শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:০০ সকাল
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবহন নৈরাজ্য, নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাব

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে নেই পরিবহন সেক্টর! এখন রাজনৈতিক নেতাদের কব্জায় দেশের গোটা পরিবহন খাত। অর্থাৎ পরিবহনে প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। এ খাতে চলমান নৈরাজ্যের নেপথ্যে অনেকাংশেই রাজনৈতিক প্রভাবকেই দায়ী করা হয়। সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় বেশিরভাগ পরিবহন। খবর এমনও আছে পুলিশ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিকরা পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার ৯৮ ভাগ পরিবহন এখন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও আত্মীয়দের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া আন্তঃজেলা রুটেও এ চিত্র ৬০ ভাগের বেশি। এই প্রেক্ষাপটে বাস সড়ক দুর্ঘটনা বা ট্রাফিক আইন না মানার ক্ষেত্রে দন্ড দেয়া হলে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন হলো সড়ক প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে চালকের দ- নিয়ে নানা বিতর্ক চললেও যা আছে তা কতটুকু কার্যকর হবে এ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া খসড়া প্রস্তাবে অপরাধ জামিনযোগ্য রাখার বিষয়টি নিয়েও বিস্তর সমালোচনা রয়েছে। তবে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিকে অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

প্রায় সাত বছর ধরেই সড়ক পরিবহন আইনের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলেরর সঙ্গে আলোচনা করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রায় সব মহল থেকেই সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশে সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত কার্যকর আছে। কিন্তু পরিবহন মালিক সমিতির অব্যাহত চাপের মুখে সরকার অনেকটাই সাজা কমাতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত চালকের সাজা তিন বছরের স্থলে ৫ বছর করা হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই উড়াল সেতুর ঢালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও কয়েকজন আহত হন। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম। দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম ৩০ বছর ধরে ঢাকা-রাজশাহী পথে দূরপাল্লার বাস চালাচ্ছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি বলে আসছেন, বাসটির চালক অদক্ষ ও বেপরোয়া ছিলেন। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। প্রায় সপ্তাহব্যাপী রাজপথে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। গোটা সড়ক যোগাযোগ কার্যত অচল হয়ে যায়। এমন বাস্তবতায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে সড়ক নিরাপত্তা আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা আপত্তি রয়েছে। বলা হচ্ছে মালিক ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে আইনে। সড়কও যাত্রী নিরাপত্তায় নিয়োজিত নৌ সড়ক রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি ও যাত্রী কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনের নানা দিন নিয়ে ইতোমধ্যে আপত্তি তোলা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বাস চাপা দেয়ার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ঘটনায় যুক্ত থাকা তিনটি বাস পরিদর্শন করে ৫ আগস্ট পুলিশের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয় বিআরটিএ। বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক সামসুদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদন তৈরি করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালালে দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ১০-১২ জন আহত হন। শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় টাটা কোম্পানির তৈরি ২০১৬ মডেলের (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৯২৯৭) বাসটি। চাপা দেয়া বাসটির ইঞ্জিন, স্টিয়ারিং হুইল, ব্রেক, সাসপেনসন ও চাকা ভাল রয়েছে। বাসের উইন্ডশিল্ড (সামনের কাচ), কিছু লাইট ও সামনের বাঁ পাশের অংশ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাসটিতে এমন কোন যান্ত্রিক গোলযোগ বা ত্রুটি পায়নি তদন্ত কমিটি, যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চালকের দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া বাসটির রুট পারমিট ছিল না।

