মহসীন কবির : ঢাকাসহ দেশের মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা, ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক বা সেতু, ওভারটেকিং নিষেধ’সহ বিভিন্ন নির্দেশনা মেনে চলতে চাননা অনেক চালক। নিজেদের ইচ্ছে মত দায়িত্বহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ২৫ আগস্ট শনিবার একদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে ২৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট বলছে, চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনাই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। এই কারণেই শতকরা ৯১ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, চালকের অদক্ষতা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, খেয়ালিপনা, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, ফুটপাত দখল, ওভার টেকিং, রাস্তার নির্মাণ ত্রæটি, গাড়ির ত্রæটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা ও না মানা, নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করা,ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা ও রাস্তায় ওভারটেক করার তীব্র মানসিকতা।
ঈদের সময়ে চালক ও মালিকদের অতিরিক্ত লাভের আশায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ। ঈদের সময় দুর্ঘটনা বাড়ার জন্য নজরদারি কমে যাওয়াকেও দায়ী করেন তিনি। সাইফুন নেওয়াজ বলেন, চালকরা অতিরিক্ত ট্রিপ, লাভের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। ঈদের পরে পুলিশের নজরদারি থাকে না। সেই সময়ে ওভারটেকিং বেশি হয়। রাস্তাও ফাঁকা। আর এ সুযোগে দুর্ঘটনাও বেশি হয়। তিনি আরো বলেন, ঈদের সময়ের সঙ্গে অন্য সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যায়, ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। ।
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক ড. হাসিব মোহাম্মদ আহসান জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির নজির নেই। থাকলে বেপরোয়া গাড়ি চালানো অনেকাংশে বন্ধ হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনাও হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, হাঁটাচলার সুবিধা না দিলে সড়ক দুর্ঘটনার কোনো সমাধান হবে না। শহর এবং গ্রামের সব রাস্তার পাশেই হাঁটার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা (ফুটপাত) থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রæটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ। রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করলে কখনই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে না।
সড়ক দুর্ঘটনার পিছনে পরিবহন মালিকদেরও গাফলতি রয়েছে। এক্ষেত্রে মালিক পক্ষের ১০টি ত্রæটি হলো- গাড়ি নিয়মিত রক্ষাণাবেক্ষণ না করা, যোগ্য ও দক্ষ চালক নিয়োগ না দেয়া এবং চালক ও কন্ডাক্টর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধি অনুসরণ না করা, পরিবহন শ্রমিকদের উপর মালিকদের নিয়ন্ত্রণ না থাকা, অনুমোদিত ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক মালামাল পরিবহনের জন্য ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরকে নির্দেশ দেয়া, শ্রমিকদের দ্বারা অধিক পরিশ্রম করানো ও স্বল্প পারিশ্রমিক দেয়া, বেতন ভিত্তিক চালক নিয়োগ না করা, শ্রমিকদের কল্যাণ সংক্রান্ত কর্মসূচি গ্রহণ না করা, শ্রমিকদের পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা, যাত্রা আরম্ভ করার আগে চালককে গন্তব্য স্থান সম্পর্কে সঠিকভাবে অবহিত না করা, সময় নিয়ন্ত্রিত গাড়ি পরিচালনা পদ্ধতি অনুসরণ করা।
আপনার মতামত লিখুন :