শিরোনাম
◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ তীব্র তাপপ্রবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও ৭ দিন বন্ধের দাবি ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩৪ রাত
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দূরে সরিয়ে রাখাটা শুধু ইতিহাস থেকে নয়, ভূগোল থেকেও

হাসান হান্নান : দয়া করে পোস্টটি না পড়ে লাইক দিবেন না। এতদিনে এ কথা তো সবারই জানা হয়ে গেছে যে, বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁর লাশ টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখা। দূরে সরিয়ে রাখাটা শুধু ইতিহাস থেকে নয়, ভূগোল থেকেও। যে সৈনিকরা বঙ্গবন্ধুর লাশ হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে গিয়েছিল, তারা চেয়েছিল কফিনবন্দি লাশটিকে টেলিফোন নির্দেশে পূর্বে খুঁড়ে রাখা কবরে দ্রুত নামিয়ে রেখে ঢাকায় ফিরে আসবে এবং স্থানীয় পুলিশ ঐ কবর পাহারা দেবে। কিন্তু তাদের ঐ পরিকল্পনায় বাদ সাধলেন মৌলবী শেখ আবদুল হালিম। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বললেন, এটি যে শেখ মুজিবের লাশ তা আমার নিজে চোখে দেখে নিশ্চিত হতে হবে, তারপর আসবে দাফনের প্রশ্ন। সৈনিক বললেন, আমাকে আপনার বিশ্বাস হয় না?

শেখ আবদুল হালিম বললেন, এটা বিশ্বাস - অবিশ্বাসের কথা নয়, এটা ধর্মীয় বিধান। সৈনিক দেখলেন, এ মৌলানাকে ভয় দেখিয়ে কাজ হবে না। মুজিবের লাশের সামনে দাঁড়িয়েও যে তর্ক করার সাহস রাখে, তাঁর সঙ্গে আপোষ করাই ভালো। অগত্যা সৈনিকের নির্দেশে কফিনটি খোলা হলো। তখন মৌলবী শেখ আবদুল হালিম দেখলেন, ঐ কফিনের ভিতরে শায়িত শেখ মুজিব। তাঁর চোখ জলে ভরে আসতে চাইলো। কিন্তু অনেক কষ্টে তিনি অশ্রু সংবরণ করলেন। সৈনিক বললো, এবার জানাজা পড়ে দ্রুত দাফন করার ব্যবস্থা করুন। দশ মিনিট সময়। শেখ আবদুল হালিম বললেন, ইসলামী শরীয়া মতে লাশকে দাফনের আগে গোসল দিতে হবে। সৈনিক বললো, তার দরকার নেই।

তিনি বললেন, আছে। অবশ্য আপনি যদি বলেন যে, মুজিবকে শহীদ করে আনা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আপনি যদি আমাকে লিখিত দেন, তাহলে আমি গোসল ছাড়াই লাশ দাফন করতে পারি। মৌলবীর অকাট্য যুক্তি এবং নির্ভয়চিত্ততার কাছে পরাভব মানলো ঐ সৈনিক। তাঁকে আরও কিছু সময় দেয়া হলো এবং দাফনকর্মে সহায়তা করবার জন্য আরও কিছু লোক আনবার অনুমতি পেলেন তিনি। তখন বরফাবৃত শেখ মুজিবকে কফিন থেকে টুঙ্গীপাড়ার জন্মের মাটিতে নামানো হলো গোসল দেবার জন্য। একটি ৫৭০ সাবান কিনে আনা হলো। রেডক্রসের গুদাম থেকে কাফনের জন্য আনা হলো একটি মোটা সাদা থান কাপড়। গোসল করার সময় দেখা গেলো বঙ্গবন্ধুর ফুলে-যাওয়া গা থেকে তাঁর পাঞ্জাবীটা কিছুতেই খোলা যাচ্ছে না। একটি দা দিয়ে তখন তা কেটে ফেলা হলো। গোসল করানোর সময় তাঁর তলপেট থেকে বেরুলো উঁকি দিয়ে থাকা একটা বুলেট। বেশ বোঝা গেলো যে আরও বুলেট রয়ে গেছে তাঁর দেহের ভিতরে।

তাঁর পাঞ্জাবীর বুক পকেট থেকে আবিষ্কৃত হলো তাঁর কালো ফ্রেমের ভাঙ্গা-চশমাটি। নিচের বাম পকেট থেকে বেরুলো এরিনমুর তামাকের একটি ব্যবহৃত কৌটো এবং ডান পকেট থেকে পাওয়া গেল তাঁর সেই বিখ্যাত পাইপ। বৃদ্ধ মৌলবী শেখ আবদুল হালিম বললেন, আমার মনে হয় গুলিতে মুজিবের মৃত্যু হয়নি। কেননা, তাঁর মাথায় বা বুকে কোথাও একটিও গুলি লাগেনি। তাই বোধ হয় মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাঁর পায়ের গোড়ালীর রগ কেটে দেয়া হয়েছিল। তিনি জানান, নামাজে জানাজা শেষে, একটু দূরে অপেক্ষমাণ সন্ত্রস্ত জনতার অশ্রুসজল চোখের সামনে বঙ্গবন্ধুর লাশ যখন কবরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ডুকরে কেঁদে ওঠা এক বৃদ্ধা মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে সৈনিকের ব্যূহ ভেদ করে মুজিবের লাশের কাছে ছুটে যান।

ইনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই চাচী একজন হলেন শেখ কবিরের মা, অপর জন হলেন ঝযবরশয কধসৎঁষ ঐধংধহ টবার মা মরহুম শেখ কামরুন্নাহার। বৃদ্ধা তাঁর পুত্রপ্রতিম মুজিবের মুখখানা শেষবারের মতো দেখার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ওরে আমি কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছি, ওরে শেষবারের মতো আমাকে দেখতে দাও। তখন সৈনিকটি রাজি হয়। বন্ধ করে ফেলা কাফনের বাঁধন আলগা করে আবার বৃদ্ধাকে ডাকা হয় লাশের পাশে। মাতৃসমা ঐ বৃদ্ধা তখন লাশের ওপর উবু হয়ে শেষবারের মতো তাঁর পুত্রবৎ মুজিবকে চোখ ভরে দেখেন এবং ডুকরে ডুকরে কেঁদে শুধু এই প্রার্থনাই করেছেন আমার নিষ্পাপ ছেলেটিকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার যেন এই বাংলার মাঠিতে হয়।

বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাই এবং দোয়া করি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার কাছে, তাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। আমীন।

-ফেসবুক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়