শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৫৯ সকাল
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৫৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগারে সুখময় জীবন!

ডেস্ক রিপোর্ট : যদি মনে হয় কারাগারে কয়েদিরা অনেক কষ্টে থাকে আপনার ধারণা ভুল! হয়ত বা জানেনই না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জেলে আসামীরা অনেক স্বচ্ছন্দ্যেই দিন কাটাচ্ছে! বলছি পশ্চিমা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কারাগার ব্যবস্থার কথা। কমলা রঙের জাম্পস্যুটের আড়ালে তারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে না পারলেও তাদের জীবনধারণ পদ্ধতিও ঈর্ষা করার মত! পশ্চিমা বিশ্বের কারাগারে আসামীদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হয়, যেটা বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গেও হয়ত আপনি করেন না। কারণ, তারা দ্বিতীয় জীবনে বিশ্বাস করে। মানুষ এই কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে একটি ভালো জীবন শুরু করবে আবার এটাই বিশ্বাস করে তারা। তাই বলে যেন আবার কারাগারে যেতে উৎসাহিত হবেন না। আমাদের আটপৌরে জীবনের সঙ্গে তাদের পার্থক্যটা কোথায়? তা তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই এই লেখা-

সময় কাটে সেলের বাইরে: যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৭৫শতাংশ শিশুদের চেয়ে জেলের কয়েদিরা মুক্ত আলো-বাতাসে সময় বেশি কাটায়। অন্যান্য দেশে এই শতাংশের সংখ্যাটি আরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক অন্তত ৩৫শতাংশ শিশু কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে বসে থাকে। বাড়ির বাইরে যায় না। তবে জেলখানা হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ, যেখানে আপনি চাইলেও সারাদিন নিজের সেলে আটকে থাকতে পারবেন না। বাইরে কিছুটা সময় আপনাকে ব্যয় করতেই হবে। কয়েদীরাও হাসিমুখে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। জাতিসংঘের দিকনির্দেশিকায় বলা আছে ‘জেলখানার কয়েদিদের প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা মুক্ত আলো-বাতাসে যেকোনো উপায়ে শারীরিক কসরত করার সুযোগ দিতে হবে’। এই সুযোগটিই পশ্চিমা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের শিশুরা পায় না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানের জেলে কয়েদিরা এক ঘণ্টার বদলে দুই ঘণ্টা মুক্ত সময় কাটাতে পারে। এই সময়ে তারা অন্যান্য কয়েদিদের সঙ্গে গল্প করে থাকে।

স্কুলের চেয়ে খাবার ভালো: জেলখানায় ভালো খাবার দিয়ে বন্দীদের আরামে রাখা হবে, এমন চিন্তা করাটা ভুল। কয়েদিদের সামনে একপ্লেট ভর্তি খাবার দেখেও উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই! তবে একটি বিষয় নিয়ে সেসব দেশের কয়েদিরা কৃতজ্ঞবোধ করেন। কারণ সেখানকার হাইস্কুল ক্যাফেটেরিয়া থেকে জেলের খাবার ভালো। গুড ম্যাগাজিনের দেয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন একজন কয়েদিকে আধাকাপ সবজি, ফল এবং তিন থেকে চার আউন্স মাংস দেয়া হয়। সেখানে একটি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীকে সবজি কিংবা ফল, এই দুটোর যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয়। মাংসও পরিমাণমতো দেয়া হয়না। জেল হোক কিংবা স্কুল, ক্যালোরির মান সবার ক্ষেত্রেই বেশ ভালোভাবে বিবেচনা করা হয়। তবে পুষ্টিমানের মাঝে বড় ধরণের পার্থক্য রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বের জেলগুলোতে কয়েদিরা যেন চারটি খাদ্য উপাদানই পায়, সেটি নিশ্চিত করা হয়। অপরদিকে হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে বেশিরভাগ সময় দেয়া হয় স্টার্চ এবং কার্বোহাইড্রেট। আমাদের দেশে ফাস্ট ফুড বেশি খেলে শিশুরা বেশ তাড়াতাড়িই মুটয়ে যায়। তবে পশ্চিমা বিশ্বের কথা আলাদা।

উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রে একটি মজার জোক চালু রয়েছে। বয়স হয়ে গেলে নিজের খেয়াল রাখবার জন্য একজন বয়স্কব্যক্তি দুটো কাজ করতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের জন্য সাইন আপ করা। যেটি প্রতিমাসে প্রায় ৬ হাজার ডলারের মতো কেটে রাখবে (যদি সে পরিমাণ অর্থ থাকে)। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আশেপাশে কোনো পুলিশ দেখলে বিনাবাক্যে তার মুখে ঘুষি মেরে দিন। জেলে পৌঁছে গিয়ে একটি আরামের জীবন কাটান। কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের জেলখানাগুলোতেও একই অবস্থা। বয়স্ক কয়েদিরা সেখানে ভালো সুযোগ সুবিধা পায় তারা। অন্যদিকে, নার্সিং হোমে বয়স্ক রোগীদেরকেও এড়িয়ে যাওয়া হয়। তবে জেলখানায় এমন সুযোগ নেই। বিনা খরচে তাদের সকল রোগের চিকিৎসা করার নির্দেশ রয়েছে জেলখানায়। এমনকি ক্যান্সারের রোগী থাকলেও সেখানকার ডাক্তাররা সর্বোচ্চ সেবা দেয়।

