শিরোনাম
◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মুজিবনগর দিবস বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০১৮, ০১:২৬ রাত
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৮, ০১:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চামড়া কেনায় উৎসাহ নেই ট্যানারি মালিকদের

আরিফুর রহমান তুহিন: চিরচেনা রুপে নেই ট্যানারি পল্লী। প্রতি বছর কোরবানির পরের দিন সেখানে কাঁচা চামড়া নিয়ে ব্যাস্ততা থাকলেও এবছর উল্টো চিত্র। সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্প নগরী অনেকটাই নিরব। দেখা মিলেনি কাঁচা চামড়ার ট্রাকের সারি। নেই শ্রমিকদের কাজের চাঞ্চল্য। এই শিল্পের অস্থিরতার কারণে এখনো ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারেনি ট্যানারি মালিকরা। এতে হুমকিতে রয়েছে কোরবানির পশুর চামড়ার ভবিষ্যৎ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাভারের নতুন চামড়া শিল্প নগরীতে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবগুলো ট্যানারিতেই চলছে নিরবতা। নেই আগের ঈদের পরেরদিনের মত কর্মব্যস্ততা। মাঝেমাঝে দু-একটি ট্রাকে কিছু চামড়া কারখানাগুলোতে প্রবেশ করছে। যে সামান্য পরিমান চামড়া কারখানাগুলোতে প্রবেশ করছে তা অল্প সময়ের মধ্যেই লবনজাত করা সম্পন্ন হয়েছে। ফলে অনেকটা অলসতায় পার করছেন সেখানকার কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে সাভারের অ্যাপেক্স ট্যানারির প্রবেশধার ছিল তালাবদ্ধ। ভিতরে কাঁচা চামড়ায় লবন দেয়ার স্থানে অল্প কিছু চামড়া স্তুপ করে রাখা ছিল। সংখ্যাংয় মাত্র ২২ হাজার পিস। এর কিছু লবন দেয়া আবার কতেক লবন ছাড়া। কর্তৃপক্ষ জানান, এর বেশিরভাগই বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে আসা চামড়া। তাই মানবতার খাতিরে কিনে নিয়েছেন। সকাল ১০টা নাগাদ লবন দেয়া হয়নি এমন চামড়ায় ৭ জন কর্মী সেই লবন দেয়া শুরু করে। তবে সেগুলোর পরিমাণ এতটাই সামান্য যে এক ঘণ্টারও কম সময়ে লবন দেয়া শেষ। শ্রমিকরা বাকি সময় গল্প করে কাটিয়ে দিচ্ছেন। অ্যাপেক্স ট্যানারি সাভারের সব থেকে বড় ট্যানারি। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৪ কোটি বর্গফুট চামড়া।
ব্লুওয়ার ট্যানারির ফ্লোর ইনচার্জ মো. রিপন মিয়া বলেন, তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার চামড়া ক্রয় করেছেন। নতুন চামড়াগুলো ঈদের দিন সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্থান থেকে সাভারের কারখানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সকাল থেকে চামড়াগুলো লবন দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা শুরু হয়েছে।

অ্যাপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক আবদুল মাজেদ আমাদের সময় ডটকমকে জানান, এবারে তারা চামড়া নিয়ে খুব অস্বস্তিতে রয়েছেন। এখনো তারা ক্রয়ের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করতে পারেননি। আগের বছরের চামড়া এখনো গোডাউনে রয়েছে। ক্রেতারা এখনো নতুন চুক্তিপত্র করছেন না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ি ধাপে ধাপে চামড়া কিনবেন।

আবদুল মাজেদ জানান, বর্তমানে তাদের সবথেকে বড় সঙ্কট ক্রেতা না থাকা। অনেক গলাবজি করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (বিসিক) তাদেরকে আধুনিকায়নের নামে হাজারীবাগ থেকে সাভারে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিসিক এখনো পরিবেশবান্ধব শিল্প নগরী গরে তুলতে পারেনি। সিটিপি প্লান এখনো অকেজো। ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনছে না। চীনের ক্রেতারাও পণ্য কিনছে কম। আবার অনেক সময় চুক্তি করেও ঠিকমত এলসি খুলছে না তারা। ফলে প্রায় সকলের কারখানায়ই পুরাতন চামড়া রয়ে গেছে। ফলে পর্যাপ্ত পুঁজিরও অভাব রয়েছে। এমতাবস্থায় চাহিদার বেশি নতুন চামড়া কিনে ঝুকি নিতে চান না তারা।

তাহালে চামড়া শিল্পের ভবিষ্যত কি? কেনইবা সবাই কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাজিদ জানান, সরকার যদি ট্যানারিকে সত্যিকারে আধুনিকায়ন করে এবং পোশাক শিল্পের মত যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে এটিকে পরিচালনা করে তাহলে বাংলাদেশের এই খাতে বিপ্লব ঘটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। সরকার দেশের কথা চিন্তা করে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন এই আশাই তারা বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ট্যানারি মালিক জানান, চামড়া খাতের এই বিপর্যয় কোনো অস্বাভাবিক না। সরকারের সিদ্ধান্তেই এমন হয়েছে। বিসিকের কাজ হলো মোমবাতির কারখানা খোলা (উদাহরণ দিয়ে বলেন)। অথচ তাদেরকে দিয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাতকে পরিচালনা করাতে চাইছে। ট্যানারি পরিচালনার জন্য বিসিকের লোকবল ও যোগ্যতা কোনটিই নেই। এছাড়া তাদের দুর্নীতিতো আছেই। এখনো সিটিপি প্লান চালু করতে পারেনি। যেখানে সেখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। যা ধলেশ্বরি নদীতে গিয়ে পরছে। আগে বুড়িগঙ্গা ধ্বংস হয়েছে এবার বিসিকের ব্যর্থতার বুড়িগঙ্গার মাতা ধলেশ্বরি ধ্বংস হবে। লাভ হয়েছে এটুকু।

আর্থিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে ওই ব্যবসায়ি জানান, তাদেরকে এখনো সাভারের জমি রেজিস্টি করে দেয়া হয়নি। ফলে ব্যাংক থেকে তারা লোন নিতে পারছেন না। অথচ দ্রুততার সাথে সাভারে স্থানান্তরের কারণে তাদের অনেক অর্থ খরচ হয়েছে। এছাড়া আগের অনেক চামড়া বিক্রি করতে না পারায় সেখানে অনেক পুঁজি আটকে আছে। তাই এবার বুঝেশুনে হিসেব কষে চামড়া কিনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, সারাদেশে বছরে প্রায় ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। তবে প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ি এই বছর চামড়ার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। তবে মোট চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় কোরবানির ঈদে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়