক্যাম্পে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে তারা যদি ফেরত না যায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বা বড় হওয়াটা কেমন হতে পারে? সেটা যারা জানেন বা বোঝেন তাদের আতঙ্ক যেন সত্য না হয়। আমাদের সমাজ ও রাজনীতি উদ্দেশ্যপ্রবণ। কোনোকিছুই উদ্দেশ্য ছাড়া হয় না। রোহিঙ্গা নিয়ে যে ধর্মীয় ও সামাজিক আবেগ তাকে নিয়েও খেলছে রাজনীতি। আমাদের দেশ ও সমাজের মঙ্গলের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের প্রত্যাবর্তন জরুরি। সেটা না হলে কূটনীতি যেমন ব্যর্থ হবে তেমনি দেশের মঙ্গল ও পড়বে তোপের মুখে। আবেগের বাইরে এসে সমস্যার সঠিক সমাধান কি দিতে পারবে আমাদের দেশের নেতৃত্ব? রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে সেফ হেভেন মনে করলেও আখেরে তাদের দেশই তাদের ঠিকানা। এটাই বুঝতে হবে সবাইকে।
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
আপনার মতামত লিখুন :