আসিফুজ্জামান পৃথিল: মুহিবুল্লাহর সাথে আর দশজন মানবাধিকার তদন্তকারীকে মেলানোর সুযোগ নেই। তিনি পান চাবান এবং একটি সংকীর্ণ পলিথিনের ঝুপড়িতে বাস করেন। তাকে মাঝে মাঝে মাঝে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ত্রাণের লাইনে দেখা যায়। কারণ তিনি সেখানেই বসবাস করেন। এসব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি একজন মানবাধিকার তদন্তকারী।
মুহিবুল্লা সেসব গুটিকয় শরণার্থীর একজন যারা এমন কিছু অর্জন করেছেন যা সাহায্য সংস্থা, বিদেশী সরকার এমনকি সাংবাদিকরা পর্যন্ত অর্জন করতে পারেননি। তারা দারুণভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছেন, প্রত্যেকের নাম ধরে তালিকা করেছেন। তাদের হাতেই আছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নিহত রোহিঙ্গাদের একমাত্র তালিকা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এই ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী হামলায় প্রায় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এবং সেই সাথে তারা হাজারো মৃতদেহ পেছনে ফেলে আসে।
অধিকার সংগঠন ‘মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারস’ কক্সবাজারে কাজ করছে। তারা ধারণা করছে সহিংসতার প্রথম মাসে ৬৭০০ জন নিহত হয়েছে। তবে এই পরিসংখ্যানে মাত্র এক মাসের হিসাব দেয়া হয়েছে। এবং এখানে নিহতদের পরিচয় দেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে রোহিঙ্গারা যে তালিকা বানিয়েছে তাদের ১০ হাজারেও বেশী নিহতের তথ্য দেয়া হয়েছে। তাদের তালিকায় ২০১৬ সালের আক্রমনেরও উল্লেখ রয়েছে। এই তালিকায় প্রত্যেক নিহতের নাম, বাবার নাম, বয়স, মিয়ানমারের ঠিকানা এবং কিভাবে তারা নিহত হলেন তার উল্লেখ রয়েছে।
এই তালিকা সম্পর্কে মুহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন শরণার্তীতে পরিনত হলাম, আমার মনে হলো আমার কিছু একটা করা দরকার।’ ৪৩ বছর বয়সী এই শরণার্থী মনে করেন এই তালিকা গুলো একদিন ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হবে এবং তাদের দুর্দশার কথা কাউকে ভুলতে দেবেনা। এই ব্যপারে জানতে মিয়ানমারের সরকারী কর্তৃপক্ষকে টেলিফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেনি। গত বছরের শেষে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো তাদের ১৩ জন সদস্য নিহত হয়েছে। তারা আরো জানায় তারা আগস্ট ২৫ থেকে ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩৭৬ জন রোহিঙ্গা ‘জঙ্গী’র মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। রয়টার্স
আপনার মতামত লিখুন :