শিরোনাম
◈ আবদুল্লাহ জাহাজে খাবার থাকলেও সংকট বিশুদ্ধ পানির ◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩৯ রাত
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০২:৩৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দক্ষ জনশক্তি গঠনে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ প্রয়োজন

জালাল উদ্দিন ওমর (বণিক বার্তা) : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার মাধ্যমেই একটি জাতি শিক্ষিত হয়, সভ্য হয় এবং উন্নত জীবন গঠনের পথে এগিয়ে যায়। আজকের দুনিয়ায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার, তার সবই শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের জন্য আজকের পৃথিবীতে মানুষের যা অর্জন, তার সবই শিক্ষারই দান। এসব অর্জনের কারিগরদের কেউ কেউ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও নিজের প্রচেষ্টায় তারা জ্ঞানচর্চা করেছেন, জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং শিক্ষিত হয়েছেন। আর শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত সেই জ্ঞান ব্যবহার করেই তারা আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে উন্নত হয়েছে মানুষের জীবন। জীবনকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য জ্ঞানই পালন করে চলেছে প্রধান ভূমিকা। সুতরাং এ পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সমাধান করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে হবে। তবে তার জন্য পরীক্ষায় নকল বন্ধ করতে হবে এবং একই সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। কারণ পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস উন্নত জাতি গঠনে অন্তরায়।

জীবন মানেই পরীক্ষা, পরীক্ষার মাধ্যমেই পরিশোধিত হয় মানুষের জীবন। পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষাজীবনের অপরিহার্য উপাদান ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং তাতে কৃতকার্য হওয়ার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয় এবং এভাবেই সে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রাইমারি লেভেলে ভর্তির মাধ্যমেই ছেলেমেয়েরা তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করে। তখন থেকেই পরীক্ষা হয়ে ওঠে তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি  ক্লাসে বছরে কমপক্ষে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষায় পাস করলেই তারা পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়। এভাবেই ছেলেমেয়েরা একদিন প্রাইমারি শিক্ষা সম্পন্ন করে এবং হাইস্কুলে ভর্তি হয়। সময়ের পরিক্রমায় তারা নিয়মিতভাবে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। এরপর কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে আবারো পরীক্ষা এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছেলেমেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে। এরপর শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ এবং এখানেও পরীক্ষা। মেডিকেলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা এবং  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যও পরীক্ষা। একজন শিক্ষার্থীকে তার ছাত্রজীবনে অনেক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয় এবং এসবে উত্তীর্ণ হয়েই সে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা। তারপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষা। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির জন্য আবার নিয়োগ পরীক্ষা। এসব পরীক্ষায় যদি নকলের কোনো সুযোগ না থাকে অর্থাৎ নকল করে পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লেখার সুযোগ না থাকে তাহলে কিন্তু একজন ছাত্রকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পড়ালেখা করতেই হবে। একজন ছাত্র যত ভালো রেজাল্ট করতে চায়, তাকে তত বেশি পড়তে হবে। সুতরাং পড়াশোনা  ছাড়া যখন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অন্য কোনো উপায় থাকবে না, তখন একজন ছাত্র নিজ উদ্যোগে পড়াশোনা করবে। পড়াশোনা করলেই তার জ্ঞান বাড়বে, চিন্তাশক্তি বাড়বে, যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়বে। আর দক্ষতা বাড়া মানেই সে অধিকতর যোগ্য এবং অপেক্ষাকৃত বড় দায়িত্ব পালনের যোগ্য। এ ধরনের যোগ্য ব্যক্তির পক্ষেই দেশ ও জাতির উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব। তাদের পক্ষেই হাজারো সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে নকল করে যদি পরীক্ষায় পাস করার সুযোগ থাকে তাহলে কিন্তু ছাত্ররা পড়াশোনা করবে না। আর পড়াশোনা না করলে তার জ্ঞান অর্জন হবে না। ফলে তার মধ্যে যোগ্যতা ও দক্ষতার সৃষ্টি হবে না। সে সার্টিফিকেট অর্জন করবে ঠিকই কিন্তু তার মধ্যে বড় কোনো দায়িত্ব পালনের মতো যোগ্যতা সৃষ্টি হবে না। ফলে তার পক্ষে সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের অদক্ষ ব্যক্তিদের পক্ষে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, জ্ঞানহীন মানুষগুলো দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠাও সম্ভব নয়। কারণ কোনো কিছু পরিপালন করার পূর্বশর্ত হচ্ছে জানা। আর জানার পূর্বশর্ত হচ্ছে পড়া। যেহেতু নকল করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্ররা পড়ে না, সুতরাং তাদের জানার পরিধি কম এবং স্বাভাবিকভাবেই তাদের আইনকানুন মানার প্রবণতাও কম। অতএব, জাতি হিসেবে যদি আমরা উন্নত হতে চাই, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে চাই এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চাই তাহলে আমাদের একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হবে। তার জন্য নকলমুক্ত পরীক্ষা অপরিহার্য।

