শিরোনাম
◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১০:০২ দুপুর
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ১০:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগে প্রার্থিতা নিয়ে বাড়ছে বিরোধ

শিমুল : ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী আংশিক) আসনে বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্না এবং ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান মাসুদ।

নির্বাচনের সময় যত এগোচ্ছে, প্রার্থিতা নিয়ে এমপির সঙ্গে এই তিন নেতার দ্বন্দ্বও তত বাড়ছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতা এলাকায় নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের প্রচার-প্রচারণায় বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরছেন তারা। তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম অনেকাংশে এমপি বিরোধিতায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ তিনবারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা নিজে মনোনয়ন না পেলে তার ছেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলকে প্রার্থী করার ব্যাপারে আগ্রহী। সজল মোল্লাও প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিয়ে আওয়ামী লীগের সৃষ্ট কোন্দলের সুযোগ নিয়ে আগামী নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রশিদ সরকার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক মনির হোসেন কমলও জোটের মনোনয়ন চান। তাদের মধ্যে আবদুর রশিদ সরকার ও মনির হোসেন কমল গত নির্বাচনে নিজ দল থেকে প্রার্থী হয়ে সামান্য ভোট পান। শহীদুল ইসলাম গত দুটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও ১৪ দলের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হলেও ভোটের তিন দিন আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে সমর্থন জানিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি। এ ছাড়া ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এখানে (তৎকালীন ঢাকা-৪) জাসদ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাসদের এই মুক্তিযোদ্ধা নেতা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত ডেমরা থানা, যাত্রাবাড়ী থানার ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড, মাতুয়াইল, সারুলিয়া ও দনিয়া ইউনিয়ন এবং কদমতলী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের দুই নির্বাচনে হাবিবুর রহমান মোল্লা বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালে অবিভক্ত ডেমরা-শ্যামপুর (তৎকালীন ঢাকা-৪) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি হন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে অবশ্য সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছেই হেরে যান তিনি।

আগামী নির্বাচনে এলাকার নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে সোচ্চার হয়েছে। দু'পক্ষের দ্বন্দ্বে এলাকায় প্রায়ই নানা অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টি উঠান বৈঠক ও সভা-মিছিল করেছেন। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে এমপিকে অবাঞ্ছিত করা ছাড়াও গত বছরের ১৮ মে আরেকটি সমাবেশে নেতারা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলে ধরেন।

এমপিবিরোধী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে নানা অপকর্মের মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা। দলীয় নেতাকর্মীদের বদলে নিজের পরিবার ও বিএনপি-জামায়াত-ফ্রিডম পার্টির নেতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন তিনি। জনগণ ও এলাকার উন্নয়ন না করে গত নয় বছরে এমপি ও তার পরিবার বাড়ি-গাড়ি-জমিসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। এমপির দুই ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল ও মাহফুজুর রহমান মোল্লা শ্যামল এবং মেয়ে জামাই বকুলে বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এলাকার স্কুল-কলেজগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদও এমপির ঘনিষ্ঠরা দখল করেছেন। বেশিরভাগ দলীয় নেতাকর্মীর অবস্থান তাই এমপির বিরুদ্ধে। এলাকায় এমপি সমর্থিত কয়েকটি দলীয় কার্যালয় থাকলেও বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে।

বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাবিবুর রহমান মোল্লার আগামী নির্বাচনের মনোনয়নপ্রাপ্তি অনিশ্চিত বলে দাবি এমপিবিরোধী অংশের। অশীতিপর হাবিবুর রহমান মোল্লা অবশ্য নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। সমকালকে তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়নে চারবার প্রার্থী হয়ে জনগণের ভালোবাসায় তিনবারই জিতেছেন তিনি। এর মধ্যে একবার জেলে থেকে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। এবারও প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন, না দিলে না-ই। তার ছেলে সজল মোল্লার প্রার্থী হওয়াটাও প্রধানমন্ত্রীর ওপরই নির্ভর করছে। তবে তাকে প্রার্থী করা হলে ভোটের মাঠেই জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেবেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এসব অভিযোগ করা হলেও একটি অভিযোগের প্রমাণও কেউ দিতে পারবে না। আর মুষ্টিমেয় যেসব নেতা তাকে (হাবিব মোল্লা) জনবিচ্ছিন্ন বলছেন, এলাকায় তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ও তাদের সঙ্গে কতজন নেতাকর্মী আছেন- সেটিও দেখা দরকার।

কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, দীর্ঘদিনের রাজনীতি ও কমিশনার থাকার সুবাদে এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। ২০০৮ এর নির্বাচনে প্রার্থী হলেও মহাজোটগত সমঝোতার কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এবার নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাকে নিরাশ করবেন না বলে তার বিশ্বাস।

হারুনুর রশিদ মুন্না বলেন, বর্তমান এমপি ও তার পরিবারের অপকর্মের কারণে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এলাকার দলীয় রাজনীতি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার রাজনীতির সঙ্গে আছেন দাবি করে মুন্না আরও বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমান এমপির পক্ষে উদ্যম নিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই তরুণ নেতৃত্বকে এগিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষিত, সচেতন, বিবেকবান ও আদর্শিক ব্যক্তিকেই প্রার্থী করা উচিত। এই বিবেচনায় তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, বয়সের কারণে তার বাবা হাবিবুর রহমান মোল্লা নির্বাচন করতে না পারলে তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। এটা এলাকাবাসী ও নেতাকর্মীদেরও প্রত্যাশা। তারসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এই অপপ্রচার যারা করছেন, সৎ সাহস থাকলে তারাই এসবের প্রমাণ দিন।

জাতীয় পার্টির মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক পরিচয়সহ এলাকার সমস্যা সমাধানে মেধা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় তার অবস্থান অনেক ভালো। তাই মহাজোট থেকে তার মনোনয়ন না পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই।

ন্যাপের আবদুর রশিদ সরকার বলেন, তার দল ও ১৪ দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। তবে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থী হওয়ার পক্ষপাতী নন তিনি। এমপির দায়িত্ব উন্নয়ন নয়, সংসদে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণ ও আইন পাস করা। সেই দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যেই এমপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।

জাসদের শহীদুল ইসলাম বলেন, মানুষের সেবা ও কল্যাণের লক্ষ্য নিয়েই রাজনীতি করেন তিনি। আরও বৃহত্তর পরিসরে জনসেবার সুযোগ পেতেই ১৪ দলের মনোনয়ন চাইবেন তিনি।

জাতীয় পার্টির (জেপি) মনির হোসেন কমল বলেন, এখানে আওয়ামী লীগে চারটি গ্রুপ থাকায় তৃতীয় পক্ষকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে কারও পক্ষেই জিতে আসা সম্ভব নয়। তাকে (কমল) প্রার্থী করা হলে আওয়ামী লীগের চার গ্রুপের সমর্থনে জিতে আসতে পারবেন তিনি।সমকাল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়