শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৪৮ সকাল
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘আগুনে পুড়ে সব ছাই, শুধু জীবনটাই বাঁচলো’

ডেস্ক রিপোর্ট : ‘বুড়ি মাকে নিয়ে বাড়ি যাবো, তাই ঈদের মধ্যে দুইদিন রাস্তায় ফেরি করে আইক্রিম বেচে তিন হাজার ২০০ টাকা জমাইছি। ওই টাকা খাটে বালিশের নিচে গুঁজে রাখছিলাম। হঠাৎ আগুন লাগে, তাড়াতাড়ি আমার বুড়ি মাসহ পাশের ঘরের আরও দুইজনকে টেনে বাড়ির দোতলা থেকে নিচে নাইমা আসি। ঘরের কিছু্ই বাঁচাতে পারিনি। আগুনে পুড়ে সব ছাই, শুধু জীবনটাই বাঁচলো।’

শুক্রবার দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন আগেরদিন বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) রাতে রাজধানীর লালবাগের ইসলামবাগ এলাকায় প্লাস্টিক কারখানায় লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত জসিম।

আগুনে ১৯টি বাড়ির মোট ১৭৭ জন ভাড়াটিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও ২৫/৩০টি প্লাস্টিকের কারখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঈদের মধ্যে রাস্তায় আইসক্রিমের ঠেলা-গাড়ি নিয়ে ফেরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিলেন জসিম। বাড়িওয়ালাকে ঘরভাড়া দেবেন এবং বৃদ্ধা মাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবেন। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে ছাই, জসিম এখন নিঃস্ব প্রায়।

জসিমের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহন গ্রামে। ঢাকার রাস্তায় আইসক্রিম ফেরি করে সংসার চালান। তার বৃদ্ধা মা মানুষের কাছে চেয়ে-চিনতে চাল-ডাল সংগ্রহ করেন। ইসলামবাগের আলীর ঘাটের একটি বাড়ির দোতলায় ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন তারা।
তিনি বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) সকালে আমার পরিচিত অন্যজনের কাছ থেকে একটি শার্ট চেয়ে নিয়েছি। সেটি গায়ে দিয়ে এখনও আছি। আমার তিনটি আইসক্রিমের গাড়ি ছিল। একটি বাঁচানো গেলেও বাকি দুটো গাড়ি পুড়ে ছাই হইয়া গেছে। মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে মা কিছু চাল-ডাল জোগাইছিল (জমানো), সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

বৃহস্পতিবার রাতের এ আগুনের সূত্রপাত এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেবাশীষ বর্ধনকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অধিদফতরের ঢাকার সহকারী পরিচালক মামুন মাহমুদ ও উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল হালিম। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আইসক্রিম ফেরিওয়ালা জসিম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের ভেতরে আমার মা আর আমি ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাইরে সবাই আগুন আগুন বলে চিৎকার করছিল। ঘর থেকে উঁকি দিতেই ধোঁয়া দেখতে পাই। সেই সময় আমার মাকে নিয়ে এবং পাশের ঘরের আনজিনা খালাকে নিয়ে বাড়ির নিচে নেমে আসি। ততক্ষণে আগুন আমাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে। আর উপরে যেতে পারিনি। বাতাসে আগুন এদিক যায় আবার ওদিক যায়। এতে আশে-পাশের সব বাড়িতেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’

লালবাগ ইসলামবাগের আলীর ঘাটের বেশির ভাগ বসবাসকারী নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ ফেরিওয়ালা, দিনমজুর, কেউ মানুষের বাড়িতে কাজ করেন, আবার কেউ সেখানকার প্লাস্টিক কারখানার কর্মী।

স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিকের কারখানার একটি ঘরে আগুনে সূত্রপাত। কয়েক মিনিটেই আশেপাশের বাড়িগুলোয় তা ছড়িয়ে পড়ে। এখানে প্লাস্টিক কারখানা ছাড়াও অনেক ভাঙ্গাড়ির দোকান রয়েছে। ঈদের ছুটির কারণে এসব কারখানা ও দোকানে কেউ ছিল না। প্লাস্টিক কারখানা ও কেমিক্যাল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়। এর আগেও একবার আলীর ঘাট এলাকায় প্লাস্টিকের গোডাউন ও কারখানায় আগুন লেগেছিল।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত আনজিনা বেগম প্লাস্টিকের কারখানায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘রাস্তার পাশে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার আছে, সেই খামবার সামনে একটি প্লাস্টিকের কারখানায় আগুন ধরে যায়। প্রথমে একবার আগুন ধরেছিল, আমি আর আমার ছেলে গিয়ে পানি ঢেলে নিভাইছি। এর কিছুক্ষণ পরে আবার আগুন জ্বলে উঠে। কিন্তু ওই কারখানার লোহার গেটে তালা থাকায় সেটি নেভানো যায়নি। বাতাস থাকার কারণে মুহূর্তের মধ্যে আগুন আরও কয়েকটি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। সব কিছু পুড়ে গেছে।’

আগুনে পুড়ে যাওয়া এক বাড়ির মালিক হাজী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘একটি ঘর থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে বাতাসের কারণে আগুন ছড়াতে থাকলে পাশে থাকা বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটারের আগুন লাগলে সেটি বিষ্ফোরণ হয়। এতে এলাকার প্রায় সব বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের হিসাব অনুযায়ী, ১৯টি বাড়ির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব বাড়ির প্রায় ১৭৭ জন ভাড়াটিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কাউন্সিল ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করছেন। প্রতিটি বাড়ির মালিককে ৩০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে ১০ কেজি চাল, এক কেজি তেল, এক কেজি ডাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি পেঁয়াজ ও এক কেজি লবণ দেওয়া হবে।’
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের কেমিক্যাল থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একই কারণে প্রচণ্ড ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এজন্য আগুন নেভাতে একটু সময় লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা বলছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। তবে কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে, সেটি তদন্ত না করে কিছু বলা যাবে না। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার থেকে আমরা কাজ শুরু করবো। অগ্নিকাণ্ডের কারণ, এর সূত্রপাত ও কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে— সেটি তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।’-বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়