রোহিঙ্গা সমস্যাই ইসুকে সাংবাদিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে
ডেস্ক রিপোর্ট: একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কক্সবাজার প্রতিনিধি হিসেবে বেশ কয়েক বছর যাবত কাজ করছেন স্থানীয় মেয়ে ইসমাত আরা ইসু। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের কাজটাকে নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কিন্তু ইসুর সাংবাদিকতার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে রোহিঙ্গা ইস্যু। গত বছরের আগস্ট মাসে যখন মিয়ানমার থেকে স্রোতের মতো রোহিঙ্গারা উখিয়ায় আসতে শুরু করে তখন তাকে থাকতে হয়েছে মাঠে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলটির ঢাকা অফিসের প্রতিনিধিরা যখন সেখানে থেকে রিপোর্ট করেছেন তখন তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন ইসু। ঢাকা অফিসের সহকর্মীরা ফিরে আসার পরও থেমে যায়নি ইসুর কাজ। কাদামাটি আর বৃষ্টিতে ভিজে একনাগাড়ে ১১৫ দিন কাজ করে টাইফয়েড বাধিয়ে ছিলেন। কিন্তু তাতে ইসুর কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ ইসুর মতে, এই রোহিঙ্গা সমস্যাই তাকে একজন সাংবাদিক হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
নিজের সাংবাদিক হওয়ার পেছনের গল্প বলতে গিয়ে ইসু জানান, ছেলেবেলায় টিভিতে প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনচিত্র তাকে আবেগপ্রবণ করেছিল। ‘একজন নারী ফটোসাংবাদিক ক্যামেরা হাতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ছবি তুলছেন আবার একটি শিশুকে রক্ষা করছেন।’ সেই বিজ্ঞাপন থেকেই তিনি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ছেলেবেলায় শিশু সাংবাদিকতা করেন তিনি। বড়ভাই সাংবাদিক ছিলেন বলে তার একটা প্রভাবও ছিল। সাংবাদিকতায় পড়ার ইচ্ছাও ছিল তার কিন্তু পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। ছেলেবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারিক সমস্যার কারণে পড়াশুনায় সাময়িক বিরতি নিতে হয়। তিন বছর পর ভর্তি হন উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসি, এসএইচসি পাস করে ঢাকায় আসেন সাংবাদিকতা নিয়ে পড়বেন বলে। ইসুকে ঢাকায় পাঠিয়ে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফিরে যেতে হয় কক্সবাজারে। চাকরির পাশাপাশি ডিগ্রি পাস করেন। এক সময় ফটোসাংবাদিক হওয়ার জন্য কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুটো ক্যামেরা হারানোর পরে ফটোসাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এরপর ভাইয়ের বন্ধুদের সহযোগিতায় একটি রেডিও পোর্টালে উপস্থাপনার সুযোগ পান। পরে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরে স্থানীয় প্রতিনিধির জন্য লোক খুঁজলে সেখানে আবেদন করেন। সেখানে দুই বছর কাজ করেন। এরপর থেকে এখনও কাজ করছেন নিউজ টুয়েন্টিফোরে।
ইসুর মতে, ঢাকার বাইরে মেয়েরা যে শুধু চ্যালেঞ্জের জন্য সাংবাদিকতায় আসেন না তা নয়। আরও একটি বড় কারণ এখানে পারিশ্রমিক কম। একজন অনার্স, মাস্টার্স করা নারী সাংবাদিকতার চেয়ে কম সময় দিয়ে, চ্যালেঞ্জ না নিয়ে ভালো পারিশ্রমিকে কাজ করতে পারলে কেন সাংবাদিকতায় আসবে? ইসু সাংবাদিকতায় আছেন ভালোবাসা থেকে। মাকে নিয়েই ইসুর সংসার ভালোই চলছে। তিনি এমন একজনকে বিয়ে করতে চান যিনি তার পেশার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে না।
-লেখাটি ইত্তেফাক থেকে সংগ্রহীত।
আপনার মতামত লিখুন :