শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৫৭ সকাল
আপডেট : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুকে দাফন করেছিলো যারা

রুমি আক্তার পলি

 

১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায়

দাফন করা হয় জাতির জানক বঙ্গবন্ধু

শেখ মুজিবুর রহমানকে।৭৫’ এর ১৬

আগস্ট দুপুরে ঢাকা থেকে

হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায়

বঙ্গবন্ধুর লাশ এসে পৌঁছায়।

 

এরপর টুঙ্গিপাড়া সোনালী ব্যাংকের

ম্যানেজার কাসেম, আব্দুল হাই মেম্বর,

আকবর কাজী, মো. ইলিয়াস হোসেন,

জহর মুন্সি, সোনা মিয়া কবিরাজ, শেখ

নুরুল হক গেদু মিয়া, সোহরাব

মাস্টারসহ অন্যরা তার পৈতৃক বাড়িতে

লাশ বহন করে আনেন। কফিন খুলে লাশ

বের করে ৫৭০ সাবান দিয়ে গোসল

করানো হয়।

 

তারপর তাকে গোসল করিয়ে রিলিফের

কাপড়ের কাফন দিয়ে সমাহিত করা হয়।

তবে জানাজায় গ্রামবাসী অংশগ্রহণ

করতে চাইলেও দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে,কড়া নিরাপত্তার মধ্য

দিয়ে হেলিকপ্টার কফিন

নামিয়ে রেডক্রিসেন্টের রিলিফের

কাপড় দিয়ে কাফন পরানো হয়।

জানাজা শেষে পিতা শেখ লুৎফর

রহমান ও মাতা শেখ সায়েরা খাতুনের

কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

জানাজা ও দাফন শেষে বিশেষ

মোনাজাত পরিচালনা করেন মরহুম

মৌলভী আব্দুল হালিম। দাফন অনুষ্ঠানে

টুঙ্গিপাড়া, পাটগাতী ও পাঁচকাহনিয়া

গ্রামের ৩০/৩৫ জন অংশ নেন। সেনা ও

পুলিশ হেফাজতে তড়িঘড়ি করে দাফন

সম্পন্ন করা হয়। জানাজায় গ্রামবাসী

অংশগ্রহণ করতে চাইলেও দেওয়া হয়নি।

বঙ্গবন্ধুকে দাফনকারী টুঙ্গিপাড়া

গ্রামের কাঠমিস্ত্রী আয়ুব আলী শেখ

(৫০) বলেন, কফিন খোলার জন্য আমার

বাবা মরহুম হালিম শেখ ও আমাকে

ডাকা হয়। আমি কফিন খুলেই বঙ্গবন্ধুর

লাশ দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পড়ি।

তখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না

আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু মারা গেছেন।

মনে হচ্ছিল,তিনি ঘুমিয়ে আছেন। কিছু

সময় আমি কাজের প্রতি অমনোযোগী

হয়ে পড়ি। সেনা সদস্যরা দ্রুত কাজ

করার জন্য ধমক দিলে আমার চেতনা

ফিরে আসে। এ ঘটনার পর বেশ কয়েক

রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর

দাফনে অংশ গ্রহণকারীরা প্রায় সবাই

মারা গেছেন। আমিসহ ৩/৪ জন এখনও

বেঁচে আছি।

 

