শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৪৩ সকাল
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৪৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাকাতির স্থানে মদ খেতে এলেন ৬০ বছর পরে ব্যাংক ডাকাত!!!

ডেস্ক রিপোর্ট : আজ থেকে ৬০ বছর পূর্বের ঘটনা, ১৯৫৮ সালে কানাডার ইমপেরিয়াল ব্যাংক অব কানাডা (যা বিলুপ্ত) থেকে হাজার হাজার কানাডিয়ান ডলার চুরি হয়ে যায়। সেই চোর আর কেউ না, খোদ ব্যাংকটির প্রধান হিসাবরক্ষক মিঃ বোনে লেস্টার জনস্টন। সীমান্তপারী দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে আলোচনায় চলে আসেন, সেই সময়ের কুখ্যাত ও বিখ্যাত বনে যাওয়া মিঃ জনস্টন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ অপরাধীকে ধরতে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও পোস্টার ছপিয়ে ছিল। পোস্টারে অপরাধীর শাররীকগঠনসহ নানা বর্ণনা উল্লেখ করা হয়। উচ্চতা, ওজন, ব্যক্তিত্ব, ফিটফাট, নাইটক্লাবে আশক্তি, শ্যাম্পেইনখোর, এবং নারীদের প্রতি বিশেষ মোহসহ নানা বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছিল পোস্টারে।

৬০ বছর পরে মিঃ বোনে লেস্টার জনস্টন,   (৮০ উর্ধ্ব বয়সে) সেই অপরাধ স্থলে আসেন। তাকে মানুষ শ্যাম্পেনখোর হিসেবেও চিনত। এখন সেই ব্যাংক আর ব্যাংক নেই, এখন সেই স্থানে গড়ে উঠেছে বিখ্যাত রেস্তোরাঁ, নাম তার রিভেরা।

রেস্তোরাঁর পরিচালক এলেক্স মেকমহন বলেন, গত ১০ তারিখ দুপুরে মিঃ জনস্টন তার পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে রিভেরায় আসেন, ঠিক যেই স্থানে ছিল ব্যাংকের ভল্ট, সেখানে তারা বসলেন।

রেস্তোরা পরিচালক মিঃ ম্যাকমহন আরো বলেন, আমরা এমনভাবে পরিবেশ তৈরি করি, যাতে স্মৃতি রোমন্থনে এবং সেই সময়কার কথা স্বরণ করতে তাকে সাহায্য করে। যাতে আমাদেরকে সেই সিনেমেটিক অভিজ্ঞতার গল্প আমাদের বলতে পারে।

রিভেরা রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ ইন্সটাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করে, সেখানে লেখা হয়, একজন মানুষ একদা ২ লক্ষ ৬০ হাজার কানাডিয়ান ডলার চুরি করে ছিল। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১.৭ মিলিয়ন ইউএসএ ডলার অর্থাৎ ১৪ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা (১ ডলার = ৮৪ টাকা) নিয়ে পালিয়ে ছিল। আজ সেই একই স্থানে এসেছেন তবে ঘটনার ৬০ বছর পরে। স্থানটিতে আর ব্যাংক নেই, গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ এবং পানশালা।

প্রথমে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেওয়া, জেল খাটা এবং অতিতের অপরাধ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মিঃ জনস্টেইন।

জনস্টেইনের বন্ধু মেইট আইসার বলেন, এখানে জনস্টেইনের অনেক অতীত স্মৃতি রয়েছে। সেই স্মৃতির পরতে পরতে রয়েছে উত্তেজনা, নাটকীয়তা, ভয় ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সেই সময় হয়তো ফিরে আসবে না, কিন্তু সময়ের ফলাফলটা এখনো তাকে বয়ে বেড়ায়।

আইসার আরো বলেন, ঘটনাটি ছিল অপ্রত্যাশিত ও ধ্বংসাত্বক। আমি মনে করি ও বিশ্বাস করি, কেন এখনো মানুষ সেই বহু পুরনো আলোচিত অপরাধের কথা মনে রেখেছে। কারণ একটা-ই, বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় এভাবে চুরি করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার।

কোনো প্রকার ভনিতা না করেই বলি, প্রত্যেক মানুষই চায় এমন কিছু সে করবে, যাতে মানুষ তাকে যুগ যুগ মনে রাখবে। সেটা যেভাবেই হোক, যে করেই হোক।

১৯৫৮ সালে ২৫ বছর বয়স ছিল মিঃ জনস্টন। তিনি ইমপেরিয়াল ব্যাংক অব কানাডার প্রধান হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। সেই সময়ের পত্রিকায় রিপোর্ট অনুযায়ী মিঃ জনস্টন দুই লক্ষ ষাট হাজার কানাডিয়ান ডলার চুরি করেছিলেন।

