শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় জমে উঠছে খড়ের ব্যবসা

মাহফুজ নান্টু : কোরবানি ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে পশু । কুমিল্লায় এবার পশুর হাট জমে উঠার সাথে সাথে জমে উঠছে খড়ের ব্যবসাও। কুমিল্লার পশুর হাটগুলো ছাড়াও নগরীর অলিতে গলিতে খড়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে খড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছে।
সূত্র জানায়, সরকারি হিসেবে কুমিল্লা জেলাসদরসহ জেলার ১৭ উপজেলায় এবার পৌনে চারশ পশুর হাট বসেছে। আর বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গরু ও মহিষের অন্যতম প্রধান খাদ্য হলো ধানের খড়। কোথায়ও বা আবার একে ন্যাড়াও বনও বলে থাকে। তবে এটি খড় হিসেবেই বেশি প্রসিদ্ধতা পেয়েছে।
রোববার কুমিল্লার বিভিন্ন পশুর হাট এবং নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর হাটের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে খড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছে মৌসুমি খড় ব্যবসায়ীরা। আর কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক খড়ের দোকান ইতিমধ্যে বসে পড়েছে।
খড় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা খড়ের ব্যবসাটি সারা বছর পেশা হিসেবে করেন না। শুধুমাত্র কোরবানি ঈদ এলেই তারা এই ব্যবসাটি করেন। কারণ হিসেবে তারা জানান, অল্প পুঁজিতে এর ব্যবসাও হয় ভাল।
কুমিল্লা নগরীর লাকসাম রোডের হোটেল সালাহউদ্দিনের সামনে খড়ের বিশাল পসরা নিয়ে বসেছে বরুড়া থেকে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মোস্তাফা। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, কোরবানি ঈদ এলেই শহরে খড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। যেহেতু শহরে খালি মাঠ বা পশুকে ঘাস খাওয়ানোর মত কোন ব্যবস্থা নেই, সেহেতু যারা কোরবানির জন্য গরু কেনেন তারা আমাদের এই খড়ের ওপর নির্ভরশীল থাকেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গৃহস্থ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে আমাদের খড় কিনে আনতে হচ্ছে। এজন্য এবার গেল বছরের তুলনায় লাভ কিছুটা কম হতে পারে। বিক্রি কেমন হচেছ জানতে চাইলে তিনি জানান, শহরের লোকেরা সাধারণত ঈদের ২/১ দিন আগে গরু কিনে। তাই এখনো আমাদের বিক্রি তেমন একটা জমে ওঠেনি। তবে সোমবার-মঙ্গলবার অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের বিক্রি হবে বলে আশা করি।
কুমিল্লা রানীর বাজার সংলগ্ন ঠাকুরপাড়া রোডে বসেছে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের মাঝিগাছা গ্রামের আবদুল জলিলের পুত্র জসিম উদ্দিন। তিনি গত কয়েক বছর ধরে একই জায়গায় খড় বিক্রি করে আসছেন। তবে ঈদ ব্যতীত তিনি এ কাজটি করেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এবার গৃহস্থরা চড়া দামে আমাদের কাছে খড় বিক্রি করছে। যে পরিমাণ খড় গেলবার এনেছি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে, এবার এর দাম রেখেছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। তাই লাভের স্বার্থে আমরাও ছোট ছোট মুঠি করে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। কেমন মুনাফা থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটিতো মাত্র দুই/তিন দিনের ব্যবসা। এ কয়েক দিনে খরচ বাদ দিয়ে আশা করি ৬/৭ হাজার টাকা থাকবে।
নগরীর রানীর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আবুল কালাম তার ডিম দোকানের সামনে খড়ের স্তুপ করে রেখেছেন। জানতে চাইলে বলেন, এটি একটি ভাল ব্যবসা। মাত্র ২/৩ দিনে ভাল ব্যবসা করা যায় আবার সময় এবং পরিশ্রমও কম হয়, তাই নিয়মিত ব্যবসার পাশাপাশি মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে খড়ের ব্যবসাটি এবার বেছে নিয়েছেন। ক্রেতারা ভালই সাড়া দিচেছ বলে তিনি জানান।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লগ্নসার গ্রামের কৃষক আবদুল করিম জানান, তিনি ইরি ধান , বোরো ধান চাষ করেন। খড়গুলো তিনি সব সময় কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এ জন্য এ খড়গুলোকে রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ যতœ নিয়ে রাখেন বলে জানান তিনি।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের মাঝিগাছা গ্রামের ইদ্রিছ মেহেদী নামের এক পাইকারি খড় ব্যবসায়ী বলেন, খড়ের চাহিদা মোটামুটি সারা বছরই থাকে। বড় বড় খামারগুলোও নিয়ে থাকে। কিন্তু বেশি মুনাফা হয় কোরবানি ঈদকেন্দ্রিক মৌসুমি খড় বিক্রেতাদের কাছেই। গেলবারের চাইতে এবার দাম কেন বেশি নিচ্ছেন এ বিষয়ে এই পাইকারি খড় ব্যবসায়ী বলেন, ধান মাড়িয়ে শুকিয়ে এই খড়গুলোকে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত প্রস্তুত করে রাখতে অনেক কষ্ট করতে হয়। তাই লাভের আশায় কষ্ট করি। লাভতো করবই।
জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া ও মাঝিগাছা এলাকায় যাদের ধানি জমি নেই এবং ধান চাষও করেন না এমন কিছু কৃষকও ধান চাষিদের কাছ থেকে খড় কিনে রাখেন। পরে এগুলো পরিচর্যা করে ঈদ মৌসুমে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা জানায়, বেশি বৃষ্টিপাত হলে খড়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। যদিও আমরা প্লাস্টিক দিয়ে রাখার চেষ্টা করি তারপরও কিছু না কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ রোডের খড় ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুছ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে হাসতে হাসতে বলেন, স্যার পত্রিকায় লিখবেন, ঈদ মৌসুমে চামড়ার ব্যবসায়ীরা যদি ব্যাংক থেকে ঋণ পায় তবে আমরা খড় ব্যবসায়ীরা পাব না কেন!
খড় ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক কুমিল্লা জিলা স্কুল শাখার ব্যবস্থাপক কাজী ফখরুল আলম বলেন, আসলে খড় ব্যবসা হিসেবে আমাদের দেশে এখনো তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। এটি খুবই স্বল্পকালীন একটি ব্যবসা। এর কোন নিশ্চয়তাও নেই। নেই কোন বীমাও। সামান্য আগুন লাগলেই সব শেষ হয়ে যাবে। তারপরেও সরকার যদি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ,তাহলে তো ব্যাংকগুলো আপত্তি করবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়