বঙ্গবন্ধুর দাফনকারী টুঙ্গিপাড়া

পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. ইলিয়াস

হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা

হয়েছে শুনেই বাড়ি বের হয়ে

আসি। সেদিন টুঙ্গিপাড়া নিস্তব্ধ হয়ে

যায়। মানুষ শোকে বিহ্বল পড়ে।

দুপুরের দিকে টুঙ্গিপাড়া থানা সংলগ্ন

হ্যালিপ্যাডে সেনাবাহিনীর

হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর লাশ

নিয়ে আসা হয়। কফিন বহন করার জন্য

আমিসহ অন্যান্যদের ডাকা হয়। আমরা

হেলিকপ্টারের মধ্য বঙ্গবন্ধুর

কফিন বের করে তার বাড়িতে নিয়ে

আসি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আসা সেনা

সদস্যরা কফিনসহ লাশ কবর দেওয়ার

কথা বলেন। মরহুম মৌলভী আব্দুল হালিম

লাশ না দেখে দাফন করতে আপত্তি

জানান। একজন মুসলমানকে ইসলামী

বিধি বিধান মেনে দাফনের দাবি

জানান। সেনা অফিসাররা ১৫/২০

মিনিটের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর লাশ দাফনের

নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর কফিন খোলা

হয়। তার বুকে ২৪টি গুলির চিহ্ন ছিল।

গুলিগুলো বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে

বের গেছে। ডান হাতের তালুতে

একটি গুলি। বাঁ পায়ের গোড়ার পাশে

একটি এবং দুই রানের মধ্যখানে দুইটি

গুলি। তখনও তার শরীর দিয়ে রক্ত

ঝরছিল। গায়ে ছিল সাদা গেঞ্জি ও

পাঞ্জাবি।পরনে ছিল সাদা চেক

লুঙ্গি। পাঞ্জাবির এক পকেটে ছিল

চশমা ও প্রিয় পাইপ। আয়ূব মিস্ত্রীকে

দিয়ে কফিন খুলিয়ে লাশ বের করে

আনা হয়। আশরাফ মোল্লার দোকান

থেকে ৫৭০ সাবান কিনে আনা

হয়। এ সাবান দিয়ে মন্নাফ শেখ, সোনা

মিয়া, ইমান উদ্দিন গাজী বঙ্গবন্ধুকে

গোসল করান। টুঙ্গিপাড়া শেখ সাহেরা

খাতুন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে

রিলিফের মাল শাড়ি আনা হয়। শাড়ির

লাল ও কালো পাড় ছিঁড়ে ফেলে

কাফনের কাপড় বানানো হয়। এ কাপড়

পড়িয়ে জানাজা করা হয়। জানাজা

শেষে বঙ্গবন্ধুকে বাবা ও মায়ের

কববের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত করা

হয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মৃত্যুর পর যে

রাষ্ট্রীয় সম্মান পাওয়ার কথা ছিল,

সেটা বঙ্গবন্ধু পাননি। দাফন শেষ

হওয়ার পর আর্মি অফিসাররা সারিবদ্ধ

হয়ে তাকে তিনবার স্যালুট করেন। লাশ

দাফন শেষে সেনা সদস্যরা ডায়রিতে

শেখ আব্দুল মান্নাফের স্বাক্ষর নিয়ে

চলে যান।

 

দাফনে অংশগ্রহণকারী টুঙ্গিপাড়া

পোস্ট অফিসের সাবেক পোস্ট মাস্টার

আনোয়ার হোসেন বলেন, ১৬ আগস্ট

সকাল ৯টার দিকে আমার কাছে বার্তা

আসে, পাঁচ/ছয়টি কবর খুঁড়তে হবে, লাশ

আসছে ঢাকা থেকে। পরে ফোন করে

জানানো হয় কবর খোঁড়ার জন্য।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে একটি

হেলিকপ্টার এসে টুঙ্গিপাড়ায় বারবার

চক্কর দিচ্ছিলো। পরে দুপুর ২টার দিকে

হেলিকপ্টারটি টুঙ্গিপাড়া অবতরণ

করে। সেদিন কর্নেল কাজী হায়দারের

সঙ্গে ছিল ১৪ জন সৈনিক। মাত্র ১৪ জন

সৈনিক নিয়ে এতো বড় একটা কাজ করা

সত্যিই ছিল বিপদজনক। যেকোনও কিছুই

ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় তাড়াহুড়ো

করে লাশ দাফনের কথা বলে। তাদের

চোখে মুখে তখন আতঙ্কের ছাপ ছিল।

সেদিন টুঙ্গিপাড়াবাসী যেমন

আর্মিদের ভয় পাচ্ছিলো, তেমনি

আর্মিরাও টুঙ্গিপাড়াবাসীকে ভয়

পাচ্ছিলো।

 

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের

সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল বাশার

খায়ের বলেন,বঙ্গবন্ধুকে দাফনের জন্য

আগে থেকেই টুঙ্গিপাড়ায় কবর খুঁড়ে

রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুকে দাফনে গ্রামের

মানুষ অংশ নিতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু

পথেই পুলিশ,সেনা সদস্যরা তাদের

বাধা দিয়ে আটকে দেন। তারা দাফনে

অংশ নিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর গোসল,

জানাজা ও দাফনে টুঙ্গিপাড়া, পাঁচ

কাহনিয়া ও পাটগাতী গ্রামের ৩০/৩৫

জন অংশ নেন। কবর দেওয়ার পর

সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

কবরের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দেওয়া

হতো না। টুঙ্গিপাড়াবাসী বঙ্গবন্ধুর

জন্য মিলাদ ও কুরআনখানি

দিয়েছিলেন।

পরিচিতি:সহ-সভাপতি, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিল/ ফেসবুক থেকে

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়