শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:২৬ সকাল
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:২৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘বুড়োরা কেবল বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে খাবেন’

আহমাদ মাযহার: বুড়োদের আর বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ে লাভ নেই। কারণ, তাঁদের দিয়ে আর কিছু হবে না। তাঁরা কেবল বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে খাবেন।

ছোটরা বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানুক। তিনি যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন সে কথা জানলে ছোটরা সেই লক্ষ্যেই নিজেদের জীবনকে গড়ে তুলবে। তারাও চাইবে বঙ্গবন্ধুর মতো দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে!
ছোটদের জন্য বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার লেখা একটা ছোট্ট প্রবন্ধ এখানে তুলে ধরছি। সেইসব বড়রাও পড়তে পারেন যাঁদের মন এখনো ছোটদের মতো বিকাশমান। তবে যাঁরা এরই মধ্যে ধেড়ে ইঁদুর হয়ে গেছেন তাঁদের পড়বার দরকার নেই!

সাহস যোগান বঙ্গবন্ধু
আহমাদ মাযহার

বড় বড় মানুষের জীবনী কেন পড়ি আমরা! পড়ি তাঁদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে। কেমন করে তাঁরা বড় হয়েছেন, মানুষের জন্য কিভাবে তাঁরা আত্মদান করেছেন সেই সব জানতেই আমরা জীবনী পড়ি। বেশি করে পড়ি আমাদের দেশের সেইসব ছেলেদের কথা যাঁরা কথায় নয়, কাজে বড়। কারণ তাঁরাই আমাদের সুন্দর জীবনের জন্য পথ তৈরি করে দিয়েছেন নিজেদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। তেমনি সবচেয়ে ‘কাজে বড়’ মানুষদের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি বাঙালি জাতি কখনোই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্তা ছিল না। বঙ্গবন্ধু বচ্ছেন সেই ‘কাজে বড়’ মানুষ যাঁর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়বার অধিকার অর্জন করেছে। তাই আমাদের বার বার বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়তে হবে। পড়ে পড়ে বুঝে নিতে হবে কিভাবে তিনি মানুষের মঙ্গলের জন্য জীবনকে বাজি রেখেছিলেন। কিভাবে তিনি আমাদের জন্যে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ফুলটিকে!
বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে সবচেয়ে বড় করে আমরা দেখি যে, কীভাবে মানুষের মঙ্গল করা যায় তা নিয়েই তিনি ভাবতেন সবচেয়ে বেশি। সেই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই তাঁর রাজনীতির ভুবনে চলে আসা। আর এর মূলে ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে মিশেছিলেন তিনি; আন্তরিক সঙ্গী হয়েছিলেন তাদের বিভিন্ন সংগ্রামের। মানুষের সঙ্গে থেকে থেকেই তিনি বুঝে নিতে পেরেছিলেন তাদের আশা-আকাক্সক্ষাকে। জনসাধারণের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে পেরেছিলেন বলেই মানুষের ভালোবাসাও তিনি পেয়েছিলেন। আর এর জোরেই তিনি পরেছিলেন সকল ভয়কে জয় করতে। তাই জেল-জুলুমও তাঁকে নিবৃত্ত করতে পারে নি কিছুতেই। আমাদের ছোটরা যারা লেখাপড়া করছে, গড়ে তুলছে নিজেদের জীবনকে তারা যদি মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজেদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তাদের জীবন সার্থক হবে কিভাবে? আমরা দেখি বঙ্গবন্ধুর জীবন সারাক্ষণই আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা।
দেশের সব মনুষের জন্য প্রধানত অন্ন বস্ত্র বাসস্থান চিকিৎসা আর শিক্ষার ব্যবস্থা করা রাজনীতিবিদদের কাজ। কেবল তাই নয়, সব মানুষ যেন ন্যায়বিচায় পায় তার ব্যবস্থা করাও তাঁদেরই দায়িত্ব। দেশ পরিচালনা করার কথা রাজনীতিবিদদেরই। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন যে তিনি মানুষের জন্য অধিকার আদায় করতে চান। আর যেভাবে তিনি তা করতে চান তা করতে হলে তাঁকে রাজনীতিবিদই হতে হবে। বঙ্গবন্ধুও তাই হয়ে উঠেছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যেই তিনি কাজ করেছেন সারাজীবন। সবাই হয়তো তাঁর মতো রাজনীতিবিদ হতে পারবে না কিন্তু মানুষের জন্য সত্যিকারের মঙ্গলচিন্তা তো সবাই করতে পারে! যে যার ক্ষেত্রে থেকে সব সময় যদি মানুষের মঙ্গল চিন্তা করতে পারে এবং তার জন্য নিজের জীবনকে বাজি রাখতে পারে তাহলেই না তাঁর জীবনের কথা জানা সার্থক হবে!
