দেবব্রত দত্ত : বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর হার ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও ধূমপায়ী এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে, ৫ শতাংশ ও ৬.৬ শতাংশ। বাংলাদেশে গ্লোবাল এডাল্ট ট্যোবাকো সাভির্স (জিএটিএস) ২০১৭ এর গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই সাফল্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীর হার ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ)। এরমধ্যে, ধূমপায়ীর হার ১৮ শতাংশ (১ কোটি ৯২ লক্ষ) এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার ২০.৬ শতাংশ (২ কোটি ২০ লক্ষ)।
বধুবার সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা ফলাফল ঘোষণা করেন সংগঠনটি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতা (যেমন, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্য প্রদর্শন, তামাক কোম্পানি কর্তৃক অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন , পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান , খুচরা এবং লাইসেন্স ছাড়া তামাকজাত পণ্য বিক্রি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাকজাতপণ্য বিক্রি), কার্যকর তামাককর নীতির অভাব এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর আইনানুগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অর্জন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। আরও আশংকার বিষয় হচ্ছে, বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার নামে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তামাক কোম্পানি জাপান টোব্যাকো (জেটি) গ্রুপকে বাংলাদেশে সরাসরি ব্যবসার সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো পণ্যের বৈচিত্র্যময়তা এবং আগ্রাসী বিপণন কৌশল অবলম্বন করে দ্রুত স্থানীয় বাজার দখল করে নেয়, বিশেষ করে তরুণ সমাজ এতে আকৃষ্ট হয় বেশি। বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৩১ শতাংশই তরুণ। দেশে নতুন করে তামাক ব্যবসার সুযোগ দিলে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই অর্জন নস্যাৎ হয়ে যাবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশে গ্লোবাল এডাল্ট ট্যোবাকো সাভির্স (জিএটিএস) ২০১৭ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) এবং বাংলাদেশ সরকার ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী জনগোষ্ঠির উপর পরিচালিত হয়েছে। এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকিৃত জরিপ যা তামাক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণের একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর এই জরিপ পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের তামাক ব্যবহার সংক্রান্তএকটি তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায় এবং যার ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্যের উপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব নির্ধারণ ও সেই আলোকে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পণা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এর আগে ২০০৯ সালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল।
আপনার মতামত লিখুন :