শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২৯ দুপুর
আপডেট : ১৪ আগস্ট, ২০১৮, ১২:২৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জামিন মিলছে না শিক্ষার্থীদের

ডেস্ক রিপোর্ট : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জামিন মিলছে না। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে তোলা হলে আইনজীবীরা জামিন চাইলেও আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। পবিত্র ঈদের আগে আদৌ তাদের জামিন হবে কিনা সংশয় রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নির্দোষ দাবি করে মুক্তি চেয়ে আবেদন নিবেদন করা হলেও সরকারের মন গলছে না। এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে স্বীকার করে নিলেও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে আটককৃত শিক্ষার্থীসহ অজ্ঞাতদের নামে। প্রথমে ২২ জন শিক্ষার্থীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে প্রেরণের পর গত রবিবার আরো ৪ জন এবং গতকাল আরো ৮ জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের ঈদের আগেই মুক্তি দাবি করেছেন আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করলেও আতঙ্কে রয়েছেন অনেক অভিভাবক। তারা সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। আটককৃত ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা ও রিমান্ডের কারণে দুটি আন্দোলনেই অংশগ্রহনকারী স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অজানা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। : আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া ৩৪ ছাত্রের মুক্তির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের কেউই জামিন পাননি; বরং গত রবিবার আদালত চারজনের জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশ কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাদের গ্রেফতার করেছে। আর পুলিশ বলছে, ছাত্ররা যে সহিংসতায় জড়িত ছিল তার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়া ছাত্ররা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এমন কোনো তথ্য তারা পায়নি। স্থায়ী ঠিকানা ধরে এখন এলাকায় তাদের বিস্তারিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে। : ৬ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও আফতাবনগর এলাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। ওই দিন এই দুই স্থান থেকে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ছাত্ররা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরদিন তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ভাটারা থানার পুলিশ ১২ জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এর মধ্যে ৮ জন গ্রেফতার রয়েছেন। বাকি ৪ জন পলাতক। : জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হাসান মাসুদ বলেন, তদন্ত চলছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সব ধরনের সহায়তা করছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ভাটারা থানার একজন কর্মকর্তা বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। ফুটেজগুলোর মান ভালো হওয়ায় ওই দিন আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মুখাবয়বও স্পষ্ট দেখা যায়। এসব ধরে তারা একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাড্ডা থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুলহাস মিয়া বলেন, রিমান্ডে শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং ভাঙচুরের কথা শিকার করেছেন। তবে তাদের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি এখনো তারা স্পষ্ট নন। প্রত্যেক ছাত্রের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নেয়ার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকে তথ্য এলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে।

ছাত্রদের মুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাশফিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে কিছু জানায়নি। আর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেলাল আহমেদ বলেন, সহায়তার বিষয়ে অভিভাবকেরা তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। করলে আইনের আওতায় থেকে যতটুকু সহায়তা সম্ভব তারা করবেন। : পরিবার বলছে তারা নির্দোষ : গ্রেফতার ছাত্রদের অভিভাবকেরা বলছেন, তাদের সন্তানেরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পুলিশ তাদের কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া ছাত্র সাবের আহমেদের মা মির্জা শাহিনা বলেন, ঘটনার দিন সাবের খেতে বাইরে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আরেক ছাত্র আমিনুলের মা বিলকিস বলেন, পুলিশ অযথা তাকে গ্রেফতার করেছে। মুশফিকের বাবা মাহবুবুর রহমান বলেন, তার ছেলেসহ কয়েকজন ছাত্র গলায় কার্ড ঝুলিয়ে মেসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের একদল ছেলে তাদের ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। রাশেদুলের চাচা আক্কাস আলী বলেন, ঘটনার পর রাশেদুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। : রেদোয়ানের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেদোয়ান ক্লাস শেষে বের হয়ে রাস্তায় আসার পর পুলিশ তকে গ্রেফতার করে। আটক হওয়া শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলামের মা তাসলিমা ইসলাম বলেন, তার ছেলে আন্দোলনে ছিলেন না। বিকেল চারটা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে ছিলেন। চারটার পর তিনি নিজে ছেলেকে বের হতে বলেন। এ সময় বের হয়ে বাসার দিকে আসার চেষ্টা করলে পথ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। : চারজনের জামিন নাকচ : ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে জামিন নাকচ হওয়া চার ছাত্র হলেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেদোয়ান আহমেদ ও তারিকুল ইসলাম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসাদ মর্তুজা বিন আহাদ ও আজিজুল করিম। এর আগে গত বৃহস্পতিবার অপর ১৮ জন ছাত্রের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন একই আদালত। ২২ ছাত্রের আইনজীবী বলছেন, আবারও জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ঈদের আগে শুনানি করতে চান। রেদোয়ান আহমেদের আইনজীবী কবির হোসাইন বলেন, রেদোয়ানের বাবা একজন অধ্যাপক। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। : আদালত সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী মাসাদ মর্তুজা বিন আহাদের আইনজীবী কামরুদ্দিন জামিন শুনানিতে আদালতে বলেন, আহাদকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করেছে। এখন অসুস্থ। কারাগারে থাকলে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হবে। বাড্ডা থানা-পুলিশ ছাত্রদের বিষয়ে আদালতকে জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আর ভাটারা থানা-পুলিশ আদালতের কাছে দাবি করে, গ্রেফতার আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

অপরদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের ঈদের আগেই মুক্তি দাবি করেছে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ ছাড়া ৩১ আগস্টের মধ্যে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ না করা হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে সংগঠনটি। গত রবিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক প্রতিবাদ মিছিলে এসব দাবি করা হয়। সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন বলেন, ঈদের আগেই সব বন্দী শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিতে হবে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে আটক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া ৩১ আগস্টের মধ্যে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। না হলে এরপর কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। ওই অবস্থান কর্মসূচিতে গ্রেফতার রাশেদ খান, রাতুল সরকারের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। তারাও নিজেদের স্বজন ও সব বন্দির মুক্তি চান। মানববন্ধনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন উপস্থিত ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় জড় হতে থাকেন কোটা আন্দোলনকারীরা। সেখানে ছাত্রলীগ পাল্টা মিছিল বের করে। এরপর কোটা আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড় হওয়ার চেষ্টা করলে তাও ভন্ডুল হয়ে যায় ছাত্রলীগের মহড়ার কারণে। পরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য জড়ো হন। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিভিন্ন সময় সরকারকে সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে সরকারি চাকরি পেতে যারা আন্দোলনে নেমেছিলেন, এখন তারা মামলা-হামলা এড়িয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়েই দুশ্চিন্তা। কোটা অন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু ভয়ে তিন দিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে পারেননি। হাতে-পায়ে-পিঠে আঘাত নিয়েই হাসপাতাল ছেড়েছেন। : তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগ দিয়ে মারধর করার পরে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো হলো। সবাই সবকিছু দেখল। এখনো মাথার ওপরে মামলার খাঁড়া। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেয়া আহত আরেক ছাত্র বলেন, যে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করলাম, সে চাকরি যে আর জীবনে পাব না, তা নিশ্চিত। এখন আমরা স্বাভাবিকভাবে বাকি জীবনটা কাটাতে চাই। কিন্তু এখনো ক্যাম্পাসে যেতে পারি না। : এছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সাত শিক্ষার্থী এখন কারাগারে আছেন। তারা হলেন রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, এ পি এম সুহেল, তরিকুল ইসলাম, মশিউর রহমান, জসিম উদ্দিন ও রাতুল সরকার।

পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই প্রথম ছয়জনের জামিন আবেদন নাকচ করা হয়। আর সর্বশেষ গত সোমবার রাতে রাতুল সরকার নামের আরেকজন শিক্ষার্থীকে গাজীপুর থেকে আটক করা হয়। তাকেও এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। এই সাতজনের প্রত্যেকেই সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভিসির বাসা ভাঙচুর, পুলিশকে মারধর, কর্তব্যকাজে বাধা, ওয়াকিটকি ছিনতাই এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা চারটি মামলায় কারাগারে থাকা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। গ্রেফতার ছাত্র রাশেদের মা সালেহা খাতুন ছেলের মুক্তির দাবি নিয়ে এখনো রাজধানীতে ঘুরছেন। রাশেদকে পড়ালেখা করাতে পুরো পরিবারকেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। রাশেদের যখন চাকরি করে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল, তখন তার এই পরিণতিতে পুরো পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এই মামলাগুলো আদালতে লড়ছেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়–য়া। তিনি বলেন, রাশেদ খানসহ সাতজনের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেটি শুনানির অপেক্ষায়। : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষার্থীর জামিন নাকচ : নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থীর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম প্রণব কুমার হুই রাজধানীর বাড্ডা ও ভাটারা থানায় দায়ের করা আলাদা দুই মামলায় এ আসামিদের জামিনের আবেদন নাকচ করেন। এই ৮ শিক্ষার্থীরা হলেন- সাবের আহম্মেদ উল্লাস, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন নিঝুম, জাহিদুল হক, নূর মোহাম্মদ, রাশেদুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান ও হাসান। : আসামিদের মধ্যে সাবের আহম্মেদ উল্লাস, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন নিঝুম ভাটারা থানা মামলার আসামি এবং অপর পাঁচজন বাড্ডা থানা মামলার আসামি। এর আগে গত ১২ আগস্ট চারজন শিক্ষার্থীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। তারা হলেন, তরিকুল ইসলাম, রেদোয়ান আহম্মেদ, মাসহাদ মুর্তজা আহাদ ও আজিজুল করিম অন্তর। গত ৭ জুলাই ২২ শিক্ষার্থীর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

ওই রিমান্ড শেষে গত ৯ আগস্ট আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠান আদালত। মামলার অপর আসামিরা হলেন- রিসালাতুন ফেরদৌস, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা ওরফে তন্ময়, বায়েজিদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, মেহেদী হাসান ও আমিনুল এহসান বায়েজিদ। : আসামিদের মধ্যে প্রথম ১৪ জন বাড্ডা থানার মামলায় এবং শেষের ৮ জন ভাটারা থানার মামলার আসামি। আসামিরা বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থসাউথ, সাউথইস্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাড্ডা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জুলহাস মিয়ার দাবি, গত ৬ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আফতাবনগর মেইন গেটের রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেন। লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেন। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন তারা। অন্যদিকে ভাটারা থানার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাসান মাসুদের দাবি, আসামিরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লোহার রড, লোহার পাইপ ও ইট দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। তারা বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসার দরজা, জানালা ভাঙচুর করেন। সূত্র : দিনকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়