মাহমুদুল হক জালীস: সমাজে চলতে গেলে একটু আধটু ভুল সবারই হয়। সেই ভুলটিকে শুধরিয়ে না নিলে তা আরও বড় ভুলের জন্ম দিতে পারে যখনতখন। যা কিনা সামাজিক জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। শেষ মূহুর্তে এসে অনুশোচনা করলেও কোনো লাভ হয় না। যা হবার তা আগেই হয়ে যায়। তাই অপরাধটাকে বেশি বাড়তে না দিয়ে অঙ্কুরেই তা বিনাশ করতে হবে। অপরাধবোধ থেকে নিজেকে সামলে নেওয়াটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় মোটেও। তবে এজন্য সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
মানব জাতির সৃষ্টির ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মানুষের শুরুটাই হয়েছে ভুল দিয়ে। এই পৃথিবীতে মানুষ এসেছে অনেকটা ভুলের মাশুল দিতে। এখানে ভুলে উর্ধে কোন মানুষ নেই। আগেই বলেছি এখানে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে জীবনে কোন ভুল করেনি। যদি কোনভাবে ভুল করে থাকুন তা লুকিয়ে রাখার কিংবা অস্বীকার করার চেষ্টা না করে ভুল স্বীকার করাই শ্রেয়। ক্ষমা চাওয়া মানে নিজে ছোট হয়ে যাওয়া নয়। ক্ষমা সবাই চাইতে পারে না। যার মধ্যে বিবেক ও মনুষ্যত্ববোধ আছে কেবল তারাই ক্ষমা চাইতে পারে। যদি আপনি ভুলটিকে শুধরে নেওয়ার জন্য ক্ষমা না চান তাহলে এই ভুল বা অপরাধবোধই আপনাকে ঠুকরে ঠুকরে খাবে। আপনাকে নতুন কোনো ভুল বা অপরাধের দিকে ঠেলে দিবে। একমাত্র বোকারাই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে। বুদ্ধিমানরা সব সময় নিজের ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে। ভুলের পুনরাবৃত্তি থেকে বিরত থাকে। তাই একই ভুল বা একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ইসলাম মনে করে, ক্ষমার মাধ্যমে জান্নাত নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমালাভের জন্য প্রতিযোগিতা করো আর প্রতিযোগিতা করো সেই জান্নাতের জন্যে যার বিশালতা আসমান-জমিনের বিশালতার সমান, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে। (জান্নাতের উত্তরাধিকারি ভাগ্যবান তারা) যারা স্বচ্ছল কি অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় নিজেদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আর যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেয়। (এটা সৎ মানুষের গুণ) আর সৎ মানুষদেরকে সবসময় আল্লাহ ভালোবাসেন। সূরা আল ইমরান :(১৩৩-১৩৪)
এ বিষয়ে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় দান করলে সম্পদ কমে না, আর ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন। (সহিহ মুসলিম)
হজরত রাসুলে কারিম (সা.) ছিলেন ক্ষমা ও উদারতার শ্রেষ্ঠ নমুনা। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আল্লাহর রাসুলের কাছ থেকে ক্ষমার মহৎ গুণটি যথার্থই আয়ত্ত্ব করতে পেরেছিলেন। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তার জীবনে ক্ষমার গুণটি অধিক উজ্জ্বলতায় প্রতিভাত হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :