শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৮ সকাল
আপডেট : ১৫ আগস্ট, ২০১৮, ০৬:০৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মন খারাপের দিনে কোনো উল্লাস চাই না পিতা

অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি: আমরা আবেগী জাতি। আবেগ আমাদের যেমন ভালো করে তেমন মন্দও করতে ছাড়ে না। পনের অগাস্টকে নিয়েও আমাদের দুই ধরণের আবেগ কাজ করে। যদিও কথা ছিল কেবল শোকাবহতা ছাড়া আর কিছু কাজ করবে না। কারণ আমাদের সবার জানা। যেটা আমরা জানি সেটাই যদি মানতাম দেশ ও সমাজের এই হাল হতো না। এতবছর পরও আমরা জাতীয় ঐক্য বা একমতে পৌঁছুতে পারিনি। এর দায় খালি বিরোধীদের কাঁধে চাপালে চলবে না। তবে তাদের বেঈমানী আর বিশ্বাসঘাতকতা ভুললেও চলবে না।

বঙ্গবন্ধু যখন সাধারণ মার্জনা ঘোষণা করেছিলেন তখন ঢাকা কারাগারে এক সভায় মিলিত হয়ে তখনকার যুদ্ধাপরাধীরা ঘোষণা করেছিলেন তাদের দ্বিতীয় জন্মের জন্য তারা বঙ্গবন্ধুকে পিতা মনে করবেন সারাজীবন। কারণ তিনিই তাদের দ্বিতীয় জীবন দান করেছেন। তারা সে কধা রাখেনি। উল্টো ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করেছিল। এরপর আমরা কি দেখেছি? খালেদা জিয়া তার স্বামী যা করেনি বা করতে সাহস করেনি তাই করলেন। অকারণে শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে কেক কাটা শুরু করলেন। সে কি নারকীয় উল্লাস, যেন বঙ্গবন্ধুই তাদের দুশমন। বছর বছর সে কেকের সাইজ বাড়তে লাগল। মনে আছে তাকে ঘিরে থাকা নেতাদের ছবি। সেই আমান মিয়া, সেই মওদুদ আহমেদ, সেই গয়েশ্বর বা মির্জা আব্বাস এখনো বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়। আর বেচারী খালেদা জিয়া কারাগারে হয়তো একটি কেকের জন্য দিন গোনে। খুব কি দরকার ছিল?

কেউ কথা শোনে না। এমনকি সরকারি দলও না। একটা সময় মানুষ পাড়ায় মহল্লায় সাত মার্চের ভাষণ শোনার জন্য কান পেতে থাকত। কখন সেই বজ্রকন্ঠ বলবে, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি... আজকাল কেউ আর হুকুমের তোয়াক্কা করে না। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সে ভাষণ কানে তালা ধরানোর মতো করে বাজিয়ে যায় কেউ কেউ। এর উদ্দেশ্য আমরা সবাই জানি। না আছে আদর্শ না ভালোবাসা । খালি ধান্দাবাজী। বঙ্গবন্ধু তো ধান্দার বিষয় না। তিনি তার সারাজীবন ত্যাগ করেছেন আমাদের ভালোর জন্য। তার একটা গল্প মনে পড়ছে। যখন তিনি কারাগারে তখন তাকে পত্রিকা দেওয়া হতো সেন্সর করে। তার ভাষায় যেটুকু তার খবর সেটুকু কেটে। তিনি বলেচিলেন কাটা জায়গাটা দিয়ে তিনি শুরুতে আঙুল গলাতে পারতেন। একসময় হাত। পরে এমন হলো তার মুখ ও বেরিয়ে আসতে শুরু করল ফাঁক গলে। হাসতে বলেছিলেন তখনই তিনি বুঝে নিয়েছিলেন মুক্তির দিন আসল বলে। কে তাকে ঠেকায় আর? সেই বঙ্গবন্ধুর ইমেজ এখন কাদের হাতে?

যাদের পঁচাত্তরের ভূমিকা হয় ষড়যন্ত্রকারীর নয়তো সন্দেএর তারাই এখন নেতা। কেউ ট্যাংকের ওপর উঠে নাচা আর কেউ আনন্দে মত্ত হবার মানুষ। তারাই এখন রাতদিন তার নামে মুখে ফেনা তোলেন। এই দেশ ও রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে কিভাবে মনে রাখবে? কিভাবে তিনি নতুন প্রজন্মে আরো গভীরভাবে প্রভাব ফেলবেন? মানতে হবে এখন দলের ইমেজ সংকটে। এখন মানুষ নানা কারণে বিরক্ত। ফলে আগামী দিনগুলোয় শুদ্ধতার বা আত্মসমালোচনার বিকল্প নেই। সেটা কি করতে রাজি কেউ। একটা কথা মনে করিয়ে দিই দুশমন বলুন আর বন্ধু বলুন ভারত পাকিস্তান কেউ তাদের জাতির জনক নিয়ে এমন করে না। আমরা করি। এই করাটা আইন করে বন্ধ করা যাবে না। এরজন্য চাই সকলের ভালোবাসা। সে জায়গাটা যারা নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে সজাগ হতে হবে। বারবার তাকে ব্যবহার করা অপব্যবহার করা বন্ধ করে প্রকৃত ইমেজের উম্মোচন চাই আমরা।

জানি সহজে হবে না। তবে ভরসা ইতিহাস। এটা নিশ্চিত আর যেখানেই থাকুন পনের অগাস্ট তিনি এসে দাঁড়ান আমাদের শ্যামল মাটিতে। আমরা দেখি না। পাখি জানে, ফুল বোঝে, মেঘ কাঁদে হাওয়া সজল হয়। তারা তার রক্তাক্ত পায়ে চুমু খায়ল বলে, আমরা কিছু করি না পিতা। তুমি আমাদের মাফ করে দিও। মাফ চাইবার দিনে শোকের সকালে এত উল্লাস তার ও ভালো লাগে না। তিনি জানেন কারা আনন্দিত হয়েছিল। কারা সেদিন বলেছিল ফেরাউনের জামনা খতম হয়েছে। আজ তাই কেবলই শোকাবহ দিন। আজ মন খারাপের দিনে তাকে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, এই দেশ ও মাটিকে এই জনগণকে আমরা ভালোবাসবো। বিপথে যেতে দেব না। আমরা তা না করলে সেই রক্তধারা শিশু রাসেলের রক্ত পিতার সাথে মিলে আমাদের মার্জনা করবে না। আমরা কি তা করতে চাই ?
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়