পুলিশ, বিআরটিএ কর্মকর্তা, মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নসহ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে নিয়োজিত নেতৃবৃন্দ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক আধিপত্যের কারণেই পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না। মানা হচ্ছে না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোন নিয়মনীতি। ফলে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। মালিকদের প্রভাবে চালকরাও বেপরোয়া। সেইসঙ্গে আইনের দুর্বলতায় দুর্বল শাস্তির বিষয়তো রয়েছেই। অনেকের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের তৎপরতায় মিলছে যানবাহনের সহজ রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিট। বিভিন্ন রুটে আধিপত্য বিস্তারের কাজ করছেন তারাই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রুট নির্ধারণ, সিটিং সার্ভিসে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানিরও অন্যতম কারণ পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। সরকারী দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার সম্মিলিত তৎপরতার কাছে জিম্মি গণপরিবহন ব্যবস্থা। রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নও গঠন করা হচ্ছে। মালিক সমিতির অলিখিত নির্দেশে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএকেও হিসেব করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণে কোন কোন সময় মালিক সমিতির হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিলেছে।
অভিযোগ আছে, প্রতি জেলায় রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি ও (আরটিসি) গঠন করা হয় দলীয় বিবেচনায়। তাছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় ও অর্থের বিনিময়ে বিআরটিসি রুট নির্ধারণ করে থাকে। তাদের সদিচ্ছা ছাড়া ব্যবসা সফল রুটে গাড়ি চালানোর অনুমতি মেলা ভার। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় রাজীবের মৃত্যুর জন্য দায়ী স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও পাশে দাঁড়ায়নি। চালক গ্রেফতার হলেও সবকিছু মিটমাটের চেষ্টা চলছে প্রভাবশালী কোম্পানি মালিকদের চেষ্টায়। বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোজিনার বাস চালককেও আটক করেছিল পুলিশ। সেও এখন মুক্ত।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, অনেক মালিকের রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও পরিবহন সেক্টরে রাজনৈতিক প্রভাব খুব একটা নেই। আমি মনে করি নিয়মানুযায়ী পুরো সেক্টর চলছে। কেউ যদি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে এজন্য পরিবহন ব্যবসায়ীরা দায়ী নন। তিনি বলেন, অপরাধ যেই করুন তাকে শাস্তি পেতে হবে। এখানে প্রভাব বিস্তারের কিছু নেই। আইন চলবে তার নিজস্ব গতিতে। আমরা সড়ক পরিবহন প্রস্তাবিক আইনকে স্বাগত জানাই।

তবে পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন প্রবীণ শ্রমিক নেতা আলী রেজা। তিনি বলছেন, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের কারণে পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা চলছে। সব রুটের চিত্র একই। তিনি বলেন, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোতে প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা করছে মালিক সমিতি। মালিক সমিতির সুপারিশ ছাড়া বিআরটিএ গাড়ির ব্লু বুক দেয়া, গাড়ি ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে অনেক কিছুই করতে পারে না। এজন্য অলিখিত নির্দেশনা আছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও চালকদের কিছু হয় না বলে অভিযোগ করেন তিনি। মালিক সমিতি বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনার পর পুলিশকে ম্যানেজ করে আদালতে দুর্বল চার্জশীট দেয়। ফলে অপরাধীরা ছাড়া পায়। জামিনে বের হয়। কিন্তু মালিকরা সবকিছু থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা। সেই আলোকেই সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে নানা মহল থেকে আপত্তি থাকলেও সংসদে পরিবর্তনের সুযোগ আছে।
বাণিজ্যে বিএনপি ॥ পরিবহন বাণিজ্যে মাঠে আছে বিএনপিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি মির্জা আব্বাসের মালিকানা ছিল ‘ঢাকা পরিবহন’। সেই পরিবহনের ব্যবসা এখন ভাল নয়। বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি জি এম সিরাজ ‘এসআর পরিবহনের’ মালিক। ‘হানিফ পরিবহনের’ মালিক সাভারের বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন ও তার ভাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। বিএনপির আরেক সাবেক এমপি এস এ খালেকের মালিকানাধীন পরিবহন খালেক এন্টারপ্রাইজ। বিএনপির সূত্রাপুর থানার নেতা আরিফের রয়েছে প্রিন্স পরিবহন। বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাসও পরিবহন বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত।