২০১৩ সালে ওটোয়ার সিটিজেন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিঃ জনস্টন বলেন, আমি শুক্রবারদিন একটি ব্যাগে অর্থগুলো গুছিয়ে রাখি, রাতে আমার ব্যক্তিগত চাবি দিয়ে ব্যাংকের ভল্ট থেকে সেই টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাই। তারপর শনিবার এবং রবিবারে আমার স্ত্রী ও মাকে নিয়ে ডিনার করি।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও পোস্টার লাগানোর আগের দুই সপ্তাহ সমানে টাকা উড়িয়ে বেড়াই। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই টাকা খরচ করতে থাকি। সবরকম বিলাসি জীবনই উপভোগ করি।
আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যে বিজ্ঞাপন ও পোস্টার ছাপা হয়েছে, সেখানে আমাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষনা করা হয়েছিল।


১৯৫৮ সালের এপির একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তি পুলিশকে জানায়, ডেনভার নাইটক্লাবে মিঃ জনস্টনের মত একজনকে দেখা গেছে। তারপর পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে। আমি অবাক ও বিশ্মিত হয়েছিলাম অর্থের কারণেই সব অনর্থ হচ্ছে। যদিও কর্তৃপক্ষ মিঃ জনস্টন, তার পিতা এবং তার পরিবারের কাছ থেকে দুই লক্ষ কানাডিয়ান ডলার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।

টাকা চুরির অপরাধে মিঃ জনসনের চার বছরের সাজা হয়েছির। তবে দুই বছর পরে পেরোলে মুক্তি পায়। এতসব ঘটনার পরেও একটি আর্থিক প্রতিষ্টানে চাকুরি পেয়েছিল মি জনস্টন।

বর্তমানে সে পশ্চিম ওটোয়ার ছোট্ট শহর রেনফ্রোতে অবসরকালীন দিনাতিপাত করছে। ২০১৩ সালে দ্যা সিটেজেন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেই ক্ষ্যাতির বিড়ম্বনার কারণে মানুষ তার কাছে বিয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়। আমি তো কাউকে গুলি করিনি, আমি শুধু ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করেছি মাত্র। বলুন তো, ব্যাংক কে পছন্দ করে?

সম্প্রতি, মিঃ জনস্টন ব্যাংকটি দেখার ইচ্ছা পোষণ কথা তার বন্ধু আইসারকে জানায়। অতঃপর তার বন্ধু আইসার অনলাইনে রিভেরা হোটেলে বুকিং দেয় এবং মিঃ জনস্টনকে সেই ব্যাংকের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

মিঃ মেকমহন ওয়াইন পরিচালক বলেন, অ আমার প্রভু, সেই লোক আসবে? (যে কি-না হাজার হাজার টাকা চুরি করেছে)!!

যখন মিঃ জনস্টন তার পরিবার বন্ধুদের নিয়ে লাঞ্চ করতে রেস্তোরায় আসলেন, কর্তৃপক্ষ বিশেষ ওয়াইন ও ককটেল দিয়ে আপ্যায়ন করেন।

তাদেরকে ওয়াইনরাখা বিশেষ কক্ষে তাদেরকে আমান্ত্রণ জানানো হয়। আর সেখানেই ওয়াইন পান করতে করতে তার পুরোনো গল্পগুলো বলতে থাকে।
মিঃ মেকমহন বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি যে কাজটি করেছিলেন, তা আপনার কাছে কেমন মনে হয়? আপনি কি আবার সুযোগ পেলে কী করবেন?
মিঃ জনস্টন বলেন, আমি আমার অপরাধের জন্য অনুতপ্ত নই বরং খুশি, আবার সুযোগ পেলে আমি আবারো করবো। যা চলে গেছে তা-তো আর ফিরে আসবে না। যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ, সেই স্বাধীন ও আনন্দের দিন জীবনে আর কখনো ফিরে আসবে না আমার জীবনে।
যে ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করেছিলেন, ৬০ বছর পর, ঠিক সেই স্থানে জীবনে শেষ লগ্নে এসে আনন্দঘন কিছু সময় কাটালেন এবং পূর্বস্মৃতি রোমন্থন করলেন। চলে যাওয়ার আগে তিনি তার মনের আনন্দে ইটের প্রাচিরে তার নাম ও বন্দী নাম্বারটি লিখে রেখে গেলেন। নিউইয়র্কটাইমস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়