খুলনা প্রতিনিধি: দীর্ঘ চার দশক ধরে পশুর নদীর ভাঙনে বিলিন হচ্ছে বসতবাড়ি। এসব ঘর-বাড়ি গিলে খাচ্ছে খুলনার দাকোপ উপজেলা চালনা পৌরসভার নলোপাড়ার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর নদী।
ভাঙনের কবলে বিস্তীর্ণ এলাকা এখন নদীতে। হারিয়ে গেছে শত শত বিঘা ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, বেড়ি বাঁধ এবং বিলিন হয়েছে বসত-ভিটা। নিঃস্ব হয়েছে হাজারও মানুষ। সেখানে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, সেটিও এখনও ঝুঁকিতে। এদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে নলোপাড়ায় পশুর নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক বছর ভাঙনে প্রায় ৭০টি পরিবারকে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। এমন অবস্থায় পৌরসভার নলোপাড়ার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পশুর নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নদীর খরস্রোতে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে কয়েকটি ঘর-বাড়ি। তীব্র ভাঙনের সামনে নদীর পাশে বসবাস করছে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। ভাঙনের শিকার নলোপাড়ার বাসিন্দা মো. বাদশা গাজী (৩৬) বলেন, পশুর নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা প্রায় বিলিন হওয়ার সম্মুখে। নদীতে জোয়ার হলে পানিতে ডুবে যায় ঘর-বাড়ি। তখন খুব ভয়ে থাকতে হয়। তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় হলে এখানে এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু ভোট হয়ে গেলে আর ফিরে দেখে না আমাদের বাড়ি আছে কিনা?
পশুর নদীর ভাঙনে তিনবার বিলিন হয়েছে মো. নুরুল হকের (৭২) ঘরবাড়ি। তিনি বলেন, যেভাবে ঘর-বাড়ি গিলে খাচ্ছে পশুর নদী। তাতে এখানে আর বসবাস করা সম্ভব নয়। খরস্রোতে সম্প্রতি ভেঙে গেছে আমাদের বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। তিন দফায় পশুর নদীর ভাঙনে নিজস্ব ভিটা বাড়ি বিলিন হওয়ার পর এখন অন্যের বাড়িতে ভাটিয়া হিসেবে থাকতে হচ্ছে।
নদীর পাশে ট্রলার মাঝি নলোপাড়ার বাসিন্দা মহাসিন সরদার (৫০) বলেন, থাকার ঘরটি নদীর তীরে বাঁশ দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। নদীতে জোয়ার হলে নির্ঘুম কাটে রাত। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বসে থাকতে হয় অনেক সময়। আর যখন ভাঁটা (পানি কম) হয়ে যায় তখন ঘুমাই। ইসমাইল শেখ (৫৫) নামে একজন বাসিন্দা নদীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলেন, বর্তমানে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জোরে হাঁক ( আওয়াজ দিয়ে ডাক) দিলে যতদূর হাঁকের আওয়াজ শোনা যেত, ততদূর পর্যন্ত তাদের বাপদাদার সম্পত্তি ছিলো। তা সব এখন পশুর নদীর পেটে চলে গেছে। ভাঙনের শিকার পশুর নদী পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, নদী গর্ভে তাদের সব চলে গেছে। ফসলি জমি, বসতভিটাসহ সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। পৌর কাউন্সিলর মো. আইয়ুব কাজী বলেন, পৌরসভার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া পশুর নদীর ভাঙন বহুদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা পৌরসভায় বরাদ্দ নেই।
বিষয়টি জানার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দাকোপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আবুল হোসেন বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের জন্য পৌর মেয়র একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাজেট পেয়েছেন। সেটি নিয়ে কিছুদিন আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সেটি কতদূর এগিয়েছে তা আমার জানা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :