শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:২০ সকাল
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:২০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডিবি তুলে নিচ্ছে ছাত্রীদেরও

ডেস্ক রিপোর্ট : নানা অভিযোগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আটক করছে ডিবি পুলিশ, রেহাই পাচ্ছেন না ছাত্রীরা। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জন্ম নিচ্ছে আরেকটি গ্রেফতার ঘটনা। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরাই এসব গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নিরপরাধ দাবি করা হলেও আটক শিক্ষার্থীরা মুক্তি না পেয়ে উল্টো রিমান্ডের প্রহর গুনছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সামনে থেকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই হলের আবাসিক ছাত্রী শেখ তাসনিম আফরোজ ওরফে ইমিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা তুলে নিয়ে যান। আটকের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জিম্মায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিার্থী তাসনিম বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সংগঠন স্লোগান-৭১-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের এডিসি ওবায়দুর রহমান ও এডিসি ওবায়দুর রহমান জানান, তুলে নেওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ইমিকে ছেড়ে দেয়া হয়। ইমি ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিাবর্ষের শিার্থী। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ ছাড়া এই ছাত্রী সাংস্কৃতিক সংগঠন স্লোগান-৭১-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক কার্যকরী পরিষদের সদস্য। : ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত আটটার পর শামসুন নাহার হলের সামনে থেকে তাসনিমকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। তাকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাইবার অপরাধ বিভাগে হস্তান্তর করা হয়।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান জানান, তাসনিমকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ইমির গ্রেফতারের ঘটনার ১২ ঘন্টার ব্যবধানে গতকাল বুধবার ভোরে গ্রেফতার হয় আরেক ছাত্রী। কোটা আন্দোলনের নেত্রী ইডেন কলেজের শিার্থী লুৎফুন নাহার লুমাকে (২১) সিরাজগঞ্জের বেলকুচির যমুনা চরের দ্রি-গাছচাপরী গ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকার কাউন্টার টেরিরিজম এন্ড সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল টিম বেলকুচি পুলিশের সহায়তায় যমুনার চরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পরই তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। লুমার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী। তার বাবা-দাদার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচির দ্রি-গাছচাপরী গ্রামে। বেলকুচি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, লুমা ঢাকার ইডেন কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কয়েকদিন আগে লুমা তার চাচা শহর আলীর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম এন্ড সাইবার ক্রাইম কন্ট্রোল টিমের একটি বিশেষ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বেলকুচি থেকে গ্রেফতার করে। আটকের পর পরই তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লুৎফুর রহমান লোমা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। : এদিকে ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক গুজব ছড়ানো ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আরো দুই ছাত্রকে। এরা হলেনআহমাদ হোসাইন (১৯), নাজমুস সাকিব (২৪)। গ্রেফতারকৃত সাকিব ঢাকার ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়, আহমাদ কামরাঙ্গীরচরের জামিয়া নুরিয়া মাদ্রাসার শিার্থী। এদিকে ২৯ জুলাই পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেয়ায় ৫১ মামলায় ৯৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন জানান, বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিার্থী নিহতের ঘটনায় ফেসবুকে বিভিন্ন উসকানিমূলক গুজব ছড়ানোর অভিযোগে হোসাইন ও সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ঢাকা ও কামরাঙ্গীরচর থেকে তাদের গ্রেফতার করে সিআইডি। গ্রেফতারকৃত দুই শিার্থীর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে পল্টন থানায় গতকাল বুধবার মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, আহমাদ হোসাইন নোয়াখালীর কবিরহাটের আতাউর রহমানের ছেলে। আর নাজমুস সাকিবের বাবার নাম জহির উদ্দিন বাবর। তার বাসা পূর্ব রাজাবাজারে। আসলাম উদ্দিন বলেন, ৪ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম নিহত হওয়ার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কিছু দুষ্কৃতকারী মিথ্যা তথ্যসংবলিত বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করে। ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে দেশের ভাবমূর্তি ুণœ করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট লেখা, পোস্ট,ছবি ও ভিডিও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে সম্প্রচার করেছে। তিনি বলেন, সিআইডি কম্পিউটার ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম তদারকি করে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তদন্ত শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার ঢাকা ও কামরাঙ্গীরচর থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। : এর আগে নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে উল্টো গ্রেফতার হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্র। গত ৬ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আফতাবনগর এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামলে তাদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। ওই দিন এই দুই স্থান থেকে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিার্থী। পরদিন তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ভাটারা থানার পুলিশ ১২ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এর মধ্যে ৮ জন গ্রেফতার রয়েছেন। বাকি ৪ জন পলাতক। গত ১২ আগষ্ট রোববার আদালত চারজনের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশ কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাঁদের গ্রেফতার করেছে। আর পুলিশ বলছে, ছাত্ররা যে সহিংসতায় জড়িত ছিল তার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়া ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এমন কোনো তথ্য তারা পায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হাসান মাসুদ বলেন, তদন্ত চলছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ েেত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ তাঁদের সব ধরনের সহায়তা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্তসংশ্লিষ্ট ভাটারা থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। ফুটেজগুলোর মান ভালো হওয়ায় ওই দিন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিার্থীদের মুখাবয়বও স্পষ্ট দেখা যায়। এসব ধরে তারা একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলে পরবর্তী পদপে নেওয়া হবে। বাড্ডা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া বলেন, রিমান্ডে শিার্থীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং ভাঙচুরের কথা শিকার করেছেন। তবে তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি এখনো তারা স্পষ্ট নন। প্রত্যেক ছাত্রের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নেয়ার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তথ্য এলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে। সূত্র : দিনকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়