শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৫৭ সকাল
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৫৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আ’লীগের সঙ্গে কৌশলে পেরে উঠছে না বিএনপি

ডেস্ক রিপোর্ট : আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও ভোটের আগাম প্রচার-প্রচারণার মাঠে দলীয় নেতাকমীের্দর চাঙ্গা রাখাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পেরে উঠছে না বিএনপি। বরং ক্ষমতাসীনদের নানা সূ² চালে পড়ে সরকারবিরোধী এ দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কৌশলগত ব্যথর্তায় বহিবিের্শ্বর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পকর্ তৈরিতেও তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে।

যদিও বিএনপির নীতি-নিধার্রকদের দাবি, রাজনৈতিক কোনো কৌশলে নয়, সরকারের নানামুখী ‘ষড়যন্ত্র’ তাদের ঘায়েল করেছে। ক্ষমতাসীনরা অনৈতিকভাবে তাদের কোনঠাসা করে রেখেছে। এ সম্পকের্ দেশের মানুষ ও আন্তজাির্তক মহল ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল রয়েছে। রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহিভূর্ত এ ধরনের কাযর্ক্রমের জন্য আওয়ামী লীগকে ভবিষ্যতে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে কমীর্রা চাঙ্গা হওয়ামাত্র সরকার বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় তাদের ধাওয়া উপর রাখছে। গুরুত্বপূণর্ নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠাচ্ছে। এমনকি দলীয় সমথর্কদের উপরও কখনো কখনো অযথা নিযার্তনের খড়গ চাপাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষমতাসীনরা রীতিমতো দলীয় লাঠিয়াল বাহিনী বানিয়েছে। যা নেতাকমীর্-সমথর্ক সবাইকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। পরিস্থিতি এ পযাের্য় পেঁৗছেছে, বিএনপি কমীর্-সমথর্ক পরিচয় দিতেও অনেকে ভয় পাচ্ছে। তাই তাদের রাজনৈতিক নানা কৌশল বরাবর মার খাচ্ছে।

তবে এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড ও সরকারের নীতি-নিধার্রকরা। তাদের অভিযোগ, সাংগঠনিক পরিকল্পনাহীন বিএনপি বিভিন্ন সময় নাশকতামূলক কমর্কার মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। যা তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে ধরা দিয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলের নামে নানা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপি দেশের মানুষের পাশাপাশি আন্তজাির্তক মহলেও আস্থা হারিয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

তাদের দাবি জাতীয় নিবার্চনের মাত্র ১০ মাস আগে দুনীির্তর মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারা অন্তরীণ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুকৌশলে ভোটের মাঠের বড় ফয়দা নিজের ঘরে তুলে নিয়েছে। যা বুঝে উঠতেই বিএনপির বেশখানিকটা সময় লেগেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পযের্বক্ষণ, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি না মেলায় বিএনপির শীষর্ নেতাদের কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের হিসাব বেশ গোলমেলে ঠেকছে। এ অবস্থায় নিবার্চনে অংশ নেয়ার প্রশ্নে বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নিবার্চনে যাওয়ার বিপক্ষে। ওই অংশের নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে আর পরিস্থিতি সম্পূণর্ ‘নিয়ন্ত্রণে’ রেখে সরকার নিবার্চনের ছক কষছে। তাই ‘নিয়ন্ত্রিত’ ওই নিবার্চনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। অন্য অংশের মতে, দেশের জনগণের যে মনোভাব তাতে তুলনামূলক সুষ্ঠু নিবার্চন হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। এমনকি খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলেও ‘ভোট বিপ্লব’ ঘটবে। আর এ প্রত্যাশা দলের ওই অংশের নেতাদের ক্ষমতা লাভের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছেন। ফলশ্রতিতে জাতীয় নিবার্চনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চাঙ্গা হচ্ছে।

রাজনৈতিক পযের্বক্ষক মহল মনে করে, বতর্মানে রাষ্ট্রের সবর্স্তরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আর এমন অবস্থান নিবার্চন পযর্ন্ত বজায় থাকলে দেশের রাজনীতিতে অন্য কোনো মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনাও কম। উপরন্তু উদার ও বামপন্থী বেশির ভাগ দলের নিবার্চনে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে ওই অবস্থায় নিবার্চন থেকে বাইরে থাকা বিএনপির যেমন কঠিন, তেমনি নিবার্চনে অংশ নিয়ে ‘ভোট বিপ্লব’ ঘটানোও দলটির জন্য দুরূহ।

