ইসমাঈল হুসাইন ইমু : জোরে জোরে তাকবির দিয়ে আছরের নামাজে দাড়ালো ছেলেটা। অন্য সময়ের চেয়ে অনেক শুদ্ধ উচ্চারণে নামাজের তাকবির শুনে খুবই আশ্চর্য হল ছেলেটার মা। প্রথমে ভাবলো ভুল দেখছে নাতো? শত বকাবকি করেও যে ছেলেকে তিন ওয়াক্তের বেশি নামাজ পড়ানো যায় না সে কিনা নিজে থেকেই....। তাও আবার আছরের নামাজ !! এ সময়তো এ ডানপিটে ছেলেটার খেলার মাঠেই থাকার কথা।
মা ভাবলো হয়তো তার দোয়া আল্লাহপাক আজ কবুল করেছেন। তার বজ্জাত ছেলেটি আজ জাতে উঠেছে। তাই সেচ্ছায় বাসায় নামাজে দাড়িয়েছে।
এই দুষ্টু ছেলেটির হঠাৎ নামাজি হওয়া দেখে মা মনে মনে হয়ত আল্লাহর কাছে দুই রাকাত শোকরের নামাজ পড়ার ওয়াদা করলো। সম্ভবত দুটো নফল রোজাও। কারণ এই মায়ের আবার রোজা রাখার বাতিক আছে। কথায় কথায় রোজা রাখা ওঁনার একটা অভ্যাস। বছরের বেশিরভাগ সময় রোজা থেকেই কাটে তাঁর। বিভিন্ন আরবী মাসের চাঁদের রোজা।এছাড়া আজ এ ছেলের পরীক্ষার রোজা তো কাল আরেক ছেলের ইন্টারভিউ এর রোজা। আজ ছেলে বাইরে গাড়ীতে ভ্রমন করবে সেজন্য রোজা তো কাল আরেক ছেলের অসুখে পড়া থেকে মুক্তির রোজা ইত্যাদি ইত্যাদি। বিষয়টা অনেকটা এমন যে উনি রোজা রাখলেই ওঁনার ছেলেমেয়ের কল্যাণ সাধিত হবে নিশ্চিত। সেহেরী বিহীন এ ধরনের রোজায় শারীরিক অবস্থার চরম অবনতিই যেন ওঁনার শান্তি। তাই আজ ছেলের নামাজের দিকে তাকিয়ে মা কত দোয়াই না মনে মনে আওড়াচ্ছে আর কল্যাণ কামনা করছে। আহারে ! আমার ছেলেটা....
ছেলেটার চার রাকাত নামাজের শেষাংশে দরজার পাশ থেকে পাশের বাসার খালাম্মার কন্ঠস্বর শুনতে পেল। হঠাৎ খালাম্মার কন্ঠ শুনে নামাজের মধ্যেই ছেলেটার বুকের কম্পন বেড়ে গেল। চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করলো। শেষ রাকাতের সুরাও ওলট পালট হয়ে গেল। খাড়া খাড়া কান দুটো গরম হয়ে গেল। দ্রুত নামাজ শেষ করার জন্য কোনোরকম ডানে বামে সালাম ফিরিয়েই খালাম্মার চোখে চোখ পড়লো। এবার খালাম্মার রক্ত চক্ষু দেখে আর দেরি করা নিরাপদ হবেনা বুঝতে পারলো ছেলেটা। মোনাজাত না করে টুপি মাথায় দিয়ে জায়নামাজ থেকেই ভো দৌড় ছেলেটার। আর পায় কে ?
এরই মধ্যে খালাম্মাকে দেখে ছেলেটার মায়ের প্রশ্ন, কি খবর ভাবি ? খালাম্মা বললো, আপনার এই ছেলে.......। বুঝতে আর বাকি রইলো না, তার গুনধর ছেলে বাইরে কিছু ঝামেলা করার কারনেই ভাবির নালিশ, আর নিজেকে সাধু সাজানোর জন্যই বজ্জাত ছেলের এভাবে নামাজে দাঁড়ানো।
দৌড়ে পালানোর সময় মায়ের শুধু একটি কথাই কানে গেল ছেলেটার, “পালিয়ে থাকবি কতক্ষণ, আজ তোকে ভাত দেবো না”।
মা ভাত দেবে না কথাটা মান সন্মানের কারণে বাইরে কাউকে শেয়ার করা লজ্জার বিষয় হল ছেলেটার জন্য।কিন্তু একসময়তো বাসায় ফিরতেই হবে। প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে রাতে চুপি চুপি বাসায় ফিরে দেখলো সবাই ঘুমিয়েছে। শুধু জেগে আছে সেই মমতাময়ী মা। দেখা গেল “ভাত দেবো না” বলা সেই মা তার কথা রাখেনি। গর্ধভ ছেলেটার ভাত পাশে নিয়ে বসে আছে সেই মা। বরং বদমাশ ছেলেটার প্রিয় খাবার আলুর তরকারী অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই আছে পাতে। মা তার কথা না রাখায় খুবই আশ্চর্য হল ছন্নছাড়া ছেলেটা।
পরদিন যথাযথ শাসন হল, সাথে উপহার স্বরূপ কিছু চপেটাঘাত। সেই দিন থেকে আগের তুলনায় একটু ভাল হল ছেলেটা। তবে তা যতটা না শাসনের কারণে তার চেয়ে বেশি তার মা কথা না রাখার কারণে। এক ধরনের অন্যরকম শ্রদ্ধা জন্মালো নিজের কথা না রাখা মমতাময়ী এই মায়ের প্রতি। মায়েরা যে কেন এমন হয়, কেন এত ভালো হয় তা আজো ভেবে পায়না ছেলেটা। সত্যিই সব মায়েরা এমনই হয় !! এভাবে কথা না রেখেই বেঁচে থাক আমাদের সকল মায়েরা।
লেখাটি যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলীর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেয়া।
আপনার মতামত লিখুন :