শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৪৫ সকাল
আপডেট : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাইয়ারে সকাল সকাল বিয়া দিলে সুন্নত: রোহিঙ্গা শরণার্থী

বিবিসি রিপোর্ট: মর্জিনা বেগম বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের সবচাইতে বড় শরণার্থী শিবির কুতুপালং ক্যাম্পে থাকেন। গত মাসেই ১৪ বছর বয়সী মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলছিলেন. "মাইয়ারা সহরে সহরে বিয়া দিলে হিয়ান হইলো সুন্নত"। নিজের ভাষায় সরল উত্তর। মর্জিনা বেগম বলছেন মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া সুন্নত।

তিনি বলছেন, "বার্মার দেশের লোকেরা ছেলে মাইয়ারে সকালে সকালে বিয়া দিয়া দেয়। বাংলাদেশের এলাকাতে হইলো ছোট মাইয়াগো বিয়া দেয় না। তাগো পড়ালেখা করায়। বার্মার দেশের লোকেরা এডি চায় না" কিন্তু কেন চায় না প্রশ্ন শুনে হাসতে আরম্ভ করলেন মর্জিনা বেগম। এই ‘কেন’ র  কোন উত্তর পাওয়া গেলো না কুতুপালং ক্যাম্পে ।

মেয়েদের আগেভাগে বিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে আলাপ তুলতে গিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া বেশ পাওয়া গেলো সেখানে। ক্যাম্পে চোখে পড়লো বাচ্চা কোলে অসংখ্য কিশোরীর। বাল্যবিয়ে হয়ত তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি। তবে ভিন্ন কারণও পাওয়া গেলো প্রচুর।

মোহাম্মদ সেলিম গত অক্টোবরে মিয়ানমারের কারারুপাং এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে কুতুপালং ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছেন।

অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত পরিবারের এই তরুণ বলছেন তারা যখন মিয়ানমার বসবাস করতেন তখন থেকেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার প্রচলন। যার মুল কারণই হল নিরাপত্তা। বাংলাদেশে আসার পরও সেটিই বড় কারণ হিসেবে রয়ে গেছে।

তিনি বলছেন, "যদি আমার বোনটাকে আমি বিয়ে না দেই, তাহলে সে এদিক ওদিক চলাফেরা করবে আর ওরা ওর গায়ে হাত বাড়াবে।" তাই আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেই। তাতে করে সে তার শ্বশুর বাড়িতে থাকবে। বাজারে যাবে না, এদিক ওদিক যাবে না। আমরা আমাদের ইজ্জতের জন্য এইটা করতেছি"

কিন্তু অভাব, অনিশ্চয়তা আর রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর ভয়াবহ ঘনবসতি সম্পর্কে বলছিলেন কুতুপালং শিবিরের মসজিদে আকসার ইমাম আক্তার হোসেন।

তিনি বলছেন, "এরকমও কিছু পরিবার আছে যাদের দশ এগারো জনের পরিবার। ছোট বাসায় দেখা যায় দুইজন যুবক ছেলে আর দুইজন যুবক মেয়ে। তখন তাদের দুইটা আলাদা রুম দিতে হয়। এত ছোট বাসা সেইজন্য কিছু লোক মনে একটা মেয়ে উপযুক্ত হইয়া গেছে। ওদের যদি আমি বিবাহ দিতে পারি তাহলে কিছুটা সুবিধা হবে।"

রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি বলে মনে করছেন উন্নয়ন কর্মীরা।

কক্সবাজারে ইউনিসেফের কর্মকর্তা অ্যলেস্টেয়ার লসন ট্যানক্রেড বলছেন, "আপনি জানেন রোহিঙ্গারা সামাজিকভাবে বেশ রক্ষণশীল এবং তার যদি একটি ধারণা দেই; আমি সেদিনই ক্যাম্পে গিয়েছিলাম। সেখানে ছয়জন ইমামের সাথে আমার কথা হচ্ছিলো। তারা সবাই একমত যে প্রথমবার মাসিক হওয়ার পর মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া একদম গ্রহণযোগ্য"

আর যেহেতু বাল্য বিয়ের ক্ষেত্র রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আইনের আওতায় পরেন কিনা সেনিয়ে দ্বিধা রয়েছে তাই এমন বিয়ে প্রতিরোধ করাও কর্তৃপক্ষের জন্য মুশকিল বলছিলেন ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা।

মিঃ ট্যানক্রেড বলছেন, "যদিও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ কিন্তু ক্যাম্পে যেরকম অনানুষ্ঠানিক-ভাবে বিয়েটা হয়, সেখানে এমন আইন প্রয়োগ করা খুবই কঠিন। দেখা যায় ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আয়োজন করে একটা বিয়ে হয়ে গেলো। তবে রোহিঙ্গাদের বাল্য বিয়ে নিয়ে জ্ঞান দেয়ার আগে আমাদের সতর্ক হতে হবে। এটা সত্যি যে তারা ভয়াবহ অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। আমাদের চোখে বাল্য বিয়ে যত জঘন্য মনে হোক না কেন ক্যাম্পের জীবন নিরাপত্তাহীন সেটি তো সত্যি"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়