শিরোনাম
◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দ্রুত আরোপ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত ◈ বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার ◈ ঈদের পর কমপক্ষে ২৩ ডিসি’র রদবদল হতে পারে ◈ ৫ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে কর্মদিবস একদিন ◈ চাঁদপুরে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত

প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৫ সকাল
আপডেট : ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হঠাৎ আলোচনায় এক-এগারো

তারেক : একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র চার মাস। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। অন্য দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের বেশ কয়েক দফা দাবিতে রাজপথে নামার অঙ্ক কষছে। সরকারের মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে রাজনীতির ময়দান উত্তাল থাকতে পারে এমন আশঙ্কাও চাউর হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এর বাইরে কোনো ধরনের শর্তযুক্ত সংলাপ-সমঝোতায় বসতে রাজি নয় তারা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে আলোচনায় এসেছে ২০০৭ সালের সেই ওয়ান-ইলেভেন বা এক-এগারো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আবার এক-এগারোর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’ গতকাল তিনি একই প্রসঙ্গে বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্ত করছে বিএনপি।’ অন্য দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘এক-এগারোর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। এরপরও আপনারা সরকারে আছেন? এখনো পদত্যাগ করছেন না কেন? আসলে আপনারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।’

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি। ১১ বছর আগের এই দিনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়, যা বহাল ছিল পরবর্তী দুই বছর। ২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা-হানাহানি। এর অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের জরুরি অবস্থা জারি করার মধ্য দিয়ে। একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন তিনি। বাতিল করা হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয় নতুন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, যার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ।
১১ জানুয়ারি ক্ষমতার পালাবদলের পর জরুরি ক্ষমতার আওতায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছিল। শুরুতে দেশের মানুষ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন করলেও এক সময় তা কমে আসে এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি বাড়তে থাকে। আলোচিত-সমালোচিত সেই ঘটনাপ্রবাহের শুরুর দিনটি পরিচিতি পায় ওয়ান-ইলেভেন বা এক-এগারো নামে। ওয়ান-ইলেভেনের এ পটপরিবর্তন নানা অস্বস্তির জন্ম দেয় শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই দুই বছরে দল ভাঙা-দল গড়ার খেলাও দেখে জনগণ। সে সময় কথিত দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের মুক্তি দিয়েই নির্বাচনের দিকে এগোতে হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। এ সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়। আবার গণতন্ত্রে ফেরে দেশ।

বাংলাদেশে নির্বাচনী বছরে কিংবা নির্বাচনের মাস কয়েক আগে থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও এ ধরনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অক্টোবর-নভেম্বরে উত্তাল হতে পারে রাজপথ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও উত্তপ্ত ছিল রাজপথ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় ওই নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছিল বিএনপি। দেশজুড়ে তখন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। রক্তাক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
যেসব দাবিতে ওই সময় বিএনপি মাঠে নেমেছিল, তার কোনোটিই এখনো পূরণ হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবারো বেশ কিছু দাবিতে মাঠে নামার ছক কষছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি, কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মামলাগুলো প্রত্যাহার করা, বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দেয়া, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে একটি সমাবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী মহারণ শুরু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সমাবেশ হবে গণফোরামের সভাপতি ড. কামালের সভাপতিত্বে। যেখানে বিএনপিসহ সমমনা বহু রাজনৈতিক দল একই মঞ্চে উঠে একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলে ধরবেন। একই সাথে সংলাপ-সমঝোতার আহ্বান জানানো হবে।

জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে ও পরের দিনগুলোতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী এ মোর্চা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে পারে। এতে করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারো ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আসছে ঈদের রেশ কেটে যাওয়ার পর যে একটি বড় ধরনের আন্দোলন আসছে এটি সরকার ভালোভাবে অনুমান করছে। এ আন্দোলন বিএনপি একা না করে অন্য সব দল মিলে করার সম্ভাবনার পাশাপাশি তাতে সামাজিক গ্রুপগুলোও নেমে পড়ে কি না সেটি নিয়েও আতঙ্কিত সরকার। সম্ভাব্য সেই আন্দোলন দমন করার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। তবে কিছুটা উদ্বেগও কাজ করছে তাদের মধ্যে। এ উদ্বেগের কারণ হচ্ছে তারা শতভাগ নিশ্চিত নয় সম্ভাব্য সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার মতো একটি নির্বাচন করা যাবে কি না। ফলে সরকারি মহলে এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষক বিদেশ মহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে কিছু করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।নয়াদিগন্ত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়