শিরোনাম
◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলার নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা (ভিডিও) ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ফসফরাস বোমা হামলা

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:২১ সকাল
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গ্রাহক ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অপারেটররা

কান্তা আইচ রায় : এতদিন একই অপারেটরে ফোন করলে, অর্থাৎ গ্রামীণ থেকে গ্রামীণ বা রবি থেকে রবিতে ফোন করলে সর্বনিম্ন কলরেট ছিল ২৫ পয়সা, আর এক অপারেটর থেকে অন্য যে কোনো অপারেটরে ফোন করলে কাটা হতো সর্বনিম্ন ৬৫ পয়সা।

সর্বনিম্ন কলরেটের নিম্নমাত্রা ২৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৪৫ পয়সা হওয়ায় সাধারণ মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও, অধিকাংশই বলছেন সর্বনিম্ন কলরেট বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রামের বাসিন্দা তানজিলা ইসলাম বলেন, ‘আপনজনদের সাথে এখন দূরত্ব তৈরি হবে। আগে এফএনএফ (ফ্যামিলি এন্ড ফ্রেন্ডস) থাকায় পরিবারের সদস্যদের সাথে নির্দিষ্ট খরচে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারতাম, এখন সেটা কমে যাবে।’

মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা কম খরচে সহজলভ্য হওয়াতে কি যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতিমা তানজিম জানান, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও তার বাবা-মা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অতটা পরিণত না হওয়ায় কলরেট বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তিনি।

তবে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত মহুয়া সাইয়েদার মতে, পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভিন্ন অপারেটরে কলরেট কমে যাওয়ায় পেশাগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হবে।

কী কারণে কলরেট বৃদ্ধি এমনটা জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মতে, বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারের সিংহভাগ শেয়ার একটি মোবাইল কোম্পানির দখলে থাকায় ভিন্ন কলরেটের কারণে এতদিন সুবিধা পেয়ে আসছিল তারা। নতুন আইন অনুযায়ী, বাজারের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেলি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক।

মি. হক বলেন, ‘যারা একটু দুর্বল অপারেটর তারা এবার একটু শক্তিশালী হতে পারবে।’

সরকারের এই নির্দেশনার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করেন মোবাইল ফোন সেবাদানকারী সংস্থা রবি’র কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান শাহেদ আলম।

মি. আলম বলেন, "অন-নেট আর অফ-নেট ব্যবস্থায় আলাদা কলরেট থাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বিভিন্ন অপারেটরের কয়েকটা সিম থাকতো। এখন কলরেট এক হয়ে যাওয়ায় সেই সমস্যা আর থাকবে না। সর্বনিম্ন কলরেট বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কথা বলার খরচ বাড়বে।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হকের মতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম আয়ের মানুষের।

সায়মা হক বলেন, ‘বাংলাদেশে নিম্ন আয়ের এমন অনেক মানুষই আছেন যারা কলরেট সামান্য বেড়ে যাওয়াতেও প্রভাবিত হন। এই নতুন আইন বাস্তবায়নের ফলে তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’

টেলিকম বিশেষজ্ঞ এবং লা এশিয়া সিরিয়ার পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান এর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত, আগে সাধারণ গ্রাহকদের টেলিফোন খরচ ছিলো সেটাকে সরকার নিজ উদ্যোগে দ্বিগুণ করে দিয়েছে। যার ফলে সাধারণ গ্রাহকদের এখন দ্বিগুণ মূল্য গুনতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের কল রেট সবচেয়ে কম ছিল। এখন উপরের দিকে যাবে। কিন্তু সবচেয়ে নিচের দিকে থাকা সত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম লাভজনক মোবাইল বাজার। টেলিনরের বিবরণী দেখলে তা সহজেই বোঝা যাবে। গ্রামীণ ফোন হচ্ছে টেলিনরের সবচেয়ে লাভজনক একটি কার্যক্রম। সুইডেন ,নরওয়ে ডেনমার্ক ,মালেয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড সহ সব দেশের থেকে টেলিনর গ্রামীন ফোনের মাধম্যে বেশি টাকা লাভ করে থাকে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ধনী ব্যক্তিরা আরো ধনী হবে এবং গরীব গ্রাহকদের শোষণ করবে।

তিনি আরো বলেন , এর আগে ২৫ পয়সা ছিলো এখন তা ৪৫ পয়সা করা হয়েছে এর সাথে তো আবার নানা ভ্যাটযুক্ত হবে। ফলে এটা অনেক বেড়ে যাবে। যে সব যুক্তি দেয়া হচ্ছে তা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে এসব নিয়ে কেউ কথা বলে না। এত কথা না বলে সেবার মানের দিকে তাকাতে হয়। আমরা অনেক বড় মুখ করে বলি আমরা ৪ জি’তে এসেছি কিন্তু দিনে দুপুরে মানুষের সাথে এখানে প্রতারণা করা হচ্ছে। এবং গ্রাহকদের অত্যন্ত নিম্নমানের সেবা দেওয়া হচ্ছে। অপারেটররা গ্রাহক ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং সরকার কিছুই বলছে না।

তবে অন্যান্যের মত তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বাজার প্রতিযোগিতামূলক হবে। কোনো বিশেষ কোম্পানি যেন বাজারে তাদের প্রভাব খাটিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতেই এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি।

বিটিআরসি ও মোবাইল কোম্পানিগুলোর বক্তব্য অনুযায়ী, বিশ্বের সব দেশেই মোবাইল ফোনে সর্বনিম্ন কলরেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হয়। সূত্র : বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়