জুনায়েদ সাকি : দেখুন, কোটা আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিভিন্নমহল থেকে বলা হচ্ছে- এ আন্দোলনের মধ্যে ষড়যন্ত্র ছিল। এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে অস্থিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা আছে। এরকম নানা কথা বলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এক ধরনের ব্রা-িং করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, হুমকি দেয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। একদিকে এটা হচ্ছে, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন তার কার্যকারিতাও খুব বেশি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তাছাড়া বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্যে এমনভাবে বিষয়টি প্রকাশিত হচ্ছে যে, তাৎক্ষণিকভাবে তারা বিষয়টিকে মেনে নিয়েছেন।
তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তরিকতার নানা অভাব দেখা যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে, আদৌ সরকার তাদের দেয়া ঘোষণা বাস্তবায়ন করবে কি-না এবং এই দাবি তারা মানবে কি-না? ফলে প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যাপারে তারা দাবি তোলা শুরু করেছে। আর প্রজ্ঞাপন জারি করার ব্যাপারে দাবি তোলাটা অত্যন্ত যৌক্তিক বিষয়। দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা একটি সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল। অথচ একটি সংবাদ সম্মেলন কী করে ষড়যন্ত্র হয়! একটা সংবাদ সম্মেলন কী করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা হয়!
আর সেই সংবাদ সম্মেলনকে অস্থিতিশীলতা কিংবা ষড়যন্ত্র দেখিয়ে যেভাবে তাদের ওপর হামলা করা হলো পুলিশের উপস্থিতিতে, সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা যেভাবে নৃশংস হামলা চালালো, মেয়েদের নির্যাতন করল, তাতে এটা স্পষ্ট যে, সরকারি পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ছাত্রলীগকে একটা লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তারা শিক্ষাঙ্গনগুলোতে মারধর, অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে একটা ভীতির পরিবেশ সৃষ্ট করে, কাউকে কোনো রকম তৎপরতা চালাতে দেবে না। আর এসব হামলার জন্য দায়ী কাউকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় নি। অন্যদিকে যারা হামলার শিকার হয়েছে তারা নানা ধরনের হেনস্থার শিকার হয়েছে। যেসব অভিভাবকরা এসব হামলায় উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছেন, তারা পুলিশি হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা!
প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ওই আন্দোলন ভয়ের কারণ ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনটা অনেকটা আমাদের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মতো ছিল। এটা কোনো রাজনৈতিক দল করে নি। ছাত্ররা স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের স্বার্থের জন্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেমেছিল। আমি মনে করি, ১৯৫২ সালের মতোই কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল অধিকার আদায়ের জন্য। এরপর প্রধানমন্ত্রীর রাগ যখন কমে গেল, তখন তিনি এটাকে হেরে যাওয়া বলে মনে করছেন অর্থাৎ অন্যের দাবি মেনে নেয়াকে প্রধানমন্ত্রী হেরে যাওয়া মনে করছেন। আর এটিই হলো মূল সমস্যা। আর আমার মতে কোটা থাকার দরকার আছে তবে কোটা সংস্কারেরও প্রয়োজন আছে।
এগুলো একান্তই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এসব ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় বা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র। আমরা সব সময় ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের মেধা ও ম্ক্তু চিন্তার সুযোগ দিয়ে থাকি এবং আমরা আশাও করি প্রতিটি শিক্ষার্থী অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবসময় সম্মান করবে। কিন্তু যারা এই কাজগুলো করে, তারা আসলে সংকীর্ণ স্বার্থে এ ধরনের কাজ করে। তবে যারাই করে থাকুক না কেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুনের মধ্যে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল রুলস আছে কিসের জন্য?
এত তরুণ প্রজন্ম যেখানে বসবাস করে, একসাথে লেখাপড়া করে, খেলাধুলা করে সেখানে তাদের মাঝে যদি সংঘাত-সংঘর্ষ হয়, তাহলে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং শাস্তির আওতায় আনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলসের মধ্যে রয়েছে। আমি আশা করব, যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, সমাজে বিশ্ঙ্খৃলা সৃষ্টি করছে, তাদেরকে যথাযথ আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
পরিচিতি : প্রধান সমন্বয়ক, গণসংহতি আন্দোলন /মতামত গ্রহণ : নৌশিন আহম্মেদ মনিরা/ সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ
আপনার মতামত লিখুন :