শিরোনাম
◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৩১ সকাল
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০১৮, ০৪:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শহিদুল আলম: সৃষ্টিসুখে যুগপৎ যার মমত্ব!

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে

ইংরেজি সাহিত্যে সৃষ্টিশীল কর্মের বহিঃপ্রকাশে দুটি বিশেষণ ব্যবহৃত হয়, যেমনÑ ‘ইনকুইসিট’ ও ‘এক্সকুইসিট’। অর্থগত দিক থেকে প্রথমটি অনুসন্ধিৎসু এবং দ্বিতীয়টি অভাবনীয় সুন্দর ও সুকুমার বা কমনীয়। বোধ করি, এ দুটি বিশেষণ মমত্বশীল অবয়বে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী ডক্টর শহিদুল আলমের সৃষ্টিশীল কর্মের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে পরিষ্ফূট। সেজন্য তিনি এতটা খ্যাতির অধিকারী এবং একজন পুরস্কৃত ব্যক্তিত্ব। এটা বোঝা যেত না, যদি না তিনি ‘মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত কণ্ঠে’ আল জাজিরাকে বাংলাদেশের সরকারি ভাষ্যানুযায়ী ‘প্রোভোকেটিভ কমেন্টস’ অর্থাৎ ‘উস্কে দেয়া মন্তব্য’ করে কারা অন্তরীণ না হতেন।

সেটাই এখন বিশ্বের মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়েছে; বিবিসি থেকে ভয়েস অব আমেরিকা; সিএনএন, গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্ট অন্যতম। সোচ্চার হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যৌথভাবে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে) এবং সাউথ এশিয়া মিডিয়া সলিডারিটি নেটওয়ার্ক (এসএএমএসএন) ও দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর সাংবাদিক সংস্থাগুলো চিঠি দিয়েছে। এতে ‘আইএফজে’ সুস্পষ্টভাবে বলেছে যে, তারা ফটোজার্নালিস্ট শহিদুল আলমের গ্রেফতার, ডিটেনশন ও নির্যাতন অভিযোগের পাশাপাশি বাংলাদেশে অপরাপর সাংবাদিকের উপর চিহ্নিত আক্রমণের নিন্দা জানাচ্ছে। যে ঘটনার কারণে তিনি গ্রেফতার এবং তার উপর অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে দৃশ্যমান যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠকে নিস্তব্ধ করতে চায়। সাংবাদিকদের উপর এই আক্রমণ সংবাদপত্রের উপরই হস্তক্ষেপ। তাই আইএফজে অবিলম্বে তার মুক্তিসহ সকল সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ বন্ধের আহবান জানিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘নিজের বাড়িতে আমাকে লুকিয়ে রেখে প্রাণে বাঁচিয়েছেন শহিদুল আলম। ... আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, শহিদুল আলমের মতো সভ্য, শিক্ষিত, নির্ভীক মুক্তচিন্তককে ভিন্নমত প্রকাশের জন্য আজ যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, এ তাঁর নয়, এ গোটা দেশের লজ্জা। আজ শহিদুল আলমের দুঃসময় নয়, আজ বাংলাদেশের দুঃসময়’। সেই দুঃসময়ের তীব্র আঁচ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা বিশ্বের অন্যতম প্রতিবাদী হার্ভাডের নোবেলজয়ী ভাষাবিদ, সাহিত্যিক ও অধ্যাপক নওম চমস্কি, ভারতের প্রথিতযশা মানবাধিকার কর্মী ও বুকার সাহিত্য পুরস্কারজয়ী অরুন্ধতী রায়, কানাডীয় লেখিকা নওমি ক্লেইন ও ভারতীয় বুদ্ধিজীবী বিজয় প্রসাদসহ মোট ২৫ লেখক-সাংবাদিক-অ্যাকামেডিশিয়ানের যৌথ বিবৃতিতেই প্রকাশ পেয়েছে। তারা অবিলম্বে শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়েছেন।

এই বিশ্বময় সাড়া জাগানো দাবির একটাই কারণ, শহিদুল আলম একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় চিত্রগ্রাহক। তার বর্তমান বয়স ৬৩। এই বয়সে তার মতো বৈশ্বিক মর্যাদা খুব কম মানুষই পেয়েছেন। কেননা বিশ্বের সব বড় বড় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে তার তোলা ছবি ছাপা হয়েছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জৈব রসায়নে তার রয়েছে পিএইচডি। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সান্ডারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ), হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ও লেকচারার। তথাপি তার অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে ছবি মেলায়। এতে বিশ্বের সব জায়গার ছবি থাকে এবং ঢাকায় এসে অংশ নেন বিশ্বের সেরা ফটোগ্রাফাররা। ২০০০ সালে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীর থিম ছিল ‘যে যুদ্ধ আমরা ভুলে গেছি’। বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে সবচেয়ে সফল চিত্রপ্রদর্শনী। নিজে অর্জন করেছেন ‘হার্ভে হ্যারিস ট্রফি’, ‘মাদার জোন্স অ্যাওয়ার্ড’, ‘আন্দ্রে ফ্রাঙ্ক ফাউন্ডেশন ও হাওয়ার্ড চ্যাপনিক অ্যাওয়ার্ডস’, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা পদক’, চীনের ডালি ইন্টারন্যাশনাল চিত্রপ্রদর্শনীতে আজীবন সম্মাননা এবং এ বছর পান ‘লুসি ফাউন্ডেশন হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড’। এতো কিছুর পরও সম্ভবত তার পদকজয়ী ফটোএজেন্সি ‘দৃক’ নিজের রসায়ন অভিজ্ঞান থেকেই উদ্ভূত; কেননা শব্দটি যৌগিক, ইংরেজিতে ‘ইন কম্পাউন্ডস’। তার প্রতিষ্ঠিত ‘পাঠশালা’ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমাদৃত ফটোগ্রাফি স্কুল। এখানে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থী ও অতিথি শিক্ষকরা আসেন। এ দুটো প্রতিষ্ঠানই নিজের পৈতৃক সম্পত্তিতে গড়েছেন, তাতে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অগণিত শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইন্সটিটিউট ও সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফটোগ্রাফি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার লেখা বই ‘মাই জার্নি অ্যাজ অ্যা উইটনেস’ সম্পর্কে লাইফ ম্যাগাজিনের সাবেক পিকচার এডিটর জন মরিস লিখেছেন, কোনো চিত্রগ্রাহকের লেখা সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই সেটি।

তবু নিজের কাছে তার কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের ‘ইন কম্পাউন্ডস’ বা ‘দৃক’ মমত্বশীল অবয়বে পরিস্ফুট। সেটা সংযোজিত ছবিটি বলে দেয়; সৃষ্টিশীল একজন মানুষ হয়ে কতটা মমতায় দৃশ্যাদৃশ্যে পিঠে হাত রেখে বুকে জড়িয়েছেন একটি শিশুকে, যে দৃশ্যে আরেকটি অপলক শিশুও সেখানে আক্রান্ত। নির্দি¦ধায় বলতে হয়, এতো অনুসন্ধিৎসু এবং অভাবনীয় সুন্দর ও সুকুমার চিত্রশিল্পীর কোনো ছবি নেহায়েত কমই দেখেছি!

ই-মেইল: [email protected]

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়