শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:১৫ দুপুর
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হাটে পর্যাপ্ত গরু

ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদের বাকি আর তিনদিন। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলো এর মধ্যে কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। গরু, মহিষ, উট, ছাগল এবং ভেড়া সবই হাটগুলোতে পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে গতকাল পশুর হাটে দর্শনার্থী ছাড়া ক্রেতা খুব একটা ছিল না। বিক্রেতারা বলছেন, আগামীকাল (আজ) থেকে বেচা কেনা কিছুটা শুরু হবে। ক্রেতারা এখন ঘুরে ফিরে দেখছেন, পছন্দ করছেন।

এর মধ্যে টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। পুরো বেচা-কেনার সময় এখনও হয়নি। এবারের ঈদে কোরবানীর গরুর সঙ্কট হবে বলে বাজারে যে কথা প্রচার ছিল, তা একেবারেই মিথ্য প্রমাণিত হয়েছে। রাজধানীর প্রতিটি হাটই দেশি গরুতে ছেয়ে গেছে। কোরবানির হাটের জন্য নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে না যেতে সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন থেকে বারবার কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছেনা ইজারাদাররা। প্রভাবশালীদের দাপটে ক্রমেই হাটগুলো নির্ধারিত এলাকা ছেড়ে পাড়া-মহল্লা ও সড়কের ওপর চলে গেছে।

এ বছর রাজধানীর পশুর হাটের দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে গেছে। দেশি গুরুতেই ঠাসা প্রতিটি হাট। ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা এবারের কোরবারির ঈদে মোটেও সুবিধা করতে পারেনি। সীমান্তের করিডোর দিয়ে গরু আসা কার্যত বন্ধ। সেখানে নজরদারি বাড়িয়েছে বিজিবি। ভারতীয় গরু যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। আর কৃষক ও খামারিরাও একাট্টা ভারতীয় গরু আসার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে কোরবানির পশুর পর্যাপ্ত মজুত হওয়ার ফলে ভারতীয় গরুর চাহিদা নেই। চাহিদার তুলনায় এ বছর ১২ লাখ দেশীয় পশু উদ্বৃত্ত আছে বলেও জানা গেছে। ভারতীয় গরু না আসায় উপযুক্ত দাম পাওয়ায় খুশি খামারিরাও। ফলে সীমান্তে বৈধ ও অবৈধভাবে গড়ে উঠা খাটালগুলো গরুশূন্য পড়ে রয়েছে। ভারত থেকে গরু আসাতে প্রতি বছর দেশ থেকে প্রায় শত হাজার কোটি টাকা চলে যায়। এবার ভারত থেকে গরু না আসায় শত হাজার কোটি টাকা দেশেই থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম  বলেন, আমরা বহুদিন ধরে ভারতীয় গরু যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সেই আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছি। কারণ তারা তাদের সুবিধা মত ইচ্ছা হলে গরু দিবে না হলে গরু দেয়া বন্ধ করে দিবে। যে কারণে আমাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়। তাই আমরা আমাদের দেশের গরুতেই যাতে দেশের গোশতের চাহিদা মিটানো যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সেই চেষ্টার কিছুটা সফলতা আসতে শুরু করেছে। এ বছর আমাদের কোরবানির চাহিদা দেশি গরুতে মিটানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। কারণ ইতোমধ্যে রাজধানীর হাটগুলো দেশি গরুতে ছেয়ে গেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগ মানুষ কোরবানির জন্য দেশীয় পশু কিনছেন। মফস্বল এলাকায় দেখা যাচ্ছে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃৃষকের ঘরে লালন-পালন করা গরু-ছাগল কিনছেন অনেকে। জানা গেছে, ভারতে গরু আনতে গিয়ে বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে অনেক বাংলাদেশি রাখাল নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিজিবি ভারতে গিয়ে গরু আনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এবং তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই-তিন ঈদে বাংলাদেশে ভারতীয় গরু কম এসেছে। কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল ভারতীয় গরু না এলে গরুর সঙ্কট হবে। তা একেবারে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ভারতীয় গরু কোরবানির ঈদে কম এসেছে। তাতে কোরবানির গরুর কোন সঙ্কট হয়নি। প্রতিবারই দেশি গরুতেই সারাদেশে কোরবানি দেয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতীয় গরু না আসাতে দেশের খামারি এবং কৃষকরা গরু পালা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বছর হাটে দেশি গরুর আমদানি অনেক বেড়েছে। গ্রামের কৃষক সব শঙ্কা দূর করে দিয়েছে। কৃষক দেশি গরু লালন-পালন করে বিদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় অর্থনীতির শক্তিমত্তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। ভারতীয় গরু না আসলেও আমাদের আর কোন প্রকার ক্ষতি হবে না। সাময়িক দুই-এক মাস গোমতের দাম বাড়লেও পরে ধীরে ধীরে তা কমে আসবে। স্থানীয় অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে। এতে গরুর জন্য ভারতের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, এবছর দেশি গরুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা। কোরবানিযোগ্য পশু ১ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজারের মতো মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট পশু ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার। রাজশাহী বিভাগ থেকে ২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ, খুলনা বিভাগ থেকে ১৭ দশমিক ৫৫, ঢাকা বিভাগ থেকে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রংপুর বিভাগ থেকে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, সিলেট বিভাগ থেকে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, বরিশাল বিভাগ ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ থেকে ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ পশুর জোগান আসবে। দেশে প্রতিষ্ঠিত ডেইরি খামারগুলো থেকে এসব কোরবানির পশুর বড় জোগান আসে। গত বছর দেশে এক কোটি চার লাখ পশু কোরবানি হয়। সেই তুলনায় এবার উদ্বৃত্ত রয়েছে ১২ লাখ পশু।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক ভর্তি কোরবানির পশু আসছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেশি গরুর। তবে অধিকাংশ ক্রেতার অভিযোগ হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠলেও দাম গত বছরের তুলনায় ঢের বেশি। গরু প্রতি অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি হবে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও ভারতীয় গরু না আসায় দাম একটু বাড়তি। এখন বিক্রি কিছুটা কম হলেও আগামী তিন দিন গরু-ছাগল বিক্রি বেড়ে যাবে মনে করছেন তারা।
রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, গোলাপবাগ, মেরাদিয়া ও আফতাবনগর সংলগ্ন বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, বেপারিরা তাদের পশু নিয়ে অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেরা গল্প, আড্ডা ও রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেসব ক্রেতা হাটে আসছেন তারা দাম যাচাই-বাছাই করছেন, দেখছেন-পছন্দ করছেন। তাদের ধারণা কোরবানির আগের দিন ঠিকই দাম কমবে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে মাহবুব নামের এক ব্যবসায়ী কমলাপুর হাটে বিক্রির জন্য ৩১টি গরু এনেছেন। গত বছর তেমন ভালো দাম না পেলেও এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। এরই মধ্যে ২টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। মাহবুব বলেন, আগের বছর হাটে গরু বেশি ছিল। সে কারণে দাম ভালো পাইনি। কিন্তু এবার গরু গত বারের চেয়ে কম। ভারতীয় গরু না আসলে ভালো দাম পাব।
অন্য দিকে মনির হোসেন নামের এক সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, কোরবানির ঈদে ঢাকায় থাকা হবে। বন্ধু ও কলিগদের সঙ্গে কোরবানির গরু কেনার জন্য হাটে এসেছেন। বাজেট ও সাধের সমন্বয় করতে কমলাপুর ও গোলাপবাগ হাট ঘুরেছেন। অনেক গরু উঠলেও দাম অনেক বেশি। গত বছর যে গরুর দাম ৫০ হাজার সেটা ৭০-৮০ হাজার টাকা এবং লাখ টাকার গরু দাম দেড় লাখ টাকা হাঁকাচ্ছে।
লালবাগ বেড়িবাধ হাটের আবদুল হামিদ নামে এক ইজারা আদায়কারী জানান, গত শুক্রবার থেকে বসে আছেন। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত একটি গরুর ইজারাও আদায় হয়নি। তবে গতবারের চেয়ে এবার দেশি গরুর আমদানি অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, আরিচার রাস্তায় (ঢাকা-আরিচা সড়ক) গরুর গাড়ি আটকে আছে। এখনও হাটে ক্রেতা না এলেও আগামী দিন (আজ রোববার) থেকে হাট জমে উঠবে এবং বেচাকেনা ভালো হবে বলে আশা করছি।