পরীক্ষায় নকলের মতো আরেক ক্ষতিকর বিষয় প্রশ্নপত্র ফাঁস । প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে যোগ্য শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে এটি পেয়ে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে উত্তীর্ণ হবে এবং উচ্চশিক্ষায় চান্স পাবে। এভাবে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যাবে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়বে। ফলে দেশে একদিকে সৃষ্টি হবে অদক্ষ জনশক্তি, যারা দেশের উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে না। অন্যদিকে অধিকতর যোগ্য শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে এবং তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে না। বর্তমানে আমাদের দেশে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট লেবেলে বিভিন্ন সমাপনী পরীক্ষা যেমন— প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাবজেক্টে অনার্সে ভর্তি হয়। এভাবেই কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর কর্মজীবন অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। কারণ যে ছেলে বা মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, সে কিন্তু আগামীতে চিকিৎসক হবে এবং চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের সেবা করবে। একইভাবে যে ছেলে বা মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়েছে, সে কিন্তু আগামীতে প্রকৌশলী হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এখন ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে একজন  অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী যদি মেডিকেলে চান্স পায়, তাহলে কিন্তু দেশ অধিকতর যোগ্য একজন চিকিৎসক থেকে বঞ্চিত হলো। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত যোগ্য একজন শিক্ষার্থী মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় সে চিকিৎসক হতে পারল না। একই কথা প্রকৌশলবিদ্যাসহ সব ভর্তি পরীক্ষার বেলায় প্রয়োজ্য। এভাবে নকল ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে না এবং জাতি তার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। দক্ষ চিকিৎসকের অভাবে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়। ফলে একদিকে এসব মানুষের সময়, শ্রম ও অর্থ যেমন ব্যয় হচ্ছে, অন্যদিকে সেই অর্থের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদানকারী দেশটি উন্নত হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে আমাদের দেশের প্রকৌশল খাতের কথা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে, এ খাতে এখন প্রচুর বিদেশী প্রকৌশলী কাজ করছেন। তারা পারিশ্রমিক বাবদ প্রতি বছর প্রচুর টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এ দেশে যদি আজ প্রচুর দক্ষ প্রকৌশলী থাকত তাহলে তারা এসব কাজ করতে পারতেন। ফলে এ দেশে বেকারত্ব কমত এবং অর্থও সেভ হতো। আর এভাবে দেশ আরো এগিয়ে যেত এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো। একই কথা সব সাবজেক্টের শিক্ষার্থীদের বেলায় প্রযোজ্য। দেশের উন্নয়নে দরকার দক্ষ রাজনীতিবিদ, দক্ষ প্রশাসক, দক্ষ চিকিৎসক, দক্ষ প্রকৌশলী,  দক্ষ পদার্থবিদ, দক্ষ রসায়নবিদ, দক্ষ গণিতবিদ, দক্ষ পরিবেশবিদ, দক্ষ অর্থনীতিবিদ, দক্ষ হিসাববিদ, দক্ষ পরিসংখ্যানবিদ, দক্ষ প্রাণিসম্পদবিদ, দক্ষ সাংবাদিক, দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদসহ সব সেক্টরে দক্ষ কর্মকর্তা। পড়াশোনা ও নিয়মিত অধ্যয়ন ছাড়া কিন্তু দক্ষতা অর্জন করা যায় না। পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস দক্ষ জনশক্তি গঠনে প্রধান প্রতিবন্ধক এবং দেশের জন্য ক্ষতিকরও বটে। একজন অদক্ষ ড্রাইভার শুধু যে দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে ব্যর্থ হন তা নয়, বরং তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের জীবনও ধ্বংস করেন এবং একই সঙ্গে গাড়িটাও নষ্ট করেন। একইভাবে একজন অদক্ষ ব্যক্তি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে শুধু যে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হন তা নয়, বরং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেন। তিনি সম্পদ না হয়ে তখন বোঝায় পরিণত হন। এ অবস্থায় দক্ষ জনশক্তি গড়ার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন গতিশীল করতে হলে সব স্তরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য পরীক্ষায় নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁস  চিরতরে বন্ধ করতে হবে।

লেখক:  প্রকৌশলী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়