যদিও বিএনপির থিংকট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিতজনদের অভিমত, কিছু বাধা থাকা সত্তে¡¡ও বিএনপির রাজনীতির হিসাবে প্রত্যাশার অনেক কারণ রয়েছে। প্রথমত, সরকার আগামীতে গ্রহণযোগ্য নিবার্চন না দিয়ে পারবে না। আর তেমনটি হলে এর ফল বিএনপি পাবে। দ্বিতীয়ত, ভারতও গত নিবার্চনের মতো অবস্থান নিয়ে থাকবে না। কারণ তারা এ দেশের জনগণের মনোভাব এরইমধ্যে জেনে গেছে। আর খালেদা জিয়া মুক্তি না পেলে নিবার্চনও বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে নিবার্চন হলে বিএনপি তার সুফল পাবে।

তবে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, বিএনপির সব হিসাব মেলা কঠিন। কারণ কোনো পরিস্থিতিই বিএনপির অনুকূলে নয়। প্রত্যাশা থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন এখনো হয়নি, এটাই বাস্তবতা। আন্তজাির্তক সম্প্রদায় কোন দিকে থাকবে, সেটিও বলা কঠিন। দৃশ্যমান কোনো ঐক্যও বিএনপি এ পযর্ন্ত গড়ে তুলতে পারেনি। তাই বিএনপির কোনো হিসাবই আপাতত মিলছে বলে মনে হয় না- যোগ করেন তিনি।

এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি দেশের বেশির ভাগ উদার ও বামপন্থী দল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চন বজর্ন করলেও আগামী নিবার্চনে তাদের অংশ নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের অনেকে জোটে টানারও উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ এ দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির ঐক্য গড়ারসমূহ সম্ভাবনা ছিল। যা বিএনপি সময়মতো কাজে লাগাতে পারেনি। এ ইস্যুতেও আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বিএনপির কৌশল মার খেয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতিকরা অনেকেই।

অন্যদিকে যে কোনো ইস্যুতে আন্দোলন চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বিএনপির অধিকাংশ কৌশল ব্যথর্ হওয়ার চিত্র রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই স্পষ্ট। রাজনৈতিক পযের্বক্ষকদের ভাষ্য, তৃতীয় পক্ষের জোরালো আন্দোলন বেগবান করতে দিয়ে সরকারবিরোধী এ দলটি তার মোড় ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে- এমন নজিরও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তারা উচ্চ শিক্ষাথীের্দর কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালে বিএনপির শীষর্স্থানীয় দুই নেতার টেলিফোন সংলাপ ফঁাস হওয়ার উদাহরণ টেনেছেন।

পযের্বক্ষকরা মনে করেন, দুটি আন্দোলনই তার নিজস্ব গতিতে চললে তা সামলাতে সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হতো। অথচ বিএনপির দু’নেতার টেলিফোন সংলাপ ফঁাস হওয়ার পর এ দুটি আন্দোলন সরকার সহজেই রাজনৈতিক মোড়কে বেঁধে ফেলতে পেরেছে। যা এ আন্দোলন সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। কেননা শিক্ষাথীের্দর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকার ব্যাপারে বরাবরই যথেষ্ট অনীহা রয়েছে।

যদিও বিএনপি নেতাদের দাবি, এ দুটি আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যথর্ হয়ে অবৈধ শক্তি প্রয়োগ করেছে। স্বৈরাচারী কায়দায় আন্দোলনরত শিক্ষাথীের্দর ওপর পুলিশ ও নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নিবির্চারে হামলা চালিয়েছে। এমনকি তাদের মামলা জালে ফঁাসাতেও দ্বিধা করেনি বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, সরকার বিএনপিকে কখনোই রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে পারেনি। এজন্য বারবার তারা নানা ধরনের ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। সম্পূণর্ অগণতান্ত্রিকভাবে বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিএনপিকে দমন করার পথ বেছে নিয়েছে।

বিএনপির এই নীতি নিধার্রকের ভাষ্য, ‘বিএনপি যখনই রাজনৈতিক কমর্সূচি দেয় তখনই সরকার শক্তিপ্রয়োগের পথ বেছে নেয়। নানাভাবে গণতান্ত্রিক কমর্সূচি পালনে বাধা দেয়। বিএনপিকে দমন করার জন্য আমাদের নেতাকমীের্দর নামে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।’ এই সরকার মিথ্যাচার আর ক‚টকৌশলে খুবই পটু- যোগ করেন তিনি। সূত্র : যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়