শিরোনাম
◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৩১ সকাল
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৯:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সড়ক নিরাপত্তায় শুরুতেই গলদ

ডেস্ক রিপোর্ট : পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নেই নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা। যানবাহন তদারক করার মতো জনবল নেই এ সংস্থার। বিআরটিএর সবচেয়ে ব্যস্ত সার্কেল মিরপুরে মোটরযান পরিদর্শক পদে আছেন ১৯ জন। তাদের ১০ জন গাড়ির ফিটনেস যাচাই করেন। সড়কে কড়াকড়ির পর দিনে হাজারের বেশি গাড়ি মিরপুরে যাচ্ছে ফিটনেস হালনাগাদ করতে। দিনে শতাধিক গাড়ি পরিদর্শন করতে হচ্ছে একজন মোটরযান পরিদর্শককে!

পরিবহন খাত-সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, একজন মানুষের পক্ষে একদিনে ১০০ গাড়ি যাচাই করা সম্ভব নয়। মিরপুর ছাড়া বিআরটিএর আর কোনো সার্কেলে ডিজিটাল ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ডিভিআইসি) নেই। সেগুলোতে কেবল চোখ দিয়ে দেখেই ফিটনেস সনদ দিতে হয়। মিরপুর ডিভিআইসিতে ঘণ্টায় ১৫টি গাড়ির ফিটনেস যাচাই করা যায়। এ হিসাবে দিনে সর্বোচ্চ ১২০টি যানবাহন পরীক্ষা করা সম্ভব। বাকি গাড়ি চোখের দেখাতেই ফিটনেস দিতে হয়।

অভিযোগ, 'চোখের দেখায়' অযোগ্য গাড়ি ফিটনেস পেয়ে যাচ্ছে। সক্ষমতার তুলনায় বেশি কাজ করতে হয় বলে বিআরটিএতে সেবা গ্রহীতাদের দীর্ঘ অপেক্ষায় পড়তে হয়। এই সুযোগই নেয় দালালরা। সিরিয়াল ভেঙে 'দ্রুত কাজ করে দিয়ে' হাতিয়ে নেয় ঘুষ।

বিআরটিএর কর্মকর্তারাও এই দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনেও তাই দেখা গেল। গত এক সপ্তাহে অন্তত ২০ জন দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠালেও অনিয়ম বন্ধ হয়নি। সেবা গ্রহীতারা এখনও দালালের খপ্পরে পড়ছেন।

১৯৮৭ সালের জনবল কাঠামোতে চলছে বিআরটিএ। সংস্থাটিতে অনুমোদিত জনবল ৮২৩। আছেন ৬৫৬ জন। ১৬৭টি পদ শূন্য। মোটরযান পরিদর্শক ও সহপরিদর্শকের পদ রয়েছে প্রায় ৪০০। ৩৬ লাখ যানবাহন আছে দেশে। সে হিসাবে একজন পরিদর্শককে গড়ে নয় হাজার যান তদারক করতে হয়। একাধিক মোটরযান পরিদর্শক জানালেন, চাপের কারণে এক নজর দেখেই সনদ দিতে হয়। সময় নিয়ে দেখতে চাইলে একটি গাড়ি পরিদর্শনে ঘণ্টাখানেক সময় লাগবে। চাপের কারণে তাদের কিছুই করার থাকে না। বাহ্যিক অবস্থা থেকে ফিটনেস হালনাগাদ করেন তারা।

৩৬ লাখ যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১৭ লাখ। তবে মোটরসাইকেলের ফিটনেস হালনাগাদ করতে হয় না। বাকি যানবাহনগুলোর ফিটনেস বছর বছর হালনাগাদ করতে হয়। এ হিসাবে একজন পরিদর্শককে বছরে অন্তত পাঁচ হাজার যানবাহনের ফিটনেস যাচাই করতে হয়। চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, একজন মানুষের পক্ষে পাঁচ হাজার গাড়ি কোনোভাবেই তদারক করা সম্ভব নয়।

মিরপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক (প্রকৌশল) মাসুদ আলম জানিয়েছেন, মিরপুর কার্যালয়ে ১৯ জন মোটরযান পরিদর্শক কর্মরত রয়েছেন। ১০ জন ফিটনেস যাচাই করেন। চারজন গাড়ির নিবন্ধন যাচাই করেন। চালকের লাইসেন্স যাচাইয়ে রয়েছেন তিনজন। দু'জন রয়েছেন মালিকানা পরিবর্তন-সংক্রান্ত কাজের জন্য। সহকারী মোটরযান পরিদর্শক আছেন সাতজন। তারা পরিদর্শকদের সহায়তা করেন।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেছেন, জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। গ্রাহকদের উপচেপড়া ভিড় সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বিআরটিএর রয়েছে কি-না- এ প্রশ্নে তিনি জানান, জনবল আছে তাই দিয়েই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছেন তারা। জনবল বাড়ানো হবে কি-না, তা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

গত ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের বেপরোয়া বাসের চাপায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। কাগজবিহীন গাড়ি যাচাই করে পথে পথে। এরপর পুলিশও নড়েচড়ে বসেছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি পথে নামছে কম। ধরা পড়ার ভয়ে কাগজ হালনাগাদ করতে বিআরটিএতে ভিড় বেড়েছে। মিরপুর ছাড়াও রাজধানীর অপর দুই সার্কেল কার্যালয় উত্তরা এবং ইকুরিয়াতেও উপচে পড়ছে ভিড়।

মাসুদ আলম জানান, আগে মিরপুরে দিনে গড়ে ছয় থেকে সাতশ' গাড়ি আসত ফিটনেস সনদ নিতে। এখন আসছে দ্বিগুণ। ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনও ২০০ থেকে বেড়ে ৫০০ ছাড়িয়েছে। ভিড় সামাল দিতে সপ্তাহে ছয় দিন রাত ৯টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার ছুটির দিনেও কার্যক্রম চলছে।

উত্তরা সার্কেলের বিদায়ী সহকারী পরিচালক সুব্রত কুমার জানালেন, সেখানেও একই অবস্থা। আগে দিনে শ'খানেক শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়ত। গত ২ আগস্ট থেকে দ্বিগুণের বেশি আবেদন আসছে। ফিটনেস হালনাগাদের আবেদনও দ্বিগুণ হয়েছে।

ভিড়ের সুযোগ নিচ্ছে দালালরা। গত বৃহস্পতিবার বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথ থেকেই মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে গ্রাহকরা যেন দালাল না ধরেন। কিন্তু কার্যালয়ের এক নম্বর ভবনের সামনেই ফয়সাল নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে আসেন এই প্রতিবেদকের কাছে। জানতে চান কোনো কাজ করাতে হবে কি-না। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে তাকে এই প্রতিবেদক বলেন, শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স করাতে চান। ফয়সাল জানান, দেড় হাজার টাকা লাগবে। অথচ মোটরসাইকেলের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি ৫১৮ টাকা।

ফয়সাল নিশ্চয়তা দেন, এক ঘণ্টার মধ্যেই লাইসেন্স করে দেবেন। লাইনে দাঁড়ালে দুই দিনেও করা যাবে না। বিআরটিএর অভ্যন্তরে দুটি ব্যাংকের সামনে তখন কয়েকশ' মানুষের সারি। খাদেমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানালেন, চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা জমা দিতে পারেননি।

সরেজমিনে দেখা গেল, এই দীর্ঘ অপেক্ষাকে পুঁজি করছে দালালরা। নান্নু নামের আরেক ব্যক্তি ব্যাংকের সামনে এগিয়ে এসে সাহায্য করতে চাইলেন এ প্রতিবেদককে। তাকে বলা হলো, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন করা দরকার। নান্নু জানালেন, দুই বছরের নিবন্ধনের ফি ১২ হাজার ৭৩ টাকা। ১৫ হাজার টাকা দিলে এক ঘণ্টার মধ্যেই নিবন্ধন করানো সম্ভব। বাড়তি কাকে দিতে হবে? এ প্রশ্ন করতেই কেটে পড়েন তিনি।

তবে সূত্র জানিয়েছে, বহু বছর ধরেই দালালদের দৌরাত্ম্য চলছে বিআরটিএতে। প্রতিটি সেবার জন্যই দালাল ধরতে হয়। বাড়তি টাকা গুনতে হয়। বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে জড়িত। গাড়ি সরেজমিনে না দেখেই কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিবন্ধন দেওয়া হয়। দালালের মাধ্যমে গাড়ি সরেজমিনে হাজির না করে ফিটনেস দেওয়া হয়। ভাঙাচোরা, ত্রুটিপূর্ণ, অবৈধভাবে নকশা পরিবর্তন করা যানবাহনও ফিটনেস পাচ্ছে। সড়কে বিপদ বাড়াচ্ছে। তবে বিআরটিএর উপপরিচালক মাসুদ আলমের দাবি, সরেজমিনে না দেখে কোনো গাড়িকেই ফিটনেস দেওয়া হয় না। সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়