ডা. অমৃত লাল হালদার : শিশুর বয়স ছমাস অর্থাৎ ১৮০ দিন পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়াতে বললেই মায়েদের সেই একই অভিযোগÑ বুকে দুধ নেই, দুধ পায় না অথবা বাচ্চা খায় না। আসুন জেনে নিই, কী কী কারণে বুকে দুধ কমে যেতে পারে অথবা তৈরি না হতে পারে।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মা-ই অপুষ্টিতে ভুগে থাকেন। তারপর আবার গর্ভবতী মায়েদের খাবার নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের কুসংস্কার। এটা খুব বড় একটা সমস্যা। তাই গর্ভাবস্থায় ও দুগ্ধদানকালে মাকে পুষ্টিকর এবং পরিমাণে একটু বেশি খাবার দিতে হবে। দ্বিতীয় বড় সমস্যা, বিভিন্ন কারণে বুকের দুধ খাওয়াতে মায়েদের অনিচ্ছা। শিশু বুকের দুধ টানলে সেই উত্তেজনা মায়ের শরীরে দুধ তৈরির প্রক্রিয়া চালু করে দেয়। বুকের দুধ তৈরির ব্যাপারে মাকে তাই অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সঠিক পদ্ধতি এবং অবস্থানে শিশুকে না খাওয়ালে শিশু আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না এবং স্তনে ব্যথা, স্তন ফেটে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের কাছে সঠিক পদ্ধতি শিখে নেওয়া আবশ্যক।
উদ্বেগ বা পারিবারিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি এবং কুসংস্কারের কারণে বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। মায়ের ঘুম ঠিকমতো না হওয়াও একটি বড় কারণ। এ ব্যাপারে পরিবারের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং মাকে সহযোগিতা করতে হবে। ফিডারে করে খাওয়ালে কিংবা চুষনি চুষতে দিলে নিপল কফিউসন হবে। শিশু বুকের দুধ টানবে না। কারণ এ ধরনের নিপল দিয়ে খাওয়া অনেক সহজ। কৌটার দুধ (ফর্মুলা) খাওয়ালেও তাই হবে। কৌটার দুধ বুকের দুধের চেয়ে বেশি মিষ্টি কিংবা সুস্বাদু। তাই বুকের দুধ আর টানবে না। সহজে মিষ্টি খাবার পেলে কি আর কেউ কষ্ট করে তিতে খাবার খায়! মায়ের বড় কোনো অসুখ এবং কিছু কিছু ওষুধের কারণেও অবশ্য বুকের দুধ কমে যেতে পারে। যা-ই হোক, মনে রাখতে হবে, বুকের দুধ শিশুর সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে মনেপ্রাণে আন্তরিক হতে হবে।
লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং আবাসিক চিকিৎসক, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ, ইব্রাহিম সরণি, সেগুনবাগিচা, ঢাকা
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়
আপনার মতামত লিখুন :