শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১০:৫১ দুপুর
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ১০:৫১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে মারা যায় ১৭ হাজার শিশু

ডেস্ক রিপোট : প্রতিবছর দেশে পানিতে ডুবে মারা যায় প্রায় ১৭ হাজার শিশু। কিন্তু পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু নিয়ে দেশে খুব একটা আলোচনা-সমালোচনা নেই। গত এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুসংক্রান্ত এক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। মৃত্যুর এ হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পানিতে ডোবা প্রতিরোধে একটি জাতীয় কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমোদন শেষে শিগগিরই তা জারি করা হবে।’

পানিতে ডোবা ও অসুস্থতার পরিস্থিতি নির্ণয়ের জন্য সরকার হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি নামে সার্ভে পরিচালনা করে। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এই সার্ভের কারিগরি সহায়তা দেয়। ওই সার্ভে থেকে জানা যায়, প্রতিবছর প্রায় ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। এর চার গুণ অর্থাৎ প্রায় ৬৮ হাজার শিশু পানিতে ডুবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পণ্য ও যাত্রী বহনে নদীপথ অন্যতম। বাংলাদেশে নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার। গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ নৌকা ব্যবহার করে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ হাজার নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নৌযান চলাচল করছে। এ অবস্থায় সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবা নির্মূল করতে চায়। এই বয়সী শিশুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু মারা যায় পানি ধরে রাখার পাত্রের পানিতে ডুবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ড্রনিং প্রিভেনটিং এ লিডার কিলার’ প্রতিবেদনে পানিতে ডুবা প্রতিরোধে ১০টি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিটি দেশকে তার উপযোগী ‘জাতীয় পানি নিরাপত্তা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কাসহ আরো কয়েকটি দেশ এ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন দেশে পানিতে ডুবার কারণ ভিন্ন ভিন্ন। পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধে বাংলাদেশেরও উপযোগী কৌশল তৈরি করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এই খসড়া কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গণস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকায় অতীতে এ বিষয়ে জাতীয় কর্মকৌশল তৈরি করা যায়নি।

বন্যা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে পানিতে ডুবার ঝুঁকি বাড়ছে। যেসব জনগোষ্ঠী বন্যাপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে সেখানে বন্যা সতর্কীকরণ ও নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর ব্যবস্থা দুর্বল থাকলে পানিতে ডুবার ঝুঁকি বাড়ে। কক্সবাজার ও কুয়াকাটা দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান। পর্যটকরা এসব স্থানের সঙ্গে পরিচিত না হওয়ায় পানিতে ডুবার ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রসৈকতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে লাইফগার্ডের ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছর সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসে অনেক মানুষ সাগরে ডুবে প্রাণ হারায়।

মানুষ এবং জলাধারের মধ্যে বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা না থাকায়, শিশুদের যথাযথ তত্ত্বাবধানের অভাব, সাঁতার না জানা, অনিরাপদ বা উন্মুক্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, নৌযানে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন এবং ত্রুটিপূর্ণ নৌযান ব্যবহার পানিতে ডুবে মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

পানিতে ডুবাসহ অন্যান্য ইনজুরির প্রতিরোধ ব্যবস্থা শনাক্ত করার জন্য প্রিভেনশন অব চাইল্ড ইনজুরিস থ্রো সোস্যাল ইন্টারভেনশন অ্যান্ড এডুকেশন নামে কমিউনিটিভিত্তিক একটি গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাদের গবেষণায় শিশুদের পানিতে ডুবার প্রতিরোধক হিসেবে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—৬ থেকে ১৮ মাসের শিশুর জন্য প্লে-পেন ব্যবহার করা। জলাধারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধক স্থাপন বিশেষ করে গভীর নলকূপ ঢেকে রাখা বা জলাধারে বেড়া দেওয়া বা প্লে-পেন ব্যবহার করা। প্লে-পেন হচ্ছে চতুর্দিকে বদ্ধ একটি স্থান যেখানে ৬ থেকে ১৮ মাসের শিশুদের বিনা তত্ত্বাবধানে নিরাপদে রাখা যায়। স্কুলগামী শিশুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাঁতার শেখানো। সাধারণ মানুষকে ‘বুকে চাপ মুখে শ্বাস’ দেওয়াসহ প্রাথমিক চিকিৎসায় দক্ষ করে তোলা।

১০ বছরের কম বয়সের শিশুদের জন্য পানিতে ডুবার ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝানো এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে মা-বাবাকে সচেতন করা, বন্ধুদের সঙ্গে পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়াতে সচেতন করা, পুকুর, নদী, জলাশয় এবং সমুদ্রের পানিতে ডুবার ঝুঁকি এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করা, বিশেষ করে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস জাতীয় দুর্যোগের সময় এসব সতর্কতা বাড়াতে হবে। নৌকা, জাহাজ এবং ফেরি চলাচল বিষয়ক নিরাপদ আইন নিশ্চিত করা, বন্যা এবং অন্যান্য পানি সম্পর্কিত দুর্যোগের ঝুঁকি প্রশমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানিতে ডুবা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মকৌশলের লক্ষ্য হচ্ছে—জনগণকে পানিতে ডুবা মৃত্যু থেকে মুক্ত করা। ২০২৫ সালের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমানো এ কৌশলের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র : কালের কন্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়