শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ০১:২৪ রাত
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ০১:২৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কুরবানি : ইতিহাসের নয়া পাঠ

হাবীবুল্লাহ সিরাজ: কুরবানী একটি উপাখ্যান। একটি ইতিহাস। বিশাল একটি স্মৃতি এ্যালবাম। যে এ্যালবামের পাতায় পাতায় আছে আত্ম পরীক্ষা। আত্মগঠনের ঈমানী প্রচেষ্ঠা। আত্ম শুদ্ধতার বিশুদ্ধ চেতনা। স্মৃতি এ্যালবামের বিশাল পাঠজুড়ে আছে আগুন ইমতিহান। কখনো নমরুদের প্রজ্জ্বলিত আগুন সমস্যা। কখনো স্বীয় স্ত্রী নিয়ে জালিমশাহীর দরবারে অস্বস্থি অবস্থা। আবার কখনো স্ত্রী সন্তান বিয়োজন পরীক্ষা। ফল ফসল জনবিহীন প্রান্তরে স্ত্রী রেখে আসার অসহ্য যন্ত্রণা। কুরবানি ইতিহাসের মহানায়ককে বার বার শতকোটি অযুতবার পড়তে হয়েছে ইলাহি পরীক্ষায়। আরশের মালিক তার প্রিয় মাহবুবের পরীক্ষা নিয়েছেন আবার সফলতার দিয়েছেন অভূতপূর্ব। ইতিহাসের মহান মহানায়ক জাতির জনক হযরত ইবরাহিম আ. সকল পরীক্ষায় সফলতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তার সকল পরীক্ষার শেষ পরীক্ষাটাই ছিলো কুরবানি। পূর্বের সব পরীক্ষার সফল জয়ের পর আসলো কল্পনাহীন বর্ণনাবিহীন আত্মবিসর্জনমূলক পরীক্ষা কুরবানি।

হযরত ইবরাহিম আ. দ্বিধাহীন চিত্তে বহুদিনের সাধনালব্ধ কলিজা টুকরো ছেলে ইসমাইলের গলায় ছুরি চালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। ভাবলেন না একবার পিতা হয়ে ছেলের গলায় ছুরি চালানোর বিষয়টা কতো বড়ো। কতো দূরের। জাতির পিতা তামাম দুনিয়ায় তার আগত অনাগত ছেলেদের শিক্ষা দিলেন যে- আল্লাহর হুকুমের সামনে মাথা ঝুঁকানোই মুমিনের সাফল্য ও সার্থকতা। চাই হুকুম যতো কঠিন থেকে কঠিন হোক । যদি বলা হয় পিতা হয়ে ছেলের গলায় ছুরি চালাতে হবে বা ছেলে হয়ে পিতার গলায় ছুরি চালাতে হবে যদি আল্লাহ আদেশ করেন। ছেলে হয়ে পিতার তরবারির নিচে গলা দিতে হবে বা পিতা হয়ে ছেলেকে জবাই করতে হবে যদি আল্লাহ আদেশ করেন। এটাকেই বলে ইসলাম আর যে বাস্তবায়ন করতে পারে তাকেই বলে মুসলমান।

কুরবানি ইতিহাসের গভীরে যদি লক্ষ্য করি দেখবো এখানে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। বিষয়গুলোর সাথে তাওহিদ তথা একাত্তবাদের প্রশ্ন জড়িত। মহান আল্লাহ তার প্রিয় খলিলকে কুরবানির মতো কঠিন আদেশ দিয়েছেন। তিনিও অবলীলায় বাস্তবায়ন করেছেন চূড়ান্তভাবে একনিষ্ঠতার মহা পরিচয় দিয়ে। এখানে যুক্তির প্রশ্ন ছিল। সামাজিকতার প্রশ্ন ছিলো। মায়া মুহাব্বতের প্রশ্ন ছিল। স্ত্রীর মন রাখা না রাখার প্রশ্ন ছিল। বৃদ্ধ বয়সে সন্তান প্রাপ্তি সেই সন্তানকেই নিজ হাতে জবাই! শত প্রশ্নের উদ্রেক ছিল। কিন্তু ইবরাহিম আ. একদ-ও চিন্তা করলেন না, বিবেককে বললেন না। এখানেই পৃথিবীর ইতিহাস থমকে দাঁড়ায়। নতুন করে পৃথিবী তার ইতিহাস রচনায় হাত দেয়। অবাক করা কা- ঘটতে থাকে হযরত ইবরাহিম আ.ও ইসমাইল আ. এর মাঝে। ঘটনার বিবরণ মহান আল্লাহর জবানিতেই সেই ইতিবৃত্তটা কতোটা বাঙময়। এই অসম বিধানে তাদের কেউ কোন প্রশ্ন চালাকি বা ছলচাতুরির আশ্রয় নিলেন না। অথচ হাজারো বাহানা চতুরতা করা যেতো। শুনি সেই ঘটনার বিবরণ- ...অতপর সে পুত্র যখন ইবরাহিমের সাথে চলাফেরা করার উপযুক্ত হল, তখন সে বলল, হে প্রিয় ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখছি যে, তোমাকে যবেহ করছি। এবার চিন্তা করে বল, তোমার অভিমত কী? পুত্র বলল, আব্বাজী! আপনাকে যা নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারীদের একজন পাবেন’ আস সাফফাত ১০২।

আমরা এমন একসময় পৃথিবীতে বসবাস করছি যে, হযরত ইবরাহিম আ. এর ঘটনা নিয়ে সমাজে বুদ্ধিতে কাচা বিবেকে পচা ধর্মহীন একদল লোক লাফালাফি করছে। আমাদের হাস্য উপাদান তৈরি করে। -আমাদের কুরবানি নিয়ে যখন একহিন্দু ডা. কলাম লেখে বলে হযরত ইবরাহিম আ. ইসলামইলকে কুরবানি করেননি করেছেন ইসহাককে। প্রশ্ন তুলা হয় কুরবানির সত্যতা নিয়ে। অবুঝ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানেরা চায় কুরবানি বন্ধ! বন্ধ করা হোক। পৃথিবীর আবার নয়া কুরবানি দেখুক। ইবরাহিম আ. এর কঠিন শিক্ষার বাস্তবায়ন দেখবে। ঘরে ঘরে কুরবানির ধ্বনি ওঠবে। পদলিত হয়ে পড়বে জামারার ওই শয়তানের মতো। তখন পশু কুরবানিতে আমাদের কুরবান শিক্ষা সীমাবদ্ধ থাকবে না। মানুষরূপী জানোয়ার কুরবানির দীক্ষাটাও সমাজে সমাজে চালু হয়ে যাবে।
আজ আমাদের সমাজে কুরবানির এই শিক্ষাটাই নেই। পশু কুরবানি করে ঠিক কিন্তু পশুত্ব কুরবানি করে না। আর একারণে আমাদের কাছে কুরবানি আসে কিন্তু কুরবানির শিক্ষা তথা তাকওয়া আসে না, অর্জন হয় না। অথচ কুরবানিকে দেয়া হয়েছে তাকওয়ার জন্য। অর্থের ব্যয়ে, সময়ে ব্যয়ে, শ্রমের ব্যয়ে কুরবানি যদি হয়ে যায় লোক দেখানো সর্বস্ব। তাহলে অন্তর পরিবর্তন হবে না। সমাজ পরিবর্তন হবে না। অযথা বিলাসিতায় পরিণত হবে আমাদের মানিত কুরবানি ইবাদত। তাই কুরবানিদাতাসহ সকলকে আবার পড়তে হবে, বুঝতে হবে, বোধগম্যে আনতে হবে সুরা হজের ৩৭ নং আয়াত। তাতে বলা হয়েছে। শোন মুসলামান কুরবানির পশুর রক্তও আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না, তার গোসতও আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না; তবে কুরবানিদাতার উচিত অন্তরকে কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা।

উল্লিখিত কুরআন ও হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণ হয় যে, কুরবানির ক্ষেত্রে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া, তাকওয়া অর্জনের মুখ্য বিষয়। পশুর রক্ত গোসত, হাড়, চামড়া কিছুই মূলপ্রতিপাদ্য বিষয় না। তাই কুরবানির হোক তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়