শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:৫১ সকাল
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:৫১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আজ জহির রায়হানের জন্মদিন

ডেস্ক রিপোর্ট : চলচ্চিত্রের রাজপটে অন্যতম প্রতিভাবান পরিচালক জহির রায়হানের ৮৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের ১৯শে আগস্ট তিনি ফেনী জেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জহির রায়হানের আসল নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাকনাম জাফর। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকত্তোর ডিগ্রি লাভ করেন। জহির রায়হানের কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। ১৯৫০ সালে তিনি ‘যুগের আলো’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ‘খাপছাড়া’,যা ন্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন।১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবেপ্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। এরপর তিনি তাঁর মূল পরিচয় যে জায়গাতে সেই চলচ্চিত্র শিল্পে তাঁর যাত্রা শুরু করেন। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে,জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি যে নদী মরুপথেতেও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তিনি রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনিচলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্রবাহানা মুক্তি দেন। জহির রায়হান ‘ভাষা আন্দোলনে’ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র’জীবন থেকে নেওয়াতে’। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। জহির রায়হান তাঁর “স্টপ জেনোসাইড” প্রামাণ্যচিত্রের জন্য অনেক বেশি আলোচিত । মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মিত সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রশংসিত চলচিত্র হচ্ছে স্টপ জেনোসাইড। ১৯ মিনিটের এই ডকুমেন্টারিটি তখন পাকবাহিনীর গণহত্যার তাৎক্ষণিক ফুটেজ স্বল্পতার মধ্যেও অপূর্ব নির্মাণে তৈরি এক তীব্র প্রতিবাদ। চিত্রনাট্যে জহির রায়হানের সঙ্গী ছিলেন আরেক অসাধারণ নির্মাতা আলমগীর কবির (সূর্য্যকন্যা, ধীরে বহে মেঘনা ইত্যাদি), আলমগীর কবির ইংরেজী ধারাবিবরণী লিখেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন এতে। আর ক্যামেরায় ছিলেন অরুণ রায় । মাত্র তিনটি দৃশ্য দিয়ে সাজানো তা। প্রথম দৃশ্যে জাতিসংঘের সদর দপ্তর। সুশীল আলোচনা হচ্ছে সেখানে, গৎবাধা ভালো কথা। পরের দৃশ্য ভিয়েতনামে মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমানের গোলাবর্ষণ। নারী-পুরুষ-শিশুদের গণহত্যা। যুদ্ধাপরাধে বিচারাধীন এক মার্কিন লেফট্যানেন্টের পক্ষে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাফাই। পরের দৃশ্যে সেই বাংলাদেশ। লাশের স্তুপ আর হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য। নেপথ্যে শোনা যায় জাতিসংঘের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘোষণা- তবে কি কেবল পরিহাস? মুক্তিযুদ্ধের এই ক্লাসিক ডকুমেন্টারিটি একাধিক পুরষ্কার জিতেছে বিভিন্ন চলচিত্র উৎসবে। তবে তার চেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়ে সোচ্চার হতে বাধ্য করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি “এ স্টেইট ইজ বর্ন”, “ইনোসেন্ট মিলিয়ন”,”লিবারেশন ফাইটার্স”। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও ছিল জহির রায়হানের অবাধ বিচরণ । তাঁর প্রথম প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ (১৯৫৫), তৃষ্ণা (১৯৬২)।একুশে ফেব্রুয়ারি (১৯৭০),কয়েকটি মৃত্যু,শেষ বিকেলের মেয়ে (১৯৬০),হাজার বছর ধরে (১৯৬৪/চলচ্চিত্ররূপ, ২০০৫),আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯),বরফ গলা নদী (১৯৬৯) ,আর কত দিন (১৯৭০)। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর পরই জহির রায়হান তাঁর ভাই প্রখ্যাত সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে বের হন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য তাঁকে তাঁর বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেন নি। ভাইকে খুঁজতে জহির রায়হান মিরপুর এলাকাতে যান। বিভিন্ন তথ্যের উপর ভিত্তি করে ধারণা করা হয়, নিজের মতাদর্শের কারণে আগে থেকেই স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্ষুশূল ছিলেন জহির রায়হান। তারাই তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি । জহির রায়হান তাঁর একটি কাজ শেষ করে যেতে পারেন নি। ১৯৭০ সালে তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কাজটি থেকে গিয়েছে অসমাপ্ত। যে আলোর মশাল জহির রায়হান প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন সেই আলো কি আমরা ছড়িয়ে দিতে পারবো প্রতিটি তরুণ প্রাণে ? জন্মদিনে মহান এই ব্যক্তির বন্দনার সাথে সাথে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু হোক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা এটাই কামনা ।
সূত্র : প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়