উন্নত দেশ মানে যে দেশের মানুষেরা নিজেদের বুদ্ধিবিবেচনা দিয়েই নিজেদের জন্য দরকারি রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই শিশু বয়স থেকেই দেশের নাগরিকদের গড়ে তুলতে হয়। রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই গড়ে তোলার কাজও পরিচালনা করেন রাজনীতিকেরাই। একটা দেশের মানুষ যেন মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে দেশে সে-রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি করাও সে-দেশের রাজনীতিকের কাজ। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু তা অনুভব করেছিলেন। সে সময়ের রাজনীতিবিদদের কারও কারও মধ্যে এই গুণটিকে তিনি দেখেছিলেন বলেই রাজনীতির ভুবনে আসবার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।
তিনি অনুভব করেছিলেন নিজেদের ভূখণ্ডে যত প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার সুফল যেন দেশের সব মানুষ ভোগ করতে পারে তার দিকেও নজর রাখতে হয় রাজনীতিকদের। মানুষের সঙ্গে মিশে মানুষকে এমন ভাবে তাঁরা উদ্দীপ্ত করেন যাতে দেশের মানুষের সব ধরনের সম্পদ বৃদ্ধি পায়। কেউ যেন দরিদ্র না থাকে। আর তাই যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদের চেষ্টা থাকে রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার লাভ করার। বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব না নিলে মানুষের স্বপ্ন পূরণ করা যাবে না। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে হবে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নিতান্ত কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতিক হয়েছিলেন দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে। রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব তিনি নিতে চেয়েছিলেন নিজের সুখের জন্য নয়, দেশের সকল মানুষের সুখের জন্য।
তিনি জানতেন রাজনীতির পথ আরামদায়ক ও মসৃণ নয়, বরং কণ্টকাকীর্ণ। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে মানুষের কল্যাণ করতে অনেক ত্যাগের প্রয়োজন। সেই মহিমাময় ত্যাগের বিনিময়ে তিনি অর্জন করেছিলেন মানুষের ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার শক্তিতেই তিনি সাতই মার্চের ভাষণে তিনি বলতে পেরেছিলেন ‘দাবায় রাখবার পারবা না!’
মানুষের প্রতি তাঁদের যে অকৃত্রিম ভালোবাসা ছিল সেই ভালোবাসাটাই বঙ্গবন্ধুকেও পথ দেখিয়েছে। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ১৩টি বছর তাঁর কেটেছে কারাগারের অন্তরালে বন্দী অবস্থায়। কিন্তু তাঁর শরীর কারাগারে বন্ধ করলে কী হবে মনটাকে তো বন্দি করতে পারেনি! মানুষের মঙ্গলচিন্তাকে তো বেঁধে রাখতে পারে নি! মানুষের প্রতি ভালোবাসাময় সেই মুক্ত প্রাণই তাঁকে সংগ্রামের শক্তি যুগিয়েছে। এক সময় তাঁর এই মঙ্গলচিন্তা ও মুক্তির স্বপ্ন তাঁকে পথ দেখিয়েছে সংগ্রামের। পাকিস্তানের কারাগার তাঁকে আটকে রাখতে পারে নি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতীক! বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও মুক্তির আকাক্সক্ষা খালি মনে মনে পোষণ করে তো তিনি বসে থাকেন নি! এর জন্য দায়িত্ব নিয়েছেন। তুচ্ছ করেছেন প্রাণের ভয়কে! তাই তো আমরা দেখেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন নির্ভিকচিত্তে। একদিন বাঙালির জন্য এনে দিয়েছেন স্বাধীন একটি রাষ্ট্র। বাংলাদেশের আজকের ছোটরাও তেমনি স্বপ্ন দেখবে সোনালি ভবিষ্যতের। সেই ভবিষ্যতে পৌঁছতে তাদেরও পাড়ি দিতে হবে অনেক কঠিন পথ। অনেক কারাগার তাদের চাইবে বন্দি করে রাখতে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে তাদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষার মুক্তপ্রাণকে সবসময় জাগিয়ে রাখতে হবে। তাহলেই দেখা যাবে আজ যারা ছোট আছে তারা যখন বড় হয়ে উঠতে থাকবে তখন তাদের মুক্তপ্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে যত বাধা আর ভয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন তো তাদের সব সময় সেই সাহসই যোগায়!

লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগ্রহীত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়