হ্যাপী আক্তার : ১৭ আগস্ট ২০০৫। ১৩ বছর আগের এদিনেই রাজধানীর ৩৪টি জায়গাসহ, দেশের ৬৩ জেলার প্রায় পাঁচশো স্পটে একযোগে চলে সিরিজ বোমা হামলা। বাদ ছিলো শুধু মুন্সিগঞ্জ। সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার বিচারকাজ থমকে আছে। ১৬১ মামলার মধ্যে ৫০টির বেশি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। নিয়ন্ত্রণে আসলেও নির্মূল হয়নি ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন নামে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে সংগঠনটি।আইনশৃংখলা বাহিনীর দাবি, কোমর ভাঙ্গা জেএমবি যেকোনো সময় চেষ্টা করতে পারে নতুন কোনো হামলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গি দমনে একটি নির্দিষ্ট বাহিনী কাজ করলে নির্মূলে সফলতা আসবে।
সিরিজ বোমা হামলার সে ঘটনায় নিহত হন ২ জন, আহত হন অসংখ্য মানুষ। ১৭ আগস্টের পর জেএমবির একের পর এক আত্মঘাতী হামলায় বিচারক, আইনজীবী, সরকারি কর্মকর্তাসহ নিহত হন ৩৩ জন। আহত হন চারশোরও বেশি মানুষ। ওই ঘটনায় সারা দেশে হওয়া ১৬১ মামলার রায় হয়েছে ১১০টির। যদিও রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলছেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই তার কাছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সিরিজ বোমা হামলয়, এটা নিয়ে কি হয়ে ছিলো, না হয়ে ছিলো পুলিশ সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমাকে দেয়নি। এগুলো ট্রায়াল আছে কি না তা এখনো আমি জানি না।
২০০৫ সালের ১৪-ই নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যায়, জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইসহ শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি হবার পর, অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে সংগঠনটির কার্যক্রম। যদিও গেল কয়েক বছরে ফের তৎপর এ ধরনের সংগঠনগুলো। নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন নামে নতুনভাবে সংগঠিত হতে থাকে তারা। ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই ঘটে, হলি আর্টিজানের মতো হামলা। এরপর আইনশৃংখলা বাহিনী দেশব্যাপী চিরুনি অভিযান চালালেও, পুরো নির্মূল করা যায়নি জঙ্গিদের।
বিশ্লেষকের মতে, জঙ্গি দমনে সাফল্য ফলাও করে প্রচার করলেও, ব্যর্থতা কেউ নিতে চায়না। তাই জঙ্গি নির্মূলে একক বাহিনীকে কাজে লাগানোর পরামর্শ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেছেন, পুলিশ বা র্যাব সকলকেই এখন আমরা উদ্ধারে ব্যবহার করছি। মাদক বিরোধী অভিযান ও ট্রাফিক কন্ট্রোলে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো না করে, যেখানে জঙ্গি তৎপরতা থাকবে, শুধুমাত্র সেটা নির্মূল করার জন্য তাদের কাজে লাগালে আমাদের জন্য ভালো।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জেএমবির পর নব্য জেএমবির বড় সব নেতাকে নিশ্চিহ্ন করলেও, পুরো নির্মূল করতে না পারার কারণ তাদের গুপ্ত অনুসারি।
ডিএমপি’র কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তাদের নেতা বিধ্বস্ত হয়েছে, যেগুলো রয়েছে, তারা হয় তো বিক্ষিপ্তভাবে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। কাউকে চাপাতি দিয়ে কোপ দিলে বা গুলি করলো এই গেরান্টি কিন্তু দেওয়া যাবে না। তবে, জঙ্গি নির্মূলে আমরা সকলেই সমন্নিতভাবে কাজ করছি।
নিরবচ্ছিন্ন নজরদারিতে ১৭ আগস্টের মতো ঘটনা আর কখনও ঘটবে না বলে আশ্বাস দেন ডিএমপি কমিশনার। সূত্র: চ্যানেল টোয়েন্টিফোর
আপনার মতামত লিখুন :