শিরোনাম
◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল

প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:২১ রাত
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ০৩:২১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির মেরুকরণে মোদীর আবির্ভাব

অতনু ভট্টাচার্য : সেদিনটা ছিল শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ গুজরাটের মুখ্য মন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর নাম লোক সভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী রূপে ঘোষণা করলেন দল সভাপতি রাজনাথ সিং। তখন ওদিকে গোঁসা ঘরে চলে গিয়েছেন দলের শীর্ষতম নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি, বয়কট করেছেন দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক। সংসদীয় বোর্ডের ঐ বৈঠকে আদভানিকে ছেড়ে উপস্থিত ছিলেন দলের অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা মুরলি মনোহর জোশি, সুষমা স্বরাজ, অরুন জেটলি এবং নিতিন গডকড়ি। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং সংঘের সঙ্গে ২০১৪ এর নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে আলোচনা চালিয়েছিলেন।

লোকসভার এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজেপির মুখ কাকে করা হবে সেই নিয়ে বিজেপি ও সংঘের বড় মাথাদের সঙ্গে মধ্যে এক ম্যারাথন আলোচনা চলেছিল প্রায় এক বছর ধরে। উঠে এসেছিলো বেশ কয়েকটি নাম। দলের শীর্ষ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি ছাড়া যারা যারা বিজেপি সভাপতির তালিকায় ছিলেন তাদের মধ্যে রাজনাথ নিজে, সুষমা স্বরাজ, মুরলি মনোহর জোশির মতো নেতা।

নরেন্দ্র মোদির নাম বিজেপির তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন আদভানি নিজে। তার যুক্তি ছিল ১০ বছর ধরে চলা মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে চলা কংগ্রেসের নীতি হীনতার সরকার এর বিরুদ্ধে মোদী কে দাঁড় করালেই কংগ্রেস তাদের ব্যর্থতার দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে মোদির ২০০২ এর দাঙ্গার বিষয়টি তুলে বাজি মেরে নিতে সুবিধা পাবে। কিন্তু আদবানির এই যুক্তিকে খারিজ করে দিয়ে সংঘের তরফ থেকে মোদীকেই তুলে ধরার সবুজ সঙ্কেত দেয়া হয়।

সংঘ প্রধানের তরফ থেকে আদবানির যুক্তিকে খারিজ করে বলা হয়েছিল রাম মন্দির আন্দোলনের ম্যাসকট আদভানি কিভাবে ক্ষমতার লোভে রাতারাতি নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ প্রমাণিত করতে পাকিস্তান সফরে গিয়ে দেশ ভাগের নায়ক জিন্নাহকে ধর্ম নিরপক্ষেতার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন।আদভানির এই সফরের পিছনের কারিগর ছিলেন বামপন্থী চিন্তাধারার সুধীন্দ্র কুলকার্নি যাকে আদভানি সঙ্ঘের আপত্তি সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক রণকৌশল তারই করার দায়িত্ব সঁপেছিলেন। সেই পাকিস্তান যাত্রার পরপরই আদভানিকে হয় তার দল সভাপতির পদ এবং বাটি-ঘটি কেড়ে নিয়ে এক প্রকার তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল কুলকার্নিকে ।

শেষ পর্যন্ত ২০১৪ নির্বাচনী প্রচারে দিন রাত এক করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়ে মোদির হাওয়া এলোমেলো করে দিলো বিরোধী শিবিরের যত প্রাক নির্বাচনী অঙ্কও। মোদী দেশবাসিকে দেখালেন আচ্ছে দিনের স্বপ্ন। এই আচ্ছে দিনের স্বপ্নকে মূলধন করে মোদির নেতৃত্বে বিজেপি একাই ২৮২ আসনে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেল। শরিকদের সঙ্গে নিয়ে এই সংখ্যা পৌছালো ৩১৬ তে। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসের পাতায় রচিত হলো এক গৈরিক ইতিহাস।

