শিরোনাম
◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী

প্রকাশিত : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:৩৪ সকাল
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০১৮, ০৮:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রশিক্ষণ ছাড়াই ২ লাখ পেশাদার চালক

ডেস্ক রিপোর্ট : সড়কে গণপরিবহনের নৈরাজ্য চলছেই, রোধ করা যাচ্ছে না বিশৃঙ্খলা। রাজধানীতে দুই কিশোর শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে পথে নেমে আসা এবং এর মধ্যেই বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হলেও নৈরাজ্য ন্যূনতম লাঘব হয়নি, বরং লাইসেন্স ও কাগজপত্রের অভাবে গণপরিবহন সীমিত আকারে চলছে। গতকালও ‘খাজাবাবা’ নামে একটি বাসের চাপায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন। এসবের পেছনে বড় কারণ বেপরোয়া চালনা। পরীক্ষা ও কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই দেশে ২ লাখ পেশাদার চালক রয়েছেন। তাদের হাতে সড়ক নিরাপদ থাকার কথা নয়, বাস্তবতাও তা-ই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হেলপার-কন্ডাক্টর হয়ে ওঠেন গাড়ির চালক। যাত্রীসহ গাড়িতে বসেই চালনা শেখেন তারা। অথচ মোটরযান আইনে গাড়িচালনা শেখায় লাইসেন্সধারী ইনস্ট্রাক্টরের
বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় ২০১০ সাল পর্যন্ত পরীক্ষা ছাড়াই পেশাদার লাইসেন্স পাওয়া চালকের হাতে স্টিয়ারিং। শ্রমিক সংগঠনের সুপারিশে তাদের লাইসেন্স দেয় বিআরটিএ। এরপর ২০১১ সালে আরও ২৪ হাজার লাইসেন্স একই তরিকায় দেওয়ার জন্য চাপ দেয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। কিন্তু তা মানতে অপারগতা প্রকাশ করায় একপর্যায়ে সরে যেতে হয় বিআরটিএর তৎকালীন চেয়ারম্যানকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট ১৯৮৩ অনুযায়ী ২১ বছর বয়সী পেশাদার চালককে প্রথমে হালকা যান চালনার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর তিন বছর পর মাঝারি যান এবং এর তিন বছর পর মেলে ভারী যান চালানোর লাইসেন্স। ওই হিসাবে ন্যূনতম ২৭ বছর দরকার ভারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে। কিন্তু দেখা গেছে, অল্প বয়সীরা ভারী যানের স্টিয়ারিং হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক। জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপা দেওয়া চালক মাসুম বিল্লাহরও ছিল না ভারী লাইসেন্স। হালকা যানের লাইসেন্স (এফপি০০১৩৯৯৩সিএল০০০৬) নিয়েই বাস চালাচ্ছিল সে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে অনেক ধাপ পার হতে হয়। কিন্তু তা মানতে নারাজ শ্রমিকরা।
আইন অনুসারে প্রথমে প্রত্যেককে চিকিৎসকের কাছ থেকে শারীরিক ও চোখের পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স, পরে অপেশাদার চালকের জন্য প্রথমে লিখিত পরীক্ষা, এরপর ফিল্ড টেস্ট (কঠিন কিছু পদ্ধতিতে যান চালিয়ে দেখানো) রয়েছে। আর পেশাদার চালকের বেলায় প্রথমে হালকা যান, এরপর পর্যায়ক্রমে মাঝারি ও ভারী যানের লাইসেন্স নিতে হয়। ওই পরীক্ষাগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন না করেই লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান আমাদের সময়কে বলেন, সড়ক নিরাপদ করতে সবাইকেই সচেতন হতে হবে। বিআরটিএর অভিযান অব্যাহত আছে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে চালকরা গাড়ি চালানোর কলাকৌশল, আচরণসহ সবকিছু শেখতে পারে।
জানা গেছে, সারাদেশে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। এর বিপরীতে পেশাদার চালকের সংখ্যা ১২ লাখ ১৫ হাজার ৪৭০। অপেশাদার চালক আছেন ১৪ লাখ ২৪ হাজার ১৮৮ জন। সব মিলিয়ে ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৮টি। তবে একই চালকের একাধিক লাইসেন্সের হিসাব বাদ দিলে মোট ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৮১-এ। পেশাদার চালকের ভারী লাইসেন্স রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৭টি, মাঝারি লাইসেন্স ৬০ হাজার ২৩৮টি, হালকা ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৯টি ও থ্রি-হুইলারের ৫৪ হাজার ৪৮৪টি। অপেশাদার লাইসেন্সের মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৩৫ ও হালকা যানের লাইসেন্স রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৫৩টি।
একেকটি বাণিজ্যিক যানবাহনে তিন চালকের প্রয়োজন। ব্যক্তিগত গাড়িতেও একাধিক চালক দরকার। কারণ মোটরযান আইন অনুসারে পেশাদার চালক দিনে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা যানবাহন চালাতে পারবেন। টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি চালানো যাবে না। অর্থাৎ সব মিলিয়ে যানবাহন যত আছে, এর চেয়ে বৈধ লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা। এটি না থাকায় অদক্ষ ও ভুয়া চালকরাও যানবাহন চালাচ্ছেন। গাড়ির ড্রাইভিং পরীক্ষায় গঠিত সরকারের ড্রাইভিং কম্পেটেন্সি টেস্ট বোর্ড (ডিসিটিবি) বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। অনেকেই জানেন না চালকদের লাইসেন্স প্রদানের দায়িত্ব বিআরটিএর নয়, ডিসিটিবির। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (এডিএম) সভাপতি করে এএসপি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য এবং বিআরটিএর মোটর ভেহিকল ইন্সপেক্টর বোর্ডের সদস্য সচিব। এএসপির প্রতিনিধি হিসেবে সাব-ইন্সপেক্টর এলেও পরীক্ষা বোর্ডে তার ভূমিকা নেই। প্রথম শ্রেণি মর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা বিআরটিএর পরিদর্শকের নিয়ন্ত্রণে বোর্ডের কর্তৃত্ব। অনেক সময় বিআরটিএর এক মোটরযান পরিদর্শক পরীক্ষা নিয়ে বোর্ডের সদস্যদের শুধু সই নিয়ে কাজ সারেন। এ জন্য লাইসেন্স পেতে অনিয়ম ও হয়রানি দূর হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যাতায়াত খরচ কিংবা সম্মানীভাতা না থাকায় সদস্যরা পরীক্ষা বোর্ডে যাচ্ছেন না। এ ছাড়া বোর্ড সদস্যরা দীর্ঘদিন একই দায়িত্বে। জবাবদিহি না থাকা অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ। ড্রাইভিং পরীক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে বোর্ড পুনর্গঠন জরুরি।
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়