রবিন আকরাম : কোটা সংস্কারের আন্দোলন দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভে ফেসবুকে উসকানির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ।
পুলিশের এই অভিযানে গ্রেফতার হওয়া অনেকেই জেলের ঘানি টানছেন আবার অনেকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে ফেরারি জীবন-যাপন করছে।
সরকারের এই অবস্থানের সমালোচনা করে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সমাজের আর কেউ যাতে কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর সাহস না পায়, সেজন্য ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে সরকার৷
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ভয়চে ভলেকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁদের ১০ জন যুগ্ম আহ্বায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এর বাইরে যারা আছে, তারা সবাই পলাতক৷ তারা বাড়িঘর বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে থাকতে পারছে না। আমি নিজেও ঢাকা শহর ছেড়েছি। এখন নানাভাবে নানা জায়গায় থাকছি।
এদিকে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ঘিরে বুধবার পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন এবং বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই কারাগারে আছেন।
এছাড়া বুধবার পর্যন্ত আন্দোলনে উসকানির অভিযোগে ৫১ মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ জন।
ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় আসে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ৷
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই অভিযানকে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন মানবাধিকারকর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান৷
তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে আমার মনে হয়েছে, সরকার সমাজে একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখতে চায়। আর সে কারণেই এ ধরনের গ্রেপ্তার , রিমান্ড অব্যাহত আছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন বলেন আর কিশোর ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন বলেন, সরকার তাদের দাবি সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হতো। কিন্তু এখন যা সরকার করছে, তাতে মানুষকে সরকারের মুখোমুখি করে দিচ্ছে৷''
তিনি আরো যোগ করেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আর যাতে কোনো অবস্থায়, কেনো পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে না পারে, কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে, ন্যায্য দাবি নিয়েও যাতে আন্দোলন করতে না পারে, সেরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে৷''
আপনার মতামত লিখুন :