শপথ নেয়ার পূর্বে সংসদের সেন্ট্রাল হলে নেতা নির্বাচিত হয়ে প্রথম ভাষণেই ইন্দিরা গান্ধীর গরিবি হটাও এর স্লে­াগান তুলে ফেললেন মোদী। মোদির বক্তব্য জুড়ে ছিল গরিব দলিত শোষিতদের কথা। তিনি বললেন ‘আমার সরকার হবে গরিব দলিত পীড়িত শোষিত দের জন্য সমর্পিত সরকার।’ সেন্ট্রাল হলেই দেখা গেলো আর এক নাটক, আদভানি তার ভাষণে একটু শ্লেষ জুড়ে বললেন আমরা আজ মোদির কাছে কৃতজ্ঞ তিনি আমাদের এই দিন দেখিয়েছেন। সেই কথা শুনে মোদী প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, দলই আমার মা বাপ মা বাপের ঋণ চোকানো কখনো কৃতজ্ঞতা হতে পারে না ।

২৬ মে ২০১৪ রাষ্ট্রপতি ভবনের লনে প্রধানমন্ত্রী রূপে শপথ নিলেন মোদী। সার্ক দেশের প্রধানদের আমন্ত্রণ করে বেশ ভালোই চমক দিয়েছিলেন মোদী। শুরু হলো এবার গৈরিক সরকারের আসল পথ চলা ।

মোদীকে জানতে হলে আমাদের একটু পিছনে যেতে হবে ও ১৯৯৬ বাজপেয়ী ১৩ দিনের সরকারের আস্থা ভোট ও প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী ভোটাভুটির আগেই ইস্তফা দিয়ে দিলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ওই প্রথম এক অকংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী বলতে গেলে কট্টর দক্ষিণ পন্থী দলের প্রধানমন্ত্রী দিল্লির মসনদে বসেছিলেন। দলের রণকৌশল তৈরির দায়িত্বে থাকা লাল কৃষ্ণ আদভানির রণনীতি মাফিকই বাজপেয়ী ১৩ দিনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এটা নিশ্চিত জেনেই যে অন্য কোনো দল তাকে সমর্থন দেবে না। সফল হলো আদভানির রণনীতি ২৩ মাসের মধ্যেই পতন হলো ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের। দেশ দেখলো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনাই কংগ্রেসের হুমকির কাছে মাথা নোয়াতে ওই ইউনাইটেড ফ্রন্ট নেতাদের। একে একে দেবগৌড়া-গুজরালকে প্রধানমন্ত্রী করে তুর্কি নাচন নাচাতে লাগলো কংগ্রেস।

১৯৯৮-এর নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ লোকসভার নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবার দিল্লি­র ক্ষমতায় বাজপেয়ী। এবার ১৩ মাসে আন্না ডি এম কে নেত্রী জয়ললিতার সমর্থন প্রত্যাহার এর জন্য পতন হলো বাজপেয়ীর দ্বিতীয় দফার সরকারের ও ১৯৯৯ এ আবার অর্ন্তবর্তী নির্বাচনে এন ডি এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে তৃতীয় দফার সরকার ও এই সরকার চলেছিল পুরো ৫ বছর ২০০৪ পর্যন্ত।

এর পর ১০ বছর অপেক্ষা করতে হলো গেরুয়া শিবিরকে ৩০ বছর পর শেষ হলো শরিক দের ওপর নির্ভরশীল সরকারের জমানা ও কট্টর হিন্দুত্বের মুখ মোদিকে নেতৃত্বে এনে আর এস এস বুঝিয়ে দিলো দেশ এবার চলবে হিন্দুত্বের পতাকার তলায়। ৭০ বছরের কংগ্রেসি শাষণকালের ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে দিতেই মোদীকে নিয়ে আসা হলো সরকারের নেতৃত্বে। (চলবে)

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক যুগশঙ্খ, ভারত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়