শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৪৮ সকাল
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অপারগতার কান্না!

সাব্বির আহমেদ: ২০০৩ সালের জানুয়ারী মাস, ঢাকার এখনকার (তখন এক বছরের পুরনো) স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সবে নতুন শিক্ষকতায় ঢুকেছি, আড়াই বছরের মেয়ে, স্কুল, বাসা সামাল দিতে আমি হিমশিম খাই!

তার ওপর ঢাকা শহর নতুন চাকুরী, অচেনা পথ-ঘাট, পাগল পাগল অবস্থা! বাসায় একজন সাহায্যকারী ভীষণভাবে দরকার। মেয়ের বাবার আয়- রোজগার খুব একটা সুবিধের নয় বিধায় টিউশানিও শুরু করতে হলো। সাহায্যকারীর জন্য ধর্না দিচ্ছি যেখানে যখন পারছি।

যখন দম বন্ধ হবার উপক্রম, ঠিক তখনি এককান, দু'কান, বদকান, করে সেই প্রতিষ্ঠানে আমি যার তত্বাবধানে কাজ করি এবং যিনি আমার ইন্টারভিউ যারা নিয়েছিলেন তাদের একজন এর কানে গেলো।

তিনি জানালেন, তাঁর খোঁজে একটি ১৭/১৮ বছর বয়সী মেয়ে আছে, এর সাথে আরো দু/তিন জন আছে যারা তাঁর বাসায় কাজ করে, সো আমি চাইলে মেয়েটাকে নিতে পারি! প্রথমেই বয়সটা ধাক্কা দিলো, সারাদিন বাসায় থাকি না, এই বয়সের একটা মেয়ে!

কিন্তু পরক্ষণেই নিজের মেয়ের চেহারাটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে, বেচারি আমার সাথে স্কুলে আসতে যেতে শুকিয়ে গেছে, প্রতিদিন আনাও ঠিক নয়! নতুন চাকুরী, রাজি হয়ে গেলাম। পরদিন সকালে ঠিকানা অনুযায়ী মেয়েটিকে আনতে গেলাম। হাল্কা- পাতলা, শ্যাম- বর্ণ একটি মেয়ে!

বাসায় নতুন সহকারী এলেই তাকে যে এলেমগুলো দিই আমি, তারমধ্যে অন্যতম হলো পারসোনাল হাইজিন, স্পেশালি মাসের অই বিশেষ দিনগুলোতে তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটা। তাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে দিয়ে মোটামুটি ভালই কাটলো প্রায় মাস খানেক। খুব পরিষ্কার আর গুছিয়ে কাজ করতো।

কেবল স্কুল আর টিউশানি শেষ করে বাসায় ফিরে দেখতাম প্রায় ই শুয়ে থাকতো, ভাবতাম বুঝি টায়ার্ড থাকে- আহা থাক। আমার মেয়েটাকে ভাল রেখেছে আর কি! আর শুধু পোড়া মরিচ ডলা, ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে ভাত খেতো। বকা দিতাম, গ্যাস্ট্রিক হবে, কে শুনে কার কথা! খা, বেশি করে খা, মরিচ ই তো!

এর মধ্যে ডেকে একদিন জিজ্ঞেস ও করলাম, "এই তোর শরীর খারাপ ( পিরিয়ড) হচ্ছে না কেনো, এক মাস প্রায় পার হলো?" বলল, " আপা আমার প্রায় ৫/৬ মাস হচ্ছে না শরীর খারাপ! আর আমার পেটের ভেতর ভার ভার লাগে, কি যেন নড়ে!" আমার তো তখন দম - বন্ধ অবস্থা ডাকাত মেয়ে বলে কি?

পেটের ভেতর কিছু নড়ার অর্থ সে বুঝে!! তখন বাজে রাত ন'টা। পাঠালাম প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট স্ট্রিপ নিয়ে আসতে, ইউরিনটা টেস্ট করলাম নিজের হাতেই, প্রেগ্ন্যান্সি পজিটিভ। আমি জানতাম, এডভান্স স্টেজে ইউরিন রাতেও চেক করলে পজিটিভ ই আসে, সেক্ষত্রে সকালের প্রথম ইউরিন লাগে না।

মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো! কি করবো আমি এই মেয়ে নিয়ে, কই যাবো। সাহস সঞ্চয় করে সরবরাহকারীকে ফোন দিলাম, বিস্তারিত বললাম। তিনি নিজেও চিন্তিত। আমি সারারাত তার পাশে শুয়ে- বসে কাটালাম, পাছে ভয়, না কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। সকালে তাকে নিয়ে ছুটলাম যেখান থেকে এনেছিলাম সেখানে রেখে আসবো।

পথে বুঝাতে লাগলাম, হিরো কে, নাম কি, তুই বুঝতে কেন পারিসনি, নিজের এত্ত বড় সর্বানাশ কেন করেছিস? ইত্যাদি ইত্যাদি......। উত্তরে শুধুই কান্না!

লেখক: খুরশিদ জাহান, শিক্ষক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়