শাকিল আহমেদ : এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর পশুর হাট গুলোতে প্রথমদিকে দাম চড়া থাকলেও শেষ দিকে দাম একেবারেই পড়ে যায়। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হয়েছে আবার অনেকেই পশু নিয়ে ফিরে গেছে। তবে ব্যবসায়ীদের অতি লাভের মনোভাবের কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করে অনেকেই।
এবার কোরবানি পশুর হাটগুলোতে পর্যাপ্ত দাম পাননি ব্যবসায়ীরা তাই হতাশ হয়ে ফিরেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ পশু না বেচে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। বেশি লাভের আশায় যারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দিয়েছেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় পশু বেশি থাকায় এরকম দরপতন হয়েছে। তাদের মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর তারা একটু বেশি পশু পালন করেছেন। কারণ, গত ঈদে পশুর সংকট দেখা দেয়। তাছাড়া এ বছর ১৫ আগস্ট ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে যায়। এ কারণে একটু চাহিদা বেশি থাকবে বলে তাদের ধারণা ছিল। এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে ঈদ বাজারে পশুর দাম বাড়বে। তখন বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাকে।
দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুদ রয়েছে জানিয়ে গত রোববার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি চার লাখ ২২ হাজার। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৬ সালে দেশে কোরবানি হয়েছে এক কোটি তিন লাখ (সব ধরনের পশু)। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল এক কোটি পাঁচ লাখ। সে অনুযায়ী এবার পাঁচ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও এক কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট। এ অবস্থায় ভারত ও মিয়ানমার থেকেও পশু এসেছে। এমন খবরের পরও ব্যবসায়ীরা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু ধরে রেখেছেন।
বাংলাদেশ গবাদি পশু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো.মজিবর বলেন, গাবতরি হাটের শুরু থেকে আমি এই হাটে ব্যবসা করছি, তবে গত ৩০ বছরেও এমন খারাপ বেঁচাকেনা হয় নাই। এর আগে খারাপ হলেও ৬০ থেকে ৭০ ভাগ পশু বিক্রি হতো এবার ঢাকায় ২০ ভাগ বিক্রি হয়েছে। প্রত্যেকটি হাটে অতিরিক্ত পশু রয়ে গেছে। গৃহস্থ ব্যবসায়ীরা লাভবান হলে বেপারিরা ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে।
কয়েক জন ব্যবসায়ী বলেন, প্রথম কয়েকদিন পশুর চাহিদা ছিল যথেষ্ট। তখন কোরবানিদাতাদের অনেকেই অপেক্ষাকৃত বেশি দামে পশু কিনেছেন। আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেক ব্যবসায়ী তখন পশু বিক্রি করেনি। তাদের আশা ছিল, শেষ মুহূর্তে আবার পশুর সংকট দেখা দেবে। তখন বেশি দাম পাওয়া যাবে। তবে ব্যবসায়ীদের এই ‘ফাঁদ’ সরকার নজরে রাখছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ জন্য সীমান্তেও কড়াকড়ি ছিল না। ভারত ও মিয়ারমার থেকে পশু আসতে থাকে।
ব্যবসায়ীদের মতে, এই ঈদকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১৬ থেকে ২০ লাখ পশু এসেছে দেশের বাইরে থেকে। এই অতিরিক্ত পশু যুক্ত হয় দেশের কোরবানির বাজারে। এ খবর পেয়ে যান ক্রেতারাও। ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানী হাটে এসব গরু প্রবেশ করতে থাকে। এর পরেই শুরু হয় দরপতন। আগের দিন সোমবার (২০ আগস্ট) মাঝারি আকারের যে গরুর দাম ওঠে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পরদিন সেই গরুর দাম হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এ অবস্থায় বেশি দামের আশায় যারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দেন তাদের মাথায় হাত পড়ে।
কমলাপুর হাটের পশু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর পশুর পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। দেশের খামারগুলোতেও ভালো উৎপাদন হয়েছে। গত ঈদে পশুর কাড়াকাড়ি দেখে এ বছর আমরা লাভের আশায় একটু বেশি করেই পশু পালন করেছি।’ তিনি জানান, তাছাড়া ঈদ ও ১৫ আগস্ট প্রায় সমসাময়িক সময়ে পড়ে যাওয়ায় চাহিদা একটু বেশি হয়েছে। ১৫ আগস্টেও অনেক গরু জবাই হয়েছে। এজন্য তারা শেষ মুহূর্তের জন্য পশু রেখে দিয়েছেন। ভালো দাম পেয়েও আরও বেশি দামের আশায় বিক্রি করেননি। শেষ মুহূর্তে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অনেক পশু এসেছে। সে কারণে দাম পড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর হাটগুলোতে শেষ সময়ে যারা এসেছেন, তারা কম দামে পশু পেয়ে ফিরছেন হাসিমুখে। আর কাক্ষিত দাম না পেয়ে বিক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে।
গাবতলী হাটের ইজারাদার মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ‘যেসব বিক্রেতা বেশি দামের আশায় প্রথমে পশু বিক্রি করেনি তারা, পরে পশুর দাম পাননি। যারা বিক্রি করে দিয়েছেন তারা মোটামুটি লাভবান হয়েছে। শেষ মুহূর্তে বাজারে অনেক গরু এসেছে। তখন চাহিদা কমে গেছে, ফলে দাম পড়ে যায়। এ কারণে ব্যবসায়ীরা পশুর দাম পাননি।
আপনার মতামত লিখুন :