পরিবহন বাণিজ্যে জাতীয় পার্টি ॥ জাতীয় পার্টির পরিবহন ব্যবসায় পিছিয়ে নেই। জাতীয় পার্টির রংপুরের নেতা ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা সঞ্চিতা পরিবহনের মালিক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির (মালিকদের সংগঠন) সভাপতিও তিনি। জাতীয় পার্টির অপর নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এসএ পরিবহনের মালিক। ঢাকা-ফেনী পথে চলাচলকারী স্টারলাইন পরিবহনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে ফেনীর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি নৌপরিবহনেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন।
ঢাকার ৯৮ ভাগ পরিবহন আওয়ামী লীগ নেতাদের ॥ রাজধানীর প্রায় ৯৮ ভাগ পরিবহন ব্যবসা এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। আবার পুরনো পরিবহন ব্যবসায়ীদের অনেকেই নিজের পরিচয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক পদ-পদবির তকমা লাগান। মূলত প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যেই এই রাজনৈতিক তকমা। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে বর্তমানে পরিবহন কোম্পানির সংখ্যা ২৪৬। প্রায় সাত হাজার বাস নগরীসহ আশপাশের এলাকায় চলাচল করে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ তার পরিবারের সদস্যরা পরিবহন ব্যবসায় জড়িত। মন্ত্রীর ছোট ভাই আজিজুর রহমানে খানের পরিচালনায় চলছে ‘কনক’ পরিবহন। তারা সাত ভাইয়ের তিনজনসহ মন্ত্রীর শ্যালকও পরিবহন বাণিজ্যে যোগ দিয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথও ‘বিহঙ্গ’ পরিবহনের মালিক। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি পরিবহন বাণিজ্যে যোগ দেন। নারায়াণগঞ্জের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমানের পরিবহনের নাম ‘জেড এন কর্পোরেশন’ ও বন্ধন পরিবহন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে এসি এই পরিবহনটি চলাচল করছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এনা পরিবহনের কর্ণধার।
ঢাকা উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান ‘চলন’ পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের পরিবহন কোম্পানির নাম ‘মোহনা’ পরিবহন। ল্যাম্পস পরিবহনও আওয়ামী লীগের এক নেতার। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ‘দেশ বাংলা’ পরিবহনের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি ঢাকার কাউন্সিলরও। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা একেএম ইসমাইল হকের ‘গ্লোরী’ পরিবহন।

সাবেক সরকারদলীয় সাংসদ আশরাফুন নেসা মোশারফের ‘স্বপ্ন সার্ভিসেস’। আওয়ামী মোটরসাইকেল লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালু শেখের রয়েছে তিনটি বাস কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওয়েলকাম’, ‘মৌমিতা’ ও ‘স্বজন’ পরিবহন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হকের ভিআইপি ক্ল্যাসিক। প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন সাবেক এমপি শাহিদা তারেক দীপ্তি। ‘জাবালে নূর’ পরিবহনের কর্ণধার হলেন মন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালক। ‘ক্যান্টনমেন্ট পরিবহন’ নিয়ন্ত্রণ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার বোন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বাস কোম্পানির নাম ‘মেঘালয়’। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাকুরা পরিবহনের মালিক চুন্নু মিয়া, গ্রীন সেবা, দোলা ও হিমাচল পরিবহন কোম্পানি জামায়াত সমর্থিত মালিকানার, সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে চলা আল মোবারকার মালিক আরিফ ও রাশেদ। তাদের একজন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও অপরজন বিএনপি সমর্থিত। ‘ডিপজল’ পরিবহনের মালিক মনোয়ার হোসেন ডিপজল বর্তমানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত হলেও এক সময় তিনি বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর ছিলেন। ইকনো পরিবহনের মালিক বিজন বর্ধন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ আওয়ামী লীগ সমর্থিত। অনাবিল, ছালছাবিল পরিবহনের মালিক জামায়াত সমর্থিত। রংধনু পরিবহন জামায়াত সমর্থিত। সোহাগ পরিবহনের মালিক ফারুক তালুকদার সোহেল সরকার সমর্থিত পরিবহন মালিক সমিতির নেতা। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ করেই পথচলে গ্রীন লাইন পরিবহন।

জানতে চাইলে হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা, রুট পারমিটসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাস মালিকরা রাজনৈতিক তদবির করেন এটা অনেক ক্ষেত্রেই সত্য। দিন দিন এর প্রভাব বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণপরিবহনগুলো আইনকানুন কিছুই তোয়াক্কা করে না। আর এখানে মালিকদের এমন একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে যার কোন না কোন রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, পরিবহন মালিকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে এ সেক্টরে অনিয়ম বাড়ছে। রাজনৈতিক নেতারা পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় এ খাতে নিয়মনীতি কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই একটি কোম্পানির আওতায় বাস পরিচালনা করার তাগিদ দিয়েছেন এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : জনকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়