সরেজমিনে দেখা যায়, লালবাগ কেল্লার মোড় শ্মশানঘাটের আগে রাস্তার দুই পাশ জুড়ে ছোট-বড় গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। এতে রাস্তায় প্রচন্ড যানজট। হাটে অসংখ্য গরু দেখা গেলে ক্রেতা খুব একটা নেই। কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে ৯টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন জমির আলী। রাস্তাঘাটে যানজটের ভয়ে দুদিন আগেই চলে এসেছেন। তিনি জানান, কুষ্টিয়া থেকে ট্রাকে ৩০ হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকায় এসব গরু নিয়ে এসেছেন। রাস্তাঘাটের যত খরচ তা ট্রাকমালিক বহন করেছেন। যানজটের ভয়ে দুদিন আগে আসলেও শনিবার পর্যন্ত কোনো গরু বিক্রি করতে পারেননি জমির আলী। তিনি বলেন, ক্রেতা আসলেও দাম বলেননি। লোকজন এখনও ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেনাকাটা শুরু করেননি।

মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটটি মেরাদিয়া বাজার থেকে শুরু করে দক্ষিণ বনশ্রীর প্রজেক্ট এলাকার বিভিন্ন অলিগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। মেরাদিয়া হাট থেকে কাজীবাড়ি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই সারিবদ্ধভাবে গরু রাখা হয়েছে। এ সড়কটিতে আবাসিক এলাকার ২০টির মতো সংযোগ সড়ক রয়েছে। প্রতিটি সড়কেই বসানো হয়েছে হাট। এতে আসপাশের বাসা বাড়ি, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে, উত্তর শাজাহানপুরের খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন মৈত্রীসংঘের মাঠের হাট, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পাশের হাট, শ্যামপুর বালুর মাঠের হাট, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গার হাট ও ধুপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠের পাশের খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর গোলচত্বরসংলগ্ন খালি জায়গার হাট। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কিছু কিছু জায়গায় হাট শুরু হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এবং নির্ধারিত স্থানের বাইরে হাট বসাতে নিষেধ করেছি। সূত্র : ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়