মহসীন কবির : খোঁজ মিলেছে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লেখক ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন তার খোঁজ পাবার কথা। ৬ আগস্ট গুলশানের অফিস থেকে বের হবার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফেরার কথা জানান। ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবাহু তুলে ধরা হলো।
আমার উদ্বিগ্ন বাবা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, আটাত্তর উত্তীর্ণ প্রবীণ শিল্প-সাংস্কৃতির সংগঠক শ্যামল ভট্টাচার্য আজ গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য নিম্নলিখিত বিবৃতিটি দিয়েছেন। এতে আমার প্রকৃত অবস্থা বিধৃত হয়েছে; দয়া করে পুরো বিবৃতিটি পড়ুন। আমি জানি আমার ৬৮ বছর বয়সী ক্যান্সার উত্তরজীবী মা সুকৃতি ভট্টাচার্য উৎকন্ঠায় ডুবে আছেন, প্রিয়তম স্ত্রীর মধুময় কন্ঠ ভয়ে কুকড়ে গেছে, ছেলে ঋষভ পুরোপুরি দিশেহারা, কি ঘটছে তার বাবার জীবনে এর কিছুই হয়তো সে বুঝে উঠতে পারছে না!
আমার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী দের বলছি। আমি এখনো নিরাপদে আছি, সুস্থ আছি। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমি যেন মজলুমের সংগ্রাম থেকে, নিপীড়িতের লড়াই হতে, ভয় বা প্রলোভনে কখনো বিচ্যুত না হই। যারা আদালতের নির্দেশ ছাড়া, ওয়ারেন্ট ছাড়া আমাকে তাদের অন্ধকার অফিসে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান। ধরে নিয়ে যাবার জন্য আমার কর্মস্থলে আর বাসায় খোঁজ করতে আসেন। যারা হয়তো আমাকে গুম করে ফেলতে চান, নির্যাতনের ভয়াবহতায় রক্তাক্ত করতে চান, আপমানিত করে, অপদস্ত করে আমাকে মানুষের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করতে চান, তারা মনে রাখবেন আমারও সন্তান আছে! আমি আমার পরমপূজণীয় পিতা-মাতার কাছে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর যে শিক্ষা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি, আমার কিশোর সন্তানও সেভাবেই বেড়ে উঠছে।
জেনে রাখুন, আজ বাংলাদেশের নব্বই ভাগ কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা আপনাদের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি, সংস্কৃতি ও মতাদর্শের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। এই সবকিছুই ঘটেছে আপনাদের ভুল ও অন্ধ পথযাত্রার ফলে। যে ক্ষমতা জনগনের কাছে থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতা জনতার কাছে আবার ফিরে আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
মনে রাখবেন, ভবিষ্যতের বাংলাদেশে আমাদের সন্তানরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, তাদের সামনে আপনাদের সন্তানরা গ্লানির ভারে নতমস্তকে ন্যুব্জ হয়ে থাকবে! জনক-জননী হিসেবে এ কোন পৃথিবী রেখে যাচ্ছেন, আপন সন্তানদের জন্য?
আমাকে কেন ডি.জি.এফ.আই খুঁজবে? ডি.জি.এফ.আই-এর কাজ কি? যে ভদ্রলোক সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে ফোন করে তাদের অফিসে যাবার জন্য আমাকে ডেকেছেন, তার কথপোকথনের অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে। অভিন্ন মেজরের পরিচয়েই আমার বাসায় এবং কাজের যায়গায় আমার খোজে যাওয়া হয়েছিল।
আমি যা করেছি এবং করছি, তার সব কিছুই বাংলাদেশের সংবিধানে দেয়া মৌলিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারের বলে বলিয়ান হয়েই করছি। আর আপনারা যা করছেন, তার সবকিছু সম্পন্ন হচ্ছে, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত সংবিধানকে লংঘন করে!
আপনারা পদে পদে সংবিধান লংঘন করেছেন, নাগরিক ও মানবিক অধিকারকে লংঘন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মহান মুক্তিযুদ্ধের তিন নীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর ইনসাফের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। জনগণের কাছে একদিন এর জবাব দিতে হবে, ইনশাআল্লাহ। সে দিন সুদূরপরাহত নয়।
আপনার মতামত লিখুন :