বই পড়ার সুব্যবস্থা: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ইত্যাদি দেশে জেলখানার লাইব্রেরীগুলো সবসময় জমজমাট থাকে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে এখানকার লাইব্রেরীগুলোর সংগ্রহে যেসব বই থাকে, তা অনেকসময় পাবলিক লাইব্রেরীতেও থাকে না। বই পড়া বাধ্যতামূলক কয়েদীদের জন্য। কখনও পাশের সেলের কয়েদিদের সঙ্গে বই পড়ার প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। ইন্টারনেট সুবিধাও দেয়া হয় কয়েদীদের পড়াশোনার জন্য। লাইব্রেরীয়ানরাই এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন। এমনকি লাইব্রেরীতে কয়েদিরা যেন হৈ-হুল্লা করতে না পারে সেজন্যও রয়েছে চমৎকার ব্যবস্থা। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বাস করেন যে কারাগারগুলোতে লাইব্রেরী থাকার ফলে অভ্যন্তরীন সমস্যা সামাল দেয়া যায়। ধর্মের বইয়ের ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়া হয় কারাগারগুলোতে।

অর্থায়ন বেশি: পশ্চিমা বিশ্বে একজন সাধারণ নাগরিকের চেয়ে জেলে বন্দীদের ভালোভাবে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবছর ক্যালিফোর্নিয়াতে একজন বন্দীর আবাসনের পেছনে সরকার বার্ষিক ৭৫ হাজার ৫৬০ ডলার খরচ করেন, যা কিনা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক টিউশনের অর্থায়নের চেয়েও বেশি। হিসেবটি এক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত তবে জেলের একজন কয়েদির বসবাসের জন্য বার্ষিক ৫৫ হাজার ডলারের সুবিধা দিয়ে থাকে সরকার। এই বরাদ্দে অন্তত সাতজন শিক্ষার্থীকে মিড লেভেল কলেজে পাঠানো যায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতি গ্রেডের একজন স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য বাৎসরিক খরচ করে সাড়ে দশ হাজার ডলার। এই ফাঁকটি দিন দিন আরও বেড়েই চলেছে। গত ৩৩ বছরের যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলের প্রতি ব্যয়ের তুলনায় জেলের প্রতি ব্যয় অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। তবে ভাববেন না জেলে এই অঙ্কের খরচ করা রীতিমতো পাগলামি! ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে কারাগারে ব্যয়ের পরিমাণ ৩২৪ শতাংশ বেড়েছে কারণ ৩৩০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি। জেল হোক কিংবা স্কুল কলেজ, মুদ্রাস্ফীতির এই টাকা সরকার খরচ করছে পড়াশোনার পেছনেই।

গৃহহীনরাও স্বচ্ছন্দ্যে থাকে: ব্র্যাডলি গ্রিমস নামক এক গৃহহীনকে কোর্টে পাঠানো হলো ভবঘুরের মতো এখানে সেখানে ঘুরে বেরানোর জন্য। মিডলবোরোর এই যুবক জাজকে অনুরোধ করেন, তাকে যেন জেলহাজতে পাঠানো হয়। তার যুক্তি, ‌‌'কারাগারে কোনো কিছুর জন্য চিন্তা করতে হয় না'। বাইরে পুলিশের রুক্ষ ব্যবহার সইতে হবে, খাবার জুটবে না কপালে। তবে কারাগারে এসবের চিন্তা নেই। খাবার মিলবে, শীতে মিলবে গরম কম্বল, পুলিশের চোখরাঙ্গানিও সহ্য করতে হবে না তাকে। ব্র্যাডলির মতো গৃহহীন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রয়েছে, যারা বিশ্বাস করে ঘরের চাইতে জেলে যাওয়াই ভালো তাদের জন্য। কারণ সেখানে খাবার, শিক্ষা, চিকিৎসা তিনটেই রয়েছে। সেসব দেশের অনেকেই ছোটখাট অপরাধগুলো ইচ্ছে করেই করে যাতে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে জেলে ভরে দেয়।!

কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাদেরকে স্পন্সরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। অনেক স্বেচ্ছাসেবকরা তাদেরকে কমিউনিটি সার্ভিসে যোগদানের সুযোগ করে দেন, কেউবা আবার যোগ্যতা অনুযায়ী পেয়ে যান চাকরি। জেলের বাইরে যে সমাজ তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত, জেলে গিয়ে সে সমাজই তাদেরকে ভালোভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচার সুযোগ করে দেয়।-ডেইলি বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়