শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:৫৮ দুপুর
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ১১:৫৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিচারের অপেক্ষায় ১৪ বছর!

ডেস্ক রিপোর্ট : গ্রেনেড হামলার ১৪ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি মামলার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে একসঙ্গে হত্যার উদ্দেশে চালানো গ্রেনেড হামলার ১৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে কাল। মামলা জটিলতার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ তুলেছে।

চলতি বছর ২১ আগস্টের মধ্যে গ্রেনেড হামলার বিচার হবে বলে গত বছর ঘোষণা দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান। আগামী মাসে বিচারিক আদালত থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় আসবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ২১ আগস্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

নৃশংসতম এই হামলার ঘটনায় দায়ের করা তিন মধ্যে দুটি মামলার বিচারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দুটি মামলায় আসামি ৪৯ জন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ গ্রেনেড হামলা হয়। নারকীয় সেই হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি। তবে স্মরণকালের ভয়াবহ ও নৃশংসতম গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন তিন শতাধিক।

এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, আসামিপক্ষ থেকে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে কালক্ষেপণ করছে। কালক্ষেপণ করা সত্ত্বেও সবার সহযোগিতায় আমরা এই মামলার বিচারকাজ অনেকদূর সম্পন্ন করেছি। আশা করছি শিগগিরই এই মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করে আসামিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারব। আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষই মামলার বিচারকাজ নিয়ে গড়িমসি করছে। ২১ আগস্ট যে হামলা হয়েছে, তা কোনো সভ্য দেশই সমর্থন করে না। আমরা আশা করি, যারা সত্যিকারের দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। কিন্তু বর্তমানে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, তা অনেক দুর্বল। এই দুর্বল সাক্ষ্যে ন্যায় পাওয়া মুশকিল।

অন্যদিকে, এ সম্পর্কে আসামি আবদুস সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম তারা বলেন, মামলাটি অনেক বড়। যেখানে ৫২ জন আসামি। তাই আসামি পক্ষ একটুও অতিরিক্ত সময় নেয়নি। বরং রাষ্ট্রপক্ষ মামলা দ্রুত শেষ করতে তড়িঘড়ি করেছে। বিচার বিলম্বিত করার অভিযোগ সম্পর্কে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, সরকার পক্ষ দ্রুত বিচার শেষ করার জন্য আসামি পক্ষকে বরং পর্যাপ্ত সময় দেয়নি।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, বর্তমানে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলা দুটিতে রায়ের আগের ধাপ যুক্তিতর্ক চলমান। এ যুক্তিতর্ক শেষে হলেই রায় ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে মামলাটিতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। এর পর ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। যদিও এখন মামলাগুলোয় সর্বশেষ আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন চলমান। জানা গেছে, মামলাগুলোয় পবিত্র ঈদুল আজহার পর যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য হবে। এ আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর সব আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে তা খন্ডন করে যুক্তি উপস্থাপন করবে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি খন্ডনের পর আবার আসামিপক্ষও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির বিপরীতে যুক্তি খন্ডনের করতে পারে। এরপরই রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবে ট্রাইব্যুনাল। ফলে চলতি আগস্টে যে এ মামলায় রায় হচ্ছে না তা নিশ্চিত।

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অস্থায়ী এজলাসে বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন মামলা ২টির বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট মামলা ২টিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। তারা ২ মাস ৮ দিনে মোট ২৫ কার্যদিবসে যুক্তি উপস্থাপন করে ১ জানুয়ারি শেষ করে। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদন্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদন্ড দাবি করেন। এরপর শুরু হয় আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন।

মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। তবে তাদের মধ্যে বিচারকালীন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরিফ শাহেদুল ইসলাম বিপুলের ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাই বর্তমানে মামলা দুটিতে বর্তমান আসামি ৪৯ জন। মামলার পলাতক ৪ আসামি সাবেক ডিসি (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার ও মেজর (অব.) এ টি এম আমিনদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের ধারা না থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নেই। তাই তাদের পক্ষে যুক্তিতর্কসহ কোনো কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না।

গত বছরের ২৩ আগস্ট দুটি মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। এখন পর্যন্ত ১০৯ দিনে ৪৫ জন আসামির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। ৫১১ জনের মধ্যে ২২৫ জন সাক্ষ্য দেন। সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন ২০ জন। পরবর্তী যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন ২৭, ২৮, ২৯ আগস্ট।

যাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপিত হয়েছে তারা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপিদলীয় ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আবদুুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ ওরফে জিএম, শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মিরী নাগরিক আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা শাওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহমেদ তামিম, মইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান সুমন, মো রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাও. তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও লিটন ওরফে মাও. লিটন, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি পরবর্তীতে আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী ও খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়া ৩ তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক এএসপি আবদুুর রশীদ (যুক্তি চলমান), বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম ও রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার এসআই ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। সেসব মামলার বিচারকাজ চলছে। সেদিন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় মোট ১৩টি গ্রেনেড ছোড়া হয়। আহতদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশও টিয়ার শেল ছুড়ে মারে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই হামলার আগে ঢাকায় ১০টি বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে তারেক, বাবর, পিন্টু ও হারিস চৌধুরীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন।প্রতিদিনের সংবাদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়