শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২০ দুপুর
আপডেট : ২৬ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অক্টোবরেই উদ্বোধন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন ইনস্টিটিউট

ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী ১৩ অক্টোবর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু মধ্য দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরেকটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রকল্প মেয়াদ অনুযায়ী, কাজ শেষ হওয়ার কথা এই বছরের ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই মাস আগেই উদ্বোধন করা হচ্ছে। ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি থাকলেও তা শেষ হতে ডিসেম্বর পার হবে না।

অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এই ইনস্টিটিউটে থাকছে একশোটি কেবিন। হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিটে থাকছে ৬০ বেড, ১২টি অস্ত্রোপচার থিয়েটার এবং অত্যানুধিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির অত্যাধুনিক চিকিৎসা এখানে দেওয়া হবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হবে নতুন এই ভবনের।

এই বার্ন ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। পরের মাসের ২৯ তারিখ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চানখাঁর পুলে ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২৭ এপ্রিল বাংলদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর নির্মাণ কাজ শুরু করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বার্ন ইনস্টিটিউট। এতো বড় ইনস্টিটিউট এই সাবজেক্টে পৃথিবীর আর কোথাও নেই। কারণ, বাংলাদেশে যত মানুষ দগ্ধ হয়, বিশ্বের আর কোনো দেশে এত মানুষ দগ্ধ হয় না। আর এখানে শুধু পোড়া রোগীর চিকিৎসা হবে না, থাকবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং গবেষণা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন  বলেন, প্রায় দুই একর জমিতে ১৮ তলা ভবন বিশিষ্ট এই ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে। মাটির নিচে তিন তলা বেজমেন্ট রাখা হয়েছে। কেবল গাড়ি পার্কিং নয়, রেডিওলজিসহ আরো ক’টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ থাকবে সেখানে। বহুতল এই ভবনটি তিনটি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে থাকবে বার্ন, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট আর অন্য ব্লকটিতে করা হবে অ্যাকাডেমিক ভবন। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সরকারি হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা রাখা হচ্ছে।

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় আগামী ১৩ অক্টোবর বিকেল ৪টায় এই ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মেধা, দক্ষতা সব আছে। প্রয়োজন শুধু সুযোগের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তার কাছে আমরা ঋণি, তিনি আমাদের এত বড় ভবন দিয়েছেন, বিশ্বের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হচ্ছে, একটি ইনস্টিটিউটে প্রায় ২ হাজার ২শ’ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

‘একজন প্রধানমন্ত্রী যদি এই ধরনের সাপোর্টে দেন তাহলে আমরা সবাই অনেক বল পাই, আমাদের সাহস অনেক বেড়ে যায়’- বলেন ডা. সামন্তলাল। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীকেও ধন্যবাদ জানাই- তারা দ্রুত কাজ করেছেন।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকৎসক অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার বলেন, বাংলাদেশে ২০০৫ সালের আগে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি ছিল না। তখনই আমরা চিন্তা করছিলাম যতদিন না প্রশিক্ষিত এবং যোগ্য জনশক্তি তৈরি করা যাবে ততোদিন দক্ষ জনবল হবে না। আর দক্ষ জনবল তৈরি না হলে এই সেক্টরে আগানো যাবে না। তখন প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলজের অধীনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মার্স্টাস ইন প্লাস্টিক সার্জারি চালু করা হয়।

তিনি বলেন, প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি, অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল, অধ্যাপক আইয়ূব আলী এবং অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান। পরে হাতে গোনা আরো কয়েকজন বের হন। কিন্তু ভাবনার বিষয় ছিল, এতো সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক তৈরি হলে বছর শেষে ১৫ জনের বেশি চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে যত মানুষ প্রতিবছর দগ্ধ হয়, সেই তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।

জন্মগত ঠোঁটকাটা-তালুকাটা, আঙ্গুল জোড়া লাগানো, পায়ের ত্রুটি, ক্যান্সার, দুর্ঘটনা, ট্রমা, হাত-পা সার্জারিসহ একটা বড় অংশ বার্নে আসে। এই সবকিছু ডিল করতে গেলে প্লাস্টিক সার্জন দরকার ন্যূনতম ৪শ’ জনের মতো। কিন্তু বাংলাদেশে এখন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছেন ৬৫ জন। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বের হবেন ৮০ জনের মতো। এখন আমাদের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে এই ইনস্টিটিউট এবং ঢামেক হাসপাতালের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্লাস্টিক সার্জন তৈরি এবং নিয়োগ দেওয়া- বলেন তিনি।

ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার বলেন, এখন যে ভবন রয়েছে তাতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। এতে সংক্রমণের (ইনফেকশন) আশঙ্কাও বেড়ে যায়। নতুন ইনস্টিটিউটে বেড অনুযায়ী, রোগী ভর্তি করা হবে। মান নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে ফ্লোরে কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হবে না।

বার্ন অ্যন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম বলেন, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি রয়েছে। তারা অংশীদার হিসেবে থাকতে চায়। বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের কাছে রোগী যায়, যে কারণে তাদের চাওয়া বাংলাদেশে এই ফ্যাসিলিটি থাকুক। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হোক রেফারেন্স রিজিওনাল সেন্টার।

ডা. সামন্তলাল সেন আরো বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায়। এতো দ্রুত একনেকে কোনো প্রকল্প পাস হয়নি, সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়া হয়েছিল- তারাও দ্রুত কাজ করেছে। আমরা একটি ভিত্তিপ্রস্তর দিয়ে যাচ্ছি, পরের প্রজন্ম একে আরো এগিয়ে নেবে।-সারাবাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়