এসএম আরিফুল কাদের: মানুষ বিভিন্নভাবে তাদের নাম ব্যবহার করে। কেউ তার নামের শুরুতে বংশের নাম ব্যবহার করে থাকেন। আবার কেউ তার নামের শেষে বাবার নাম ব্যবহার করে থাকেন। বিয়ের পর অনেক নারীর নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করে স্বামীর নাম বা পদবি। কেউ সেটা করেন স্বেচ্ছায়, কেউ-বা অনিচ্ছায়। বিশ্বজুড়ে ১৯২০ সাল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। ২০০৯ সালে একদল গবেষকের জরিপে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৭১ শতাংশই মনে করেন বিয়ের পর নারীর পদবি বদল করা উচিত। ওই ৭১ শতাংশের আবার অর্ধেক মনে করেন, এ জন্য আইনি বাধ্যবাধকতাও থাকা উচিত। (প্রথম আলো ৩১ আগস্ট ২০১৩)
কিন্তু কথা হচ্ছে বিবাহের পর নারী তার নামের শেষে স্বামীর নাম ব্যবহার করতে ইসলাম কী বলে? ইসলামি শরী‘আর দৃষ্টিতে এটা ঠিক নয়। মুসলিম নারীদের উচিত বিয়ের পরও তার পৈতৃক নাম ঠিক রাখা। কারণ এটা তার একেবারেই নিজস্ব। বাবা কর্তৃক প্রদত্ত নাম ঠিক রাখার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলাও আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে কারীমে আল্লাহ বলছেন : ‘তোমরা তাদেরকে তাদের বাবার নামে ডাকো।’ (সূরা আহজাব : ৫) হাদিসে পিতার নামের পরিবর্তে অন্য নামে ডাকা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা) এর লা’নত বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসূল (স) বলেছেন: ‘যে কেউ নিজেকে বাবার নাম ছাড়া অন্য নামে ডাকবে তার ওপর আল্লাহ, ফিরিশতা ও সমগ্র মানুষের লা‘নত বর্ষিত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে মহানবী (সা) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজেকে নিজের পিতা ছাড়া অন্যের সাথে সংযুক্ত করে, তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ) আবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, যে কেউ নিজের বাবা ব্যতীত অন্যের পরিচয়ে পরিচয় দেয় সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। যদিও জান্নাতের সুঘ্রাণ সত্তর বছর হাঁটার রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। (মুসনাদে আহমাদ)
হাশরের মাঠে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পিতার নামে ডাকা হবে বিধায় প্রত্যেকেই সুন্দর নামের পাশাপাশি উপাধি স্বরুপ পিতার নামে রাখা উচিত। হাদিসের ভাষায়, হযরত আবু দারদা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদের ডাকা হবে তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতার নামে। অতএব তোমাদের নামগুলো সুন্দর করে রাখো। (আবু দাউদ, বায়হাকি ও মুসনাদে আহমদ)
স্বামী বা স্ত্রী যদি স্ত্রীর নামের সাথে উপাধি রাখতে চায় তাহলে স্ত্রী তার পিতার বংশীয় উপাধি ব্যতীত স্বামীর বংশীয় উপাধিই মানে নিজের স্থান জাহান্নাম করে নেওয়া। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিজেকে এমন বংশের সাথে স¤পৃক্তের দাবী করল, যে বংশের সাথে তার কোনো বংশগত সম্পর্ক নেই। সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। (সহিহ বোখারি)
আপনার মতামত লিখুন :