জান্নাতুল ফেরদৌসী : ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলার উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের খুন করা। প্রধান অতিথি দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্যের শেষের দিকে উপযুপরি গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এর পরিকল্পনা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ ৪টি বাসায়। সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা আর জঙ্গিদের সহায়তায় এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন চার দলীয় জোটের কয়েকজন নেতা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার নথিপত্রে ওঠে আসে এসব তথ্য।
সিআইডির চার্জশিটের তথ্য, ১২ জঙ্গি তিন ভাগে হয়ে অবস্থান নেয় সমাবেশ মঞ্চের তিন দিকে। বিকাল ৫টা ২২ মিনিটের এ হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমান, শেখ হাসিনার দেহরক্ষী মাহবুবসহ নিহত হন ২৪ জন আর আহত শেখ হাসিনা, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ দলের ৩,শ বেশি নেতাকর্মী।
আপস জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের দেয়া জবানবন্দিতে আছে, হাওয়াভবনে তিনি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান হারিছ চৌধুরী, জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদকে দেখেছেন। হত্যা পরিকল্পনা জানানোর পর তারা মুফতি হান্নানকে কাজটি করতে আশ্বস্ত করেছিল। আর জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক সংসদ সদস্য কায়কোবাদ ও কমিশনার আরিফের।
পরে দফায় দফায় বৈঠক হয় মিন্টু রোড, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে।জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ ও পাকিস্তানের হরকাতুল মুজাহিদীনকে দেয়া হয় গ্রেনেড হামলা দায়িত্ব। সহযোগিতা করেন সে সময়ের বেশ কজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
সিআইডি এর অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ বলেন, এই পরিকল্পনাতে তারেক রহমান, লুৎফর রহমান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টুসহ আরো অনেকেই যুক্ত ছিলেন।
ধানমন্ডিতে চূড়ান্ত বৈঠক হয় ১৮ আগস্ট, বিএনপির দুই মন্ত্রী বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা আহসান উল্লাহ কাজল, মওলানা আবু তাহের, মওলানা তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নানের উপস্থিতিতে। হামলায় সহযোগিতা করতে বলা হয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফ আর হানিফ পরিবহনের মালিক- হানিফের ওপর। গ্রেনেড সরবরাহ করেন মওলানা তাজউদ্দিন, তার সহযোগি ছিলেন কাশ্মীরের নাগরিক জঙ্গি মাজেদ ভাট।
মামলার নথিতে আছে, এই মাজেদই পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড এনে, হানিফ পরিবহনের মাধ্যমে পৌঁছে দেন ধানমন্ডির আবদুল সালাম পিন্টুর বাসায়। ২০ আগস্ট আবু জান্দাল ও কাজল ১৫টি গ্রেনেড নিয়ে আসে বাড্ডার মুফতি হান্নানের বাসায়। এ হামলার অর্থ সহায়তা দেয় বিদেশি এক গোয়েন্দা সংস্থা।
সিআইডি এর অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ আরো বলেন, এ মামলার কিছু আসামি সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
এই মামলা দুইবার তদন্ত করে সিআইডি। মোট আসামি ৫২ জন,যার মধ্যে ১৮ জন এখনও পলাতক। পুলিশ বলছে, সব অপরাধীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে তারা। সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি
আপনার মতামত লিখুন :