মো. সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও: কাদাপানিতে দাঁড়িয়েই কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ‘লাহিড়ী পশু হাট’ , যা এ জেলার বৃহত্তম পশুহাট সেখানে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , হাটের বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টিতেই হাটে পানি জমে যায়। আবার বৃষ্টি শেষ হলেই কাদায় একাকার হয়ে যায় হাটের আশপাশ। উপায়ন্তর না পেয়ে , কাদাপানিতে দাঁড়িয়েই কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের।
ঐতিহ্যবাহী লাহিড়ী পশু হাটটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ভটভটি, নছিমন-করিমন ও পিকআপ ভ্যান রেখে বিক্রেতারা পশু নিয়ে যাচ্ছেন হাটের ভেতরে। হাটের ভেতর ঢুকতেই বিক্রেতারা পায়ের স্যান্ডেল-জুতো খুলে হাতে নিচ্ছেন। এরপর হাটের কাদাপানি মাড়িয়ে পশুকে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের নির্ধারিত স্থানে। হাঁটাচলার সময় বিক্রেতাদের পা ৬ ইঞ্চি থেকে ১ ফুট পর্যন্ত কাদার মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এসবের মধ্যেই চলছে পশু বেচাকেনা।
পাশ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলা থেকে লাহিড়ী হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা খাদেমুল ইসলাম বলেন, একদিকে হাটে পশুর দাম অনেক বেশি, অন্যদিকে পুড়ো হাট জুড়েই কাদাপানির ভোগান্তি। কোরবানির পশু কিনতে এসে বিপদে পড়ে গিয়েছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানালেন।
ঠাকুরগাঁও শহর কোরবানির পশু কিনতে এসে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন বলেন, পুরো হাট জুড়ে কাদাপানি। গরু কিনব তাই উপায়ন্তর না পেয়ে প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে ও হাতে জুতো নিয়ে কাদাপানিতে নেমে পড়েছি।
গরু বিক্রেতা আবুল কালাম আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, কাদাপানিত দাঁড়ায় গরু বিক্রি করিবা আসেহেনে হামরা বিপদত পড়ে গেইছি। সরকার খালি হামারঠে টাকা নেছে; কিন্তু হামার কষ্টলা কাহো দেখে না।
হাটে পশু বিক্রি করতে আসা বালিয়াডাঙ্গীর আহসান হাবীব বলেন, হাটত ঢুকিবা হইলে আগতেই স্যান্ডেল-জুতা হাটের বাহিরত রাখে আসিবা লাগে। নাইলে হাটত ঢুকা যায়না; এইলা ঝামেলার কারণে খদ্দেরও হাটের ভেতরত আসিবা চাহে না।
লাহিড়ী পশুর হাটে কাদাপানির কারণে গরু বিক্রি করতে এনে সর্বনাশের মধ্যে পড়েছেন বলে জানান গরু ব্যবসায়ী রাকিবুল ইসলাম।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, হাট ইজারার শতকরা ১৫ ভাগ টাকা সংশ্লিষ্ট হাটের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নকাজে খরচ করার কথা। তবে যেসব হাটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উন্নয়নমূলক কাজ করছে, সেসব হাটে শতকরা ১৫ টাকার পরিবর্তে হাটবাজার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনে শতকরা ২৫ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া যাবে। আবার উপজেলার অন্য হাটগুলোর বিক্রয় ছাউনি, নলকূপ, গণশৌচাগার উন্নয়নের কাজে লাগাতে ইজারার শতকরা ১০ টাকা উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে জমা করতে হবে। এ ছাড়া ইজারার শতকরা পাঁচ টাকা হাটটি যে ইউনিয়নে অবস্থিত, সেই ইউনিয়ন পরিষদকে অতিরিক্ত হিসাবে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
লাহিড়ী হাটের ইজারাদারের ম্যানেজার আব্দুল জলিল বলেন, এ বছর ৩৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছেন ইজারাদার আফজালুর রহিম। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাটে পানি জমে; আর বৃষ্টি থেমে গেলে কাদায় হাটের চারপাশ একাকার হয়ে থাকে। এমন পরিবেশে অনেকেই এ হাটে গরু কিনতে আসতে চান না। এ কারণে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা কম এ বছর। অন্যদিকে যে জায়গায় পশুর হাটটি বসানো হয়েছে সেটি হাটের নিজস্ব জায়গা নয়; সে কারণে এখানে স্থানীয় কোন কাজ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সামান্য বৃষ্টির কারণে পশুর হাটে কাদাপানিতে ক্রেতা-বিক্রেতারা নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ সমস্যাটি